somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সোনালী দিনের চলচ্চিত্র : আলমগীর কবিরের সীমানা পেরিয়ে

২৫ শে আগস্ট, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
সীমানা পেরিয়ে ( ১৯৭৭ )
(Across The Fringe)

কাহিনী, চিত্রনাট্য, সংলাপ, প্রযোজনা ও পরিচালনা: আলমগীর কবির
অভিনয়ে: বুলবুল আহমেদ, জয়শ্রী কবির, গোলাম মোস্তফা, মায়া হাজারিকা, কাফী খান, তনুজা
গীতিকার: শিবদাস ব্যানার্জী
সঙ্গীত পরিচালনা: ভূপেন হাজারিকা
চিত্রগ্রহণ: এম এ মবিন
সম্পাদনা: বশির হোসেন
পরিবেশক: আলমগীর পিকচার্স লিমিটেড
দৈর্ঘ্য: ১১৭ মিনিট

চলচ্চিত্রে বিকল্প ধারার প্রবক্তা আলমগীর কবিরের তৃতীয় চলচ্চিত্র সীমানা পেরিয়ে। কবির অবশ্য ততদিনে ধীরে বহে মেঘনা আর সূর্যকন্যা দিয়ে নিজের জাত ভালোভাবেই চিনিয়ে দিয়েছেন। তাঁর প্রত্যেকটি চলচ্চিত্রের আবেদন অসামান্য কিন্তু সীমানা পেরিয়ে ছিলো বাংলা চলচ্চিত্রে একটি মাইলফলক। গল্প, চিত্রনাট্য, নির্মাণশৈলী সব দিক দিয়েই আলমগীর কবির প্রমাণ করে দিয়েছিলেন তিনি তাঁর পূর্বসুরী ও সমসাময়িক নির্মাতাদের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে।

সীমানা পেরিয়ে চলচ্চিত্রটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। ১৯৭০ সালে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানে। কাকতালীয়ভাবে একজন গ্রাম্য তরুণ ও একজন শহুরে তরুণী ভাসতে ভাসতে একটি অজানা দ্বীপে আশ্রয় নেয়। তাদের দুজনের বেঁচে থাকার সংগ্রাম নিয়েই সীমানা পেরিয়ে ছবির কাহিনী এগিয়ে যেতে থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ সব শ্রেণীর মানুষকেই এক কাতারে নিয়ে আসে। ক্ষুধা, নিরাপত্তা আর বেঁচে থাকার লড়াইয়ে মানুষে মানুষে শ্রেণী বিষয়ক কোন সীমা নির্ধারিত হতে পারেনা। দু'জন মানুষ দু'টি ভিন্ন সমাজ ব্যবস্থায় ও ভিন্ন সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠলেও বেঁচে থাকার তাগিদে তাদের মধ্যে আশ্চর্য সুন্দর একটি সম্পর্ক গড়ে উঠে। যে সম্পর্ক নারী-পুরুষের স্বাভাবিক যৌন আকর্ষণকে ছাপিয়ে বৈষম্যহীন এক পৃথিবীর স্বপ্ন দেখায়। পরিচালক নিজেই ছবিটিকে একটি ফ্যান্টাসি চলচ্চিত্র হিসেকে আখ্যায়িত করেছেন। সমাজের ওপর তলা আর নীচতলার মানুষের মাঝে স্বাভাবিক কোন সম্পর্ক আদৌ সম্ভব কিনা সে বিষয়ে পরিচালক নিজেও সন্দিহান। কিন্তু সত্যি এমন হলে কেমন হত? পরিচালক সেই প্রশ্নের উত্তরই খুঁজেছেন। প্রতিবন্ধকতাগুলোকেও সামনে নিয়ে এসেছেন, সেই সঙ্গে সমাধানের পথটাও খানিকটা বাতলে দিয়েছেন। কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী শাসক শ্রেণীর কারনে পথটা বড় বেশি দুর্গম।

প্রথম দৃশ্যটিতেই আলমগীর কবির কৌশলে সিনেমার বার্তাটি দর্শকদের কাছে পৌছে দিতে সক্ষম হয়েছেন। তাই প্রথম দৃশ্যটি নাটকীয় হলেও তাৎপর্যবহ। ছবিটির প্রথম দশ মিনিটেই চলচ্চিত্রটির তিনটি চরিত্রের গতিপ্রকৃতি ধরে ফেলা যায়। এই তিনটি চরিত্র হচ্ছে ছবির নায়িকা টিনা ও তার বাবা-মা। টিনার পরিবার শিক্ষিত, আধুনিক মনস্ক এবং বিত্তশালী। কিন্তু তিনটি প্রাণীই নিজ নিজ ভুবনে নি:সঙ্গ এবং অসুখী। তাদের মধ্যকার মানসিক দ্বন্দ্বটাও সুষ্পষ্ট। ছবির প্রথমেই টিনার পরিবারের মধ্য দিয়ে পরিচালক এক রকম উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবেই শহুরে পরিবারের সামগ্রিক চিত্রটি দর্শকদের মনে ছেপে দিয়েছেন। ছবির মূল ঘটনা শুরু হয় টিনা তার মায়ের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে যাবার পর। গ্রামে গিয়ে টিনা তাদের পারিবারিক ইতিহাস জানতে পারে, জানতে পারে তার মায়ের কিশোরী বয়সের প্রেমের কথা। টিনা পরিচিত হয় রতন মামার সঙ্গে যিনি এক সময়কার বামপন্থী রাজনীতি করতেন, পাল্টে দিতে চাইতেন সমাজ ব্যবস্থাকে। টিনার সঙ্গে আরো পরিচয় হয় গ্রামের সহজ সরল খেটে খাওয়া অভাবী মানুষগুলোর। কিন্তু এরই মাঝে প্রলয়ংকরী জলোচ্ছ্বাস ওলট-পালট করে দেয় টিনার পৃথিবী। নিজেকে সে জীবিত আবিষ্কার করে অজানা এক দ্বীপে। একমাত্র সঙ্গী বলতে গ্রামের অশিক্ষিত যুবক কালু। এখান থেকেই পরিচালকের ফ্যান্টাসী শুরু যার শেষটুকুতে আমরা দেখি নতুন এক জীবনের হাতছানি।

খুব ভালো কারিগরী সুবিধা ও আর্থিক সহায়তা ছাড়াও যে দারুন ছবি নির্মাণ সম্ভব সীমানা পেরিয়ে তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তাই ছবির খুঁত বলতে তেমন কিছু চোখে পড়েনা। চলচ্চিত্রটিতে নর-নারীর যৌন আকর্ষন মূল উপজীব্য নয়। তবে যৌনতাকে একবারে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাই স্বাভাবিকভাবেই ছবির নায়ক-নায়িকাও সে প্রবৃত্তি থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে পারেননি । তবে পরিচালক এখানে সাহসী হতে পারেননি সেন্সরের ছুরির নীচে ক্ষত-বিক্ষত হওয়ার ভয়ে। তাই তাঁকে কৌশলী হতে হয়েছে। এ জায়গাটি মোটামুটি ভালোভাবেই সামলে নিয়েছেন কবির। ছবির মা চরিত্রটির উপর পরিচালক খুব বেশি গুরুত্ব দেননি। জলোচ্চ্ছ্বাসের পর অজানা একটি দ্বীপে টিনার জ্ঞান ফিরলে মাকে খুঁজতে দেখা যায়না, তার জন্য বিলাপ করতেও দেখা যায়না। এমনকি দীর্ঘ সময় ধরে দ্বীপে বসবাস করার সময়ও মাকে নিয়ে কিছু বলতেও শোনা যায়না টিনাকে। মা বেঁচে আছে কী নেই সে ব্যাপারে টিনার কোন ভাবনা নেই দেখে দৃষ্টিকটু লাগে। তবে কী মায়ের সঙ্গে সম্পর্কের সূতোটি মজবুত ছিলোনা বলেই এমন? নাকি এ ঘটনাটিও শহুরে বুর্জোয়া পরিবারগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে? এমনকি ছবির শেষের দিকে টিনার বাবা যখন টিনার বান্ধবীকে বিয়ে করে আনে টিনাকে খুব বেশি বিচলিত হতে দেখা যায়না।

ছবির শেষ দৃশ্যেও প্রথম দৃশ্যে উঠে আসা বক্তব্যগুলোই আবার প্রতিধ্বিনিত হলো ছবির নায়িকা টিনার মুখে। দীপ্ত কন্ঠে টিনা তার বাবা সহ সকল দর্শককেই যেন সতর্কবার্তা শুনিয়ে দিলেন- '' কীসে তোমার এত অহংকার ড্যাডি যে কালুর মত একজন সৎ ও বুদ্ধিমান মানুষকে তুমি তোমার সমান বলে মেনে নিতে পারছোনা? কিন্তু জানো ওরাই হচ্ছে সাইলেন্ট মেজরিটি। এখন হয়ত ওরা ঘুমিয়ে আছে। কিন্তু একদিন ওরা জাগবে। তাই আমি এখন থেকেই ওদের দলে মিশে যাচ্ছি। তুমি যদি সত্যি সত্যি বুদ্ধিমান হও তাহলে তোমার এই মিথ্যে অহংকার ছেড়ে ওদের সঙ্গে দলে এসে যোগ দাও।''

এ ছবির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে অভিনয় আর সংলাপ। গ্রাম্য যুবক কালুর চরিত্রে বুলবুল আহমেদ অনবদ্য কাজ দেখিয়েছেন। পুরো ছবি জুড়ে তার উপস্থিতিতে ছিলো নিষ্ঠা আর পেশাদারিত্বের ছাপ। পরিশ্রমের ফলটাও পেয়েছেন দারুনভাবে। শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কারটি ঘরে তুলেছেন। গোলাম মোস্তফা, মায়া হাজারিকা, কাফী খান যার যার জায়গায় ঠিক-ঠাক কাজ দেখিয়েছেন। তবে সবকিছু ছাপিয়ে এ ছবির আলোচ্য বিষয় হচ্ছে জয়শ্রী কবির। বাংলা সিনেমা যুগে যুগে অনেক রূপসীদের দেখেছে। কিন্তু এই বিদেশিনীর তুলনা শুধু তিনি নিজে। ছবিতে যেমনটি দরকার ছিলো পরিচালক ঠিক তেমন করেই তাকে আবেদনময়ী হিসেবে উপস্থাপন করেছেন কিন্তু দেশীয় প্রেক্ষাপটের কথা মাথায় রেখে যথেষ্ট মার্জিতভাবে। কোন আদিখ্যেতা ছিলোনা, ছিলোনা কোন জাঁকজমক কিন্তু তারপরও জয়শ্রী ছিলেন অনন্য। তার ন্যাকা ন্যাকা কন্ঠে সংলাপ বলাটাও ভালো লেগে যায়। শাড়ি পড়া অবস্থাতেও যেমন চোখ ফেরানো গেলোনা তেমনি পাহাড়ি মেয়ের সাজেও যেন সাত আসমান থেকে নেমে আসা এক অপ্সরীকে দেখলাম!

চলচ্চিত্রটির সঙ্গীত অসাধারণ। চমৎকার দুটি গান রয়েছে এ ছবিতে। আবিদা সুলতানার কন্ঠে 'বিমূর্ত এই রাত্রি আমার' আর ভূপেন হাজারিকার কন্ঠে 'মেঘ থম থম করে'। এছাড়া রয়েছে একটি রবীন্দ্রসংগীত (আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে) এবং একটি আদিবাসী সংগীত ।

বিমূর্ত এই রাত্রি আমার


মেঘ থম থম করে


চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা, শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক ও শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার জিতে নেয়। ব্রিটিশ ফিল্ম ইন্সটিটিউটের "বাংলাদেশের সেরা ১০ চলচ্চিত্র" তালিকায় চতুর্থ স্থান পেয়েছে 'সীমানা পেরিয়ে'
____________________________________________
(চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত মাসিক পত্রিকা ‌'দখিনা' সেপ্টেম্বর ২০১২ সংখ্যায় প্রকাশিত)
____________________________________________
উৎসর্গ: আবদুল ওয়াহিদ (সুজন ভাই)
চলচ্চিত্র নিয়ে তার বিশ্লেষণগুলো অসাধারণ মানের। যে কোন চলচ্চিত্রের গভীরে তিনি অনুপ্রবেশ করতে পারেন এবং ভেতরের নির্যাসটুকু অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পাঠকের সামনে পেশ করেন। এ কারনে তার প্রতি আমার ঈর্ষাপরায়ণতা কাজ করে। প্রতিভাবান ভালো মানুষকে ঈর্ষা নয় শ্রদ্ধা করতে হয়। এই উৎসর্গপত্র নিজের অপরাধবোধ কমানোর ক্ষুদ্র প্রয়াস।
ভালো থাকবেন সুজন ভাই।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১:০৬
৮৩টি মন্তব্য ৮৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×