somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি কুঁড়ি আর দুটি পাতার দেশে: প্রথম পর্ব

২২ শে এপ্রিল, ২০১২ বিকাল ৫:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ম্যালা দিন পর ঝটিকা সফর। আমার কর্পোরেট গোলাম দোস্তরা এত ব্যস্ত থাকে যে জানুয়ারিতে প্ল্যান করে রাখা ট্যুর করতে হলো এপ্রিলে! প্রতিবার আমি ছুটি বের করে প্রস্তুত থাকি, কিন্তু তখন, তখনই বন্ধুদের কারো ঠিক কাজ পড়ে যায় । শেষ পর্যন্ত ভয় দেখালাম যে ওদের ছাড়াই যাব। কিন্তু নিজের কাছেই হুমকির জোর নাই। ঐ বান্দরগুলোকে ছাড়া ট্যুর জমে নাকি! বেচারা আমি !! জল অনেক ঘোলা করে (কান্দি নাই, শুধু ভয় দেখাইছি :P ) শেষ পর্যন্ত আমি, শান্তনু, সাকিব, রউফ আর জাহিদ এ পাঁচজন মিলে ঘুরে এলাম একটি কুঁড়ি দুটি পাতার দেশ সিলেট আর মৌলভীবাজার।

বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা থেকে যখন রওয়ানা হই তখনও ভীষণ গরম। প্রচন্ড খরতাপে বৈশাখ তার আগমনী বার্তা জানান দিলেও কালবৈশাখী তখনও তার উন্মত্ত রূপ নিয়ে হাজির হয়নি। প্রকৃতির বৈরীতায় বাতাসও গুমোট বেঁধে আছে। একটুখানি বৃষ্টির জন্য হাঁসফাঁস করছে সবাই। কিন্তু বৃষ্টির দেখা নেই। আর এ সময়টাতে ঢাকার চেয়ে সিলেটে গরম বেশি হওয়ায় সিলেট যাওয়া মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কিন্তু আবহাওয়ার কথা খুব একটা চিন্তা না করে সবাই হালকা কাপড়-চোপড় নিয়েই যাত্রা শুরু করলাম। রাত পৌনে বারটায় ফকিরাপুল থেকে বাসে উঠলাম। বাসে উঠে পরিচিত কয়েকজন বন্ধুকে পেয়ে গেলাম যারা আমাদের মতই সিলেট ঘুরতে যাচ্ছে। আমাদের দুই গ্রুপের হাউকাউতে বাসযাত্রীরা ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে মিনতি করলো 'ভাইয়েরা এবার ক্ষ্যামা দেন'। আমাদেরও টনক নড়লো! হইচই না করে একটু ঘুমানো দরকার। কারন সকাল থেকেই ঘুরাঘুরি শুরু হবে। চোখটা লেগে এসছিলো এমন সময় হঠাৎ অনুভব করলাম শীত শীত লাগছে। ঝিমুনিভাবটা কেটে উঠতেই দেখি বাইরে তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়েছে! ব্যস! এই যে বৃষ্টি শুরু হলো , শেষ পর্যন্ত পুরো সফরটাই বৃষ্টিসঙ্গী করে শেষ করতে হয়েছে। বৃষ্টি থাকায় ঘুরে-বেড়ানোটা যথেষ্ট আনন্দদায়ক হলেও ছবি তুলতে খুব সমস্যা হয়েছে। তাই ছবি তুলতে পেরেছি অনেক কম। :(

যাই হোক বাস রীতিমত উড়িয়ে আমাদেরকে ভোর চারটায় নামিয়ে দিলো মৌলভীবাজার। বিপদে পড়ে গেলাম। এত রাতে কী করি! আমরা ঢাকা থেকেই একটা মাইক্রোবাস ঠিক করে রেখেছিলাম। সকাল সাতটায় মাইক্রোবাসের ড্রাইভার এনাম ভাই আমাদের তুলে নেয়ার কথা। এনাম ভাইকে ফোন করে জানাতেই সে তখনই সিলেট থেকে রওয়ানা দিলো । এ ফাঁকে আমরা একটা বোর্ডিংয়ে উঠলাম হাত-মুখ ধোয়ার জন্য। সাড়ে ছয়টায় এনাম ভাই হাজির হলেন। নাস্তা খেয়ে ঠিক সাতটায় শুরু হলো আমাদের যাত্রা। প্রথম গন্তব্য দেশের সবচেয়ে বড় হাওর 'হাকালুকি'।

পাখিদের স্বর্গরাজ্য হিসেবে খ্যাত হাকালুকি হাওর অপরূপ সৌন্দর্যমন্ডিত এক জলাশয়। আমার সবচেয়ে বেশি আগ্রহ ছিলো হাকালুকি হাওর নিয়ে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি হতাশ হতে হয়েছে। কারন আমরা ভুল সময়ে হাজির হয়েছি হাওর দেখতে। এসময় নেই পাখির আনাগোনা, নেই জেলেদের মাছ ধরার ঝাপি। সবচেয়ে বড় কথা যে বিচরণভূমিতে আমরা হেঁটে বেড়ায়েছি সেগুলো নাকি মূলত জলাশয়! স্থানীয়রা জানালো এ সময়টাতে হাওরে পানি কম তাই এখন হাওর ঘুরে বেড়ানোর উপযুক্ত সময় নয়। আমাদেরকে জানালো বর্ষায় ঘুরে যেতে। আমরা ইতস্তত কিছুদূর হেঁটে নৌকা ভাড়া করলাম। হাওরের একাংশে নৌকায় ঘুরলাম কিছুক্ষণ। রাবার ড্যাম পর্যন্ত নৌকা আমাদেরকে ঘুরিয়ে আনলো। উইকিপিডিয়া থেকে জানা গেলো, হাকালুকি হাওরের আয়তন প্রায় ১৮,১১৫ হেক্টর যার মাঝে শুধু বিলের আয়তন ৪,৪০০ হেক্টর। এটি বৃহত্তর সিলেট জেলার বড়লেখা, কুলাউড়া , ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ এবং বিয়ানীবাজার জুড়ে বিস্তৃত। হাকালুকি নামের উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন লোককাহিনী প্রচলিত রয়েছে। জনশ্রুতিমতে, বহু বছর আগে ত্রিপুরার মহারাজা ওমর মানিক্যের সেনাবাহিনীর ভয়ে বড়লেখার কুকি দলপতি হাঙ্গর সিং জঙ্গলপূর্ণ ও কর্দমাক্ত এক বিস্তীর্ণ এলাকায় এমনভাবে লুকি দেয় বা লুকিয়ে যায় যে, কালক্রমে ঐ এলাকার নাম হয় "হাঙ্গর লুকি"। ধীরে ধীরে এই "হাঙ্গর লুকি" পরিনত হয় "হাকালুকি" তে। আরেকটি জনশ্রুতি হচ্ছে প্রায় দুই হাজার বছর আগে প্রচন্ড এক ভূমিকম্প "আকা" নামে এক রাজা ও তাঁর রাজত্ব মাটির নিচে সম্পূর্ণ তলিয়ে যায়। কালক্রমে এই তলিয়ে যাওয়া নিম্নভূমির নাম হয় "আকালুকি" বা হাকালুকি। আরো প্রচলিত যে, এক সময় বড়লেখা থানার পশ্চিমাংশে "হেংকেল" নামে একটি উপজাতি বাস করত। পরবর্তিতে এই "হেংকেলুকি" হাকালুকি নাম ধারণ করে। এছাড়া আরো প্রচলিত আছে যে, হাকালুকি হাওরের কাছাকাছি একসময় বাস করতো কুকি, নাগা উপজাতিরা। তাঁদের নিজস্ব উপজাতীয় ভাষায় এই হাওরের নামকরণ করা হয় "হাকালুকি", যার অর্থ 'লুকানো সম্পদ'।
১.


২.


৩.
গবাদি পশুর এই বিচরণ ক্ষেত্র আর কদিন পরে ভরে উঠবে হাওরের জলে


৪.
এই মাঠ-ঘাট-প্রান্তর আর কদিন পরে ভরে উঠবে হাওরের জলে


৫.
ফটোগ্রাফির অপচেষ্টা ;)


৬.


৭.
রাবার ড্যাম


৮.
হাওরের উপর ছোট্ট একটি সেতু। এর নীচেই রাবার ড্যাম


নৌকা করে হাওর থেকে ফেরার পথেই আবার শুরু হলো বৃষ্টি। মাথার উপর বিশাল বিশাল বাজ পড়তে শুরু করেছে। বাজের আওয়াজে পিলে চমকে যাওয়ার জোগাড়! এর মধ্যে মাঝি ভাই জানালো হাওরে বজ্রপাতের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। গতবছরই মারা গেছে কয়েকজন! শুনে আমাদের গলা শুকিয়ে গেলো। কোন মতে নৌকা থেকে নেমে কাঁচারাস্তা ধরেই ছুট লাগালাম। শেষ পর্যন্ত কাকভেজা আর কাদায় মাখামাখি হয়ে গাড়িতে পৌঁছে ভীষণ স্বস্তি পেলাম হাওরে বজ্রপাতে বেঘোরে প্রাণটা না যাওয়াতে ।

এরপরের গন্তব্য ছিলো মাধবকুন্ড ঝর্ণা। মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার কাঁঠালতলিতে অবস্থিত মাধবকুন্ড ঝর্ণার উচ্চতা প্রায় ১৬২ ফুট। সরকারিভাবে এটি একটি পর্যটন স্পট। তাই জায়গাটা বেশ সাজানো-গোছানো। টিকিট কেটে ঝর্ণার প্রধান ফটকে পৌঁছে আমরা কাপড় পাল্টে নিলাম। সবাই শীতে ঠক ঠক করে কাঁপছি। ভাবলাম বৃষ্টি কমলে ঝর্ণা দেখেতে যাবো। কিন্তু বৃষ্টি থামার কোন লক্ষণ নেই। তাই বাধ্য হয়েই বৃষ্টির মাঝেই ঝর্ণা দেখার জন্য ছুটলাম। মাধবকুন্ড ঝর্ণার পানি কম হওয়াতে এমনিতেই বদনাম আছে । আমরা ভাগ্যবান বৃষ্টি হওয়াতে ঝর্ণার লাবণ্য ছিলো অতুলনীয়। মুষলধারে বৃষ্টি থাকায় খুবি বেশি ছবি তুলতে পারলাম না। কিন্তু প্রাকৃতিক এ ঝর্ণার রূপ দেখে মন খুশিতে ভরে গেলো। যদিও কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা থাকায় ঝর্ণাতে গোসল করার জন্য নামতে পারলাম না। কারন এখন পর্যন্ত এ ঝর্ণাতে গোসল করতে গিয়ে প্রায় ৩০ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছে!!!

৯.



( চলবে...........)
_____________________________________________
সিলেট ভ্রমণের আরো গল্প...
মাধবপুরে বন, পাহাড় আর হ্রদের মিলনমেলায়
অপরূপ লাউয়াছড়া বনে
রাজকান্দি পেরিয়ে হামহামে
____________________________________________
***আমার যত ভ্রমণ ও ছবিব্লগ*** :)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১২ বিকাল ৩:৪৭
২৯টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×