somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহানায়ক উত্তম কুমার

২৪ শে জুলাই, ২০১১ দুপুর ২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


তাঁর ভুবনভোলানো হাসি, অকৃত্রিম রোমান্টিক চোখের দৃষ্টি আর অতুলনীয় অভিনয়ের গুণে প্রজন্মের পর প্রজন্ম পেরিয়েও বাঙ্গালি দর্শকদের হৃদয়ের মণিকোঠায় তিনি মহানায়ক। ১৯৪৮ সালে 'দৃষ্টিদান' দিয়ে শুরু আর ১৯৮০ সালে এসে 'ওগো বধূ সুন্দরী' ছবিতে অভিনয় করার সময় জীবনাবসান। মাত্র ৫৪ বছরের ক্ষণজন্মা কিংবদন্তী অভিনেতা উত্তম কুমার চলচ্চিত্র শিল্পকে দিয়েছেন ঝাড়া ৩২ বছর। তবুও অতৃপ্তি মেটে না। মিটবে কী করে? উত্তম কুমারের জন্ম তো বারবার হয় না, হবেও না কোনোদিন। তার চলে যাওয়া ছিল বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পের আলোকবর্তিকার মৃত্যু। তিন তিনবার ভারতের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এ অভিনেতা সম্পর্কে যতই বলা হোক না কেন তা কম হবে।

উত্তম কুমার ১৯২৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর কলকাতার ৫১ নং আজিরী টোলা স্ট্রিটে জন্মগ্রহণ করেন। দাদু আদর করে তাকে ডাকতেন উত্তম। তবে আসল নাম ছিল অরুন কুমার চট্টোপাধ্যায়। তার বাবার নাম সাতকড়ি-চট্টোপাধ্যায়, মা চপলা দেবী। অভাব-অনটনের মধ্যে দিয়ে কাটে উত্তমের ছেলেবেলা। কিন্তু যার জন্মই হয়েছে আকাশ ছোঁয়ার জন্য দারিদ্র্য পারেনি তাকে দমিয়ে রাখতে। অভিনয় জগতে আসার পেছনে তার পরিবারের প্রভাব ছিলো গুরুত্বপূণ। সংস্কৃতিমনা উত্তমের বাপ-চাচারা পাড়া-প্রতিবেশীর সহায়তায় গড়ে তুলেছিলেন ' সুহৃদ সমাজ'। বিভিন্ন উৎসবে সুহৃদ সমাজ থেকে যাত্রাপালার আয়োজন করা হত। বাপ-চাচাদের যাত্রাপালায় অভিনয় দেখে উত্তমের অভিনয়ের খায়েশ জাগে। আর তার জের ধরেই স্কুলে থাকতেই উত্তম কুমার তার মহল্লায় নাট্যসংগঠন লুনার ক্লাব-এ জড়িয়ে পড়েন। আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘মুকুট’ নাটিকায় অভিনয় দিয়ে শুরু হয় মহানায়কের অভিনয় জীবন।



কিন্তু যার রন্ধ্রে রন্ধ্রে অভিনয় শুধু যাত্রা আর মঞ্চ দিয়ে তার মন ভরবে কী???
উত্তমের মাথায় চেপে বসলো সিনেমার ভূত। যে করেই হোক সিনেমায় অ্যাক্টিং করতে হবে। তখনকার দিনে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সাথে গান জানা অপরিহার্য ছিল। তাই তৎকালীন অনেক নামী-দামী শিল্পী যেমন-কানন দেবী, অমিতবরণ, রবীন মজুমদার, পাহাড়ী স্যান্নাল, কুন্দন লাল সায়গল সবাই গান জানতেন। উত্তম কুমার তাই গান শিখতে কণ্ঠশিল্পী ও সঙ্গীত শিক্ষক নিদান ব্যানার্জীর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।

সংসারে অভাব থাকায় ১৯৪২ সালে দ্বিতীয় শ্রেণীতে ম্যাট্রিক পাস করার পর তিনি দিনে পোর্ট কমিশনার্স অফিসের ক্যাশ ডিপার্টমেন্টে চাকরি নেন আর রাতে ভর্তি হন ডাল হৌসির গভর্নমেন্ট কমার্শিয়াল কলেজে । নানা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তিনি ১৯৪৫ সালে বি. কম. পাস করেন।

উত্তমের মাথা থেকে অভিনয়ের ভূত তখনো নামেনি। একদিন তিনি গেলেন ভারত লক্ষ্মী স্টুডিওতে। সেখানে ভোলানাথ আর্য্য ‘মায়াডোর’ নামে একটি হিন্দি ছবি প্রযোজনা করছেন। প্রথমে দারোয়ান ঢুকতে না দিলেও অনেক অনুনয়ের পর পূর্ব পরিচিত নাট্যজন গণেশ বাবুর পরিচয় দিয়ে প্রযোজকের সামনে সামনে হাজির হলেন। প্রযোজক অনেক দেখে-শুনে তাকে ছোট্ট একটি চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ দিলেন। নতুন বরের মার খাবার দৃশ্যে উত্তমের অভিনয় ছিলো খুবই সাবলীল। এভাবে সহশিল্পীর মর্যাদা নিয়ে মহানায়ক উত্তম কুমার চলচ্চিত্র অঙ্গনে পা রাখেন। পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি দৈনিক একটাকা চার আনা করে সম্মানি পান। কিন্তু তার প্রথম অভিনীত ছবি পরবর্তীতে আর মুক্তি পায়নি। ১৯৪৮ সালে মাত্র সাতাশ টাকা পারিশ্রমিকে নীতিন বসুর ‘দৃষ্টিদান’ ছবিতে উত্তম কুমার নায়কের ছোটবেলার চরিত্রে অভিনয় করেন। এটিই তার অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম কোন ছবি। কিন্তু তার অভিনীত প্রথম দিকের ছবিগুলো চ্রমভাবে ব্যর্থ হয়।



এরই মাঝে ১৯৪৮ সালের গৌরি গাঙ্গুলীকে প্রেম করে বিয়ে করেন। উত্তম ততদিনে ফিল্ম ইন্ড্রাস্ট্রিতে নাম লেখালেও পরিচিতি লাভ করতে সক্ষম হননি। তার ভাগ্য খুলে দেয় ‘বসু পরিবার’ ছবিটি। ছবিটি ব্যবসাসফল হওয়ার পাশাপাশি দর্শক-সমালোচক-মিডিয়া মুখরিত হয় তাঁর প্রশংসায়। প্রচুর কাজের প্রস্তাব পেতে থাকেন তিনি। শেষ পর্যন্ত চাকরি ছেড়ে দিয়ে পুরোদুস্তুর অভিনেতা বনে যান। এমপি প্রোডাকশনের হাসির ছবি ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ এর মধ্য দিয়ে উত্তম- সূচিত্রা প্রথম জুটি বাঁধলেন । পরবর্তীতে উত্তম সুচিত্রা জুটি বাংলা ছবির সমস্ত রেকর্ড ভঙ্গ করল। অগ্নি-পরীক্ষা ছবি মুক্তির পর প্রমাণিত হলো বাংলা ছবির অপ্রতিদ্বন্দ্বী জুটি উত্তম-সুচিত্রা।

অভিনয় পাগল উত্তম কুমার চলচ্চিত্রের সংগে সংগে সমান তালে মঞ্চেও কাজ করে যান । স্টার থিয়েটারে এক নাগাড়ে ‘শ্যামলী’ নাটকের ৪৮৬ টি প্রদর্শনীতে তিনি অভিনয় করেন। ১৯৫৬ সালে উত্তম কুমার অভিনেতা থেকে প্রযোজক হয়ে ‘হারানো সুর' চলচ্চিত্রটি উপহার। রাষ্ট্রপতি ‘সার্টিফিকেট অব মেরিট’ সম্মান পায় ছবিটি। বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র তিনি পরিচালনাও করেছেন। গুটি কয়েক হিন্দি ছবিতেও কাজ করেছেন তিনি।

১৯৬২ সালে স্ত্রীর সঙ্গে উত্তমের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। ততদিনে মিডিয়ায় অভিনেত্রী সুপ্রিয়া দেবীর সংগে তার সম্পর্কটির বিষয় কারো অজানা নয়।

বাংলা সিনেমার আরেক কিংবদন্তী সত্যজিৎ রায়ের ‘নায়ক’ ও ' চিড়িয়াখানা' ছবিতে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার লাভ করেন। এছাড়া ‌' অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি' ছলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্যও তিনি জাতীয় পুরষ্কার পান। এছাড়া তিনি নিউইয়র্ক, বার্লিন চলচ্চিত্র প্রভৃতি সম্মানজনক চলচ্চিত্র উৎসবের অতিথির সম্মানও অর্জন করেছিলেন।

১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই ওগো বধূ সুন্দরী ছবির শুটিং চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ
হয়ে তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত হন। আজ তাঁর ৩১তম মৃত্যুবার্র্ষিকী। বাংলার মহানায়কের প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।


(তথ্যসূত্র: বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং দেশী ও বিদেশী বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা)

উত্তম কুমার অভিনীত ছায়াছবির তালিকা
উত্তম কুমার সম্পর্কে বিখ্যাতদের উক্তি
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১:০২
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×