আগের পর্ব: নতুন জীবন- সাত
এমনই কিছু অনুসন্ধিৎসু মানুষ উন্নত মানের একটা জাহাজ বানিয়ে আবার দক্ষিণে যাত্রা করে। এই দলে থাকা মার্থার নামে একজন অভিযান শেষে তার পর্যবেক্ষণ দিনলিপির আকারে লিপিবদ্ধ করে। সেটার কিছু অংশ এমন:
পোড়া ভূমির সবচেয়ে খারাপ রূপ দেখা যায় কালো সৈকতে। কাছে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করা না গেলেও বলা যায়, সেখানে প্রাণের কোনো লক্ষণই দেখা যায় না। অন্ধকার রাতে দেখা ভূমির কোন কোন এলাকায় হালকা আলোয় প্রভা দেখা যায়... তবে ধর্মগুরুরা যেমন বলে থাকেন যে, বিকৃতি দমন না করায় ত্রুটিময় এলাকার বিস্তার ঘটছে, বাস্তবে তার উল্টাটাই দেখা গেছে। যেমন দেখা গেছে, পোড়াভূমির মাঝে মাঝে যে বিকৃত উদ্ভিদময় প্রান্তভূমি আছে, সময়ের সাথে সাথে তার বিকৃতি কমে আসছে, আবার পোড়াভূমির ঊষরতার মাঝে নতুন প্রাণের আবির্ভাব দেখা যাচ্ছে... এই সবকিছু থেকে বোঝা যায়, প্রাণের বিস্তার ধীরে ধীরে ঘটে চলেছে।
মার্থারের লেখার এই অংশটা ধর্মগুরুদের ক্ষেপিয়ে তোলে। কারণ এর অর্থ এটাই দাঁড়ায় যে, বিচ্যুতি বা বিকৃতি খুব ধীরে হলেও নিজেই নিজেকে সংশোধিত করছে, অর্থাৎ বিকৃতি কোন পাপ নয়। মার্থারের বিরুদ্ধে ধর্মদ্রোহীতার অনেকগুলো মামলা হয়, আর এমন অভিযান বন্ধের জোর দাবি ওঠে...
এইসব গোলমালের মাঝেই ভাঙ্গা চোরা, বিধ্বস্ত অবস্থায় অল্প কজন নাবিক নিয়ে রিগোর বন্দরে "অভিযাত্রী"নামের এক জাহাজ বহুদিন পর এসে ভেড়ে। মানুষ এই জাহাজের কথা ভুলেই গেছিল। অধিকাংশ নাবিক মারা গেছে, যে ক'জন বেঁচে ছিল, তারা জানায় তারা কালো সৈকত পেরিয়ে আরও দূরে গেছিল। প্রমাণ হিসেবে তারা কিছু সোনা- রূপার গহনা জাহাজ বোঝাই মশলা নিয়ে এসেছে। যথেষ্ট প্রমাণ, আর কিছু বলার থাকে না, কিন্তু ধার্মিকেরা সেই মশলা ছুঁয়ে পর্যন্ত দেখলেন না, পাছে এই মশলা বিকৃত গাছে জন্মে থাকে সেই সন্দেহে! অন্যদের সমস্যা ছিল না, তারা বিপুল আগ্রহে এই মশলা গ্রহণ করল!! এরপর থেকে মশলার সন্ধানে অনেক জাহাজ দক্ষিণে যেতে লাগলো।
যাত্রা পথে তারা যেসব জায়গা দেখলেন সেগুলো বড় অদ্ভুত। অনেক জায়গা বিকৃতি দিয়ে ভরপুর, অথচ সেখানে বিকৃতি দূর করার জন্য কোনো ব্যবস্থাও নেয়া হয়না। সন্তান বিকৃত হয়ে জন্ম নিলেও, যদি সে নিজের দেখাশোনা করতে পারে তবে তাকে মেরে ফেলা হয় না!! একেক জায়গায় একেক রকম বিকৃত মানুষ দেখা যায়, কারো গোলাপী চোখ তো কারো আবার মাথায় কোন চুল নেই। এক জায়গায় এমন মানুষ দেখা গেল যাদের ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি বলা যেত, যদি না এক অদ্ভুত বিচ্যুতি তাদের কুচকুচে কালো করে দিত! আবার আরেক ধরনের বিচ্যুতি দেখা গেছে, যেখানে মানুষ লম্বায় দুই ফুট, সারা গায়ে লোম আর লেজ ওয়ালা, তারা গাছে গাছে লাফিয়ে বেড়ায়।
অর্থাৎ কিনা আমাদের জানার বাইরে পৃথিবীটা খুব অদ্ভুত। সেখানে মানুষদের আচরণও অদ্ভুত; কেউ কেউ দেখামাত্র বিষমাখা তীর ছুঁড়ে মারে আবার কেউ কেউ বেশ বন্ধুসুলভ। এই বন্ধুসুলভ মানুষদের কথা বোঝা না গেলেও আকার ইঙ্গিতে অনেক কথার আদান-প্রদান করা গেছে। দেখা গেল, তাদের সাথে আমাদের এক অবাক করা মিল আছে, প্রাচীন যুগের মানুষ সম্পর্কে তারাও জানে। তারাও মনে করে প্রাচীন যুগের মানুষেরা উড়তে পারত, পানিতে ভাসমান শহর বানাত, বহুদূরে থাকা মানুষদের সাথে কথা বলত- ঠিক যেমনটি আমরা মনে করি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এই সব মানুষদের বিভিন্ন রকম বিকৃতি থাকা সত্ত্বেও প্রত্যেকেই দাবি করে কেবল তারাই ঈশ্বরের সঠিক প্রতিমূর্তি, বাকি সবাই বিকৃত!!
প্রথম প্রথম এই দাবি হাস্যকর মনে হলেও, দেখা গেল বিভিন্ন রকমের বিকৃতিসম্পন্ন মানুষেরা এতটা জোর দিয়ে নিজেদের ঈশ্বরের প্রতিরূপ বলছে যে, তাদের দাবি নাকচ করতে গিয়ে মনে একটা প্রশ্ন জাগে; আমরাই বা কি করে নিশ্চিত হলাম যে, তারা সকলেই ভুল বলছে? আমরাই যে ঈশ্বরের একমাত্র প্রতিরূপ তার প্রমাণ কোথায়!! হ্যাঁ, নিকলসনের সিন্দুকে পাওয়া জিনিস থেকে আমরা প্রাচীন মানুষ সম্পর্কে অনেক কিছু জেনেছি, সেসব সত্যি ধরে তাদেরকে যদি আমরা ঈশ্বরের প্রতিরূপ বলে ধরে নেই, তাহলেও তাদের সম্পর্কে সবটুকু তো আমরা জানি না, আমরা কিসের ভিত্তিতে তাদেরকেই আদর্শ বলে ধরে নেই?
এক্সেল খালু আরো অনেক কিছু বলেছিলেন, শুনতে শুনতে আমার মনে নানা ভাবনা খেলা করছিল, কিন্তু যা জানার জন্য আমার মন আঁকুপাঁকু করছিল সে সম্পর্কে উনি কিছু বলছিলেন না। শেষ পর্যন্ত আমি জিজ্ঞেস করেই ফেললাম,
- খালু, অভিযানের সময় কেউ বড় শহর দেখেছে?
- শহর? কিছু শহর তো নিশ্চয় দেখেছে, কিন্তু সেগুলো খুব বড় নয়, ধর আমাদের কেন্টাক শহরের মতো বড়।
- না তেমন না,
আমি বললাম। তারপর আমার স্বপ্নে দেখা শহরের বর্ণনা দিয়ে জানতে চাইলাম সেরকম শহর কেউ দেখেছে কিনা।
- না, এমন অদ্ভুত শহর কেউ দেখেছে বলে শুনিনি।
- হয়তো আরো কিছু আগালে এমন শহর দেখা যাবে?
- সেটা সম্ভব নয়। এরপর থেকেই সমুদ্র অসংখ্য জলজ উদ্ভিদে ভরা, কোন জাহাজের পক্ষেই এইসব উদ্ভিদের মোটা শিকড়ের জাল কেটে সামনে আগানো সম্ভব না।
- তার মানে, তুমি কি নিশ্চিত এমন কোন শহর নেই?
- একেবারে নিশ্চিত। যদি থাকতো তবে আমি নিশ্চয়ই শুনতাম ...
আমি খুবই হতাশ হলাম। যদি দক্ষিণে যাবার জন্য কোন জাহাজ পেয়েও যাই, কিন্তু তাহলেও তো আমার স্বপ্নের শহরে পৌঁছাতে পারব না! হতাশ মনে ভাবলাম, হয়তো এটা কেবলই এক স্বপ্ন, হয়তো প্রাচীন মানুষদের তৈরি শহরের স্বপ্ন দেখেছি, বাস্তবে এমন কোন শহর নেই...
এক্সেল খালু আরো কিছুক্ষণ কথা বললেন ঈশ্বরের সত্যিকার প্রতিরূপ নিয়ে। তারপর হঠাৎই আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,
- আমি কেন এতসব কথা বললাম তুমি বুঝতে পারছ, তাই না ডেভীবাবা?
আমি বুঝতে পারছিলাম, কিন্তু আমার এতকালের গোঁড়ামি ভরা মন তার বিশ্বাস থেকে নড়তে চাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত আমি বললাম,
- তুমি কি অন্যকিছুতে বিশ্বাস করছ, এক্সেল খালু?
খুব চিন্তিত আর ধীরে ধীরে খালু বলত লাগলেন,
- ধর্মোপদেশ... কিছু মানুষ বারে বারে একই কথা বললেই তা সত্যি হয়ে যাবে এমন তো নাও হতে পারে। কেউ নিশ্চিত ভাবে জানে না ঈশ্বরের প্রতিরূপ কী, অথচ প্রত্যেকেই মনে করে তার ধারণাই ঠিক। যেমন আমরা মনে করি প্রাচীন মানুষেরা ঈশ্বরের প্রতিরূপ ছিল, আমরা তাদের মত হতে চাই, কিন্তু তাহলে...
খালু চুপ করে দীর্ঘক্ষণ আমার দিকে চেয়ে রইলেন। তারপর বলতে লাগলেন,
- কিন্তু তাহলে, এই যে তুমি আর রোজালিন আমাদের থেকে অন্যরকম, এই বৈশিষ্ট্য যে প্রাচীন মানুষের সাথে মিলে যায় না তা কি কেউ নিশ্চিত হয়ে বলতে পারে? আমরা জানি প্রাচীন মানুষেরা অনেক দূরে থাকা মানুষের সাথে কথা বলতে পারত, আমরা সেটা পারি না অথচ তুমি আর রোজালিন পার! একটু ভেবে দেখ ডেভী, আমরা না, বরং তোমরা দুজনই হয়তো ঈশ্বরের প্রতিরূপের কাছাকাছি!
কিছুক্ষণ ইতস্তত করে আমি বলেই ফেললাম,
- শুধু আমরা দুজন না খালু, আমাদের মতো আরও আছে।
খালু চমকে উঠে আমার দিকে চেয়ে রইলেন।
- আরও আছে? ওরা কে? কতজন?
- ওরা কে, মানে ওদের নাম কী তা আমি বলতে পারবো না। নামকে ভাবনায় আকার দেয়া কঠিন, তাছাড়া তার দরকারও নেই। যোগাযোগের সময় আমরা বুঝতে পারি কে ভাবছে, ঠিক যেভাবে না দেখেও কারো গলা শুনে বুঝতে পারি কে কথা বলছে... রোজালিনকে চিনতে পেরেছিলাম দৈবাৎ।
খুব অস্বস্তি নিয়ে খালু আবার জিজ্ঞেস করলেন,
- তোমরা কতজন?
- আটজন। ন'জন ছিলাম, কিন্তু মাসখানেক ধরে একজন হঠাৎই যোগাযোগ থামিয়ে দেয়। এর অর্থ কী হতে পারে এক্সেল খালু, কেউ কি ওর সম্পর্কে জেনে গেছে? সে যদি ধরা পড়ে গিয়ে থাকে তাহলে...
বাকিটা অনুমানের ভার খালুর উপর ছেড়ে দিলাম। খালু চিন্তিত ভাবে মাথা নাড়লেন।
- না, এমন হলে আমি জানতাম। সে কি কাছাকাছি কোথাও থাকতো? হয়তো অন্য কোথাও গেছে?
- কোথায় থাকতো জানিনা, কিন্তু চলে গেলে অবশ্যই বলে যেত।
- কিন্তু ও ধরা পড়ে গিয়ে থাকলে সেটাও তোমাদের জানাতো, তাই না? আমার মনে হয় কিছু একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমি কি খোঁজ নিয়ে দেখব?
- তাহলে খুব ভালো হয় খালু। আমরা খুব দুশ্চিন্তায় আছি।
- আচ্ছা ভেবনা, আমি দেখছি। একটা ছেলে... কাছাকাছি থাকত... একমাস আগে... আর কিছু?
তেমন কিছু আর বলতে পারলাম না। চলে যাবার আগে খালু আরেকবার বললেন যে, অন্যরকম বলে নিজেদের নিয়ে আমরা যেন মনখারাপ না করি, হয়ত আমরাই প্রাচীন মানুষের প্রতিরূপ...
খালুর সাথেএই দীর্ঘ আলোচনার পর একটা কথা বুঝতে পারলাম, এখনই বাড়ি থেকে পালানো ঠিক হবে না।
নয়
বাড়ির পরিস্থিতি কেমন পাল্টে গিয়েছিল। কেউ কোন আলোচনা না করলেও আমি ছাড়া বাড়িতে সকলেই জানত যে, আমার একটা ভাই বা বোন আসছে। সকলের মধ্যে চাপা উত্তেজনা দেখে আমি ধারণা করতে পারছিলাম তারা কিছুর অপেক্ষায় আছে, কিন্তু কিসের অপেক্ষা তা বুঝতে পারছিলাম না। তারপর একরাতে একটা শিশুর তীব্র কান্নার শব্দ শুনতে পেলাম, শব্দটা বাসার ভেতর থেকে আসছে সেটা বোঝা যাচ্ছিল। সকাল বেলা কেউ এ নিয়ে কোনো কথা বলল না, সবাই রোজকার মতন কাজকর্ম করতে লাগলো, যেন রাতে কোন শিশু কান্না কেউ শোনেনি! আসলে যতক্ষণ পর্যন্ত ইন্সপেক্টর শিশুটাকে পরীক্ষা করে স্বাভাবিকতা-সার্টিফিকেট দিয়ে তাকে নিখুঁত ঘোষণা না করছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত সকলেই কিছু না জানার ভান করছিল। দুর্ভাগ্যবশত যদি শিশুর কোন খুঁত থাকে, তবে স্বাভাবিকতা- সার্টিফিকেট পাওয়া যাবেনা। সেক্ষেত্রে সকলেই এই না জানার ভান চালিয়ে যাবে, যেন এ বাড়িতে শিশু জন্মের কোন ঘটনা ঘটেইনি!!
ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে বাবার নির্দেশে একজন লোক ঘোড়া ছুটিয়ে গেল ইন্সপেক্টরকে নিয়ে আসতে। লোকটি বেশ বেলা করে ফিরে এল, একাই। ইন্সপেক্টর একটা চিঠি দিয়ে বাবাকে জানিয়েছেন যে, তিনি একটু ব্যস্ত আছেন, ফুরসৎ পেলেই আসার চেষ্টা করবেন।
বাবার মত একজন নেতৃস্থানীয় লোকের সাথে ইন্সপেক্টরের এমন ব্যবহার করার কথা না, কিন্তু একদিন দৈত্য ঘোড়ার ব্যাপারে বাবা সকলের সামনে তাকে অপমান করেছিলেন, এতদিনে ইন্সপেক্টর তার ক্ষমতা দেখাবার সুযোগ পেয়ে সুযোগের সদ্ব্যবহার করলেন!! বাবা খুব রেগে গেলেন, কিন্তু কেন রেগেছেন তাও কাউকে বলতে পারছিলেন না। তিনি ক্রমাগত ঘর আর বার করতে লাগলেন... যতক্ষণ না ইন্সপেক্টর পরীক্ষা করে সরকারি অনুমোদন দিচ্ছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত শিশুর জন্মের ঘোষণা দেওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে সকাল থেকে মা কেন তার ঘর ছেড়ে বেরোচ্ছেন না এ নিয়ে কেউ কোন প্রশ্ন করল না বরং সকলেই উৎকণ্ঠা চেপে রেখে স্বাভাবিক আচরণ করার প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছিল। উৎকণ্ঠা খুবই বেশি, কারণ এর আগে দুবার মা শিশু জন্ম দিয়েছেন কিন্তু সেই শিশুরা স্বাভাবিকতার সার্টিফিকেট পায়নি। এবার, অর্থাৎ তৃতীয়বার একই ঘটনা ঘটলে বাবা মাকে ত্যাগ করবেন, আইনে এর অনুমতি দেয়া আছে। ইন্সপেক্টর এটা জেনেও দেরি করছিলেন...আর সকলের উৎকণ্ঠা বাড়িয়ে তুলছিলেন।
মেরি বারে বারে মায়ের ঘরে যাওয়া- আসা করছিল, আমি আশেপাশেই ঘুরঘুর করতে লাগলাম যেন ইন্সপেক্টরের ঘোষনা নিজের কানে শুনতে পাই। অবশেষে দুপুরের পর তিনি এলেন। উঠানের কোনায় তার ঘোড়া দেখামাত্র বাবা এগিয়ে গেলেন তাকে ঘরে আনতে। ইন্সপেক্টর বাবার উদ্বেগ দেখেও দেখলেন না; তিনি ধীরে সুস্থে ঘোড়া বাঁধতে বাঁধতে আবহাওয়া নিয়ে কথা বলতে লাগলেন। বাবার মুখ টকটকে লাল দেখাচ্ছিল, উনি মেরিকে ডেকে বললেন ইন্সপেক্টরকে মায়ের ঘরে নিয়ে যেতে। শুরু হল প্রতীক্ষা!!
দীর্ঘ সময় পর ইন্সপেক্টর ভাবলেশহীন ভাবে মায়ের ঘর থেকে বেরোলেন। পরে মেরির থেকে শুনেছি, উনি অনেক সময় নিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বাবুটাকে পরীক্ষা করেছেন, মাঝে মাঝে কিছু ভেবেছেন। ঘর থেকে বেড়িয়ে উনি বসার ঘরের টেবিলের পাশে গিয়ে বসে কিছুক্ষণ ধরে কলম ঠিক করলেন। অবশেষে ব্যাগ খুলে একটা ফর্ম বের করে ইচ্ছা করে খুব ধীরে ধীরে লিখতে লাগলেন, " সরকারি দায়িত্ব পালনের অংশ হিসাবে তিনি শিশুটিকে পরীক্ষা করে দেখেছেন যে, এটি একটি সত্যিকার মানুষ, নারীজাতীয়, বাহ্যদৃষ্টিতে তাকে পূর্ণাঙ্গ বলে মনে হয়েছে।" লেখার পর তারিখ আর সই দিতে তিনি আরো সময় নিলেন, যেন মনস্থির করতে পারছেন না। অনেক সময় নিয়ে কাগজটা ভাঁজ করে অনিশ্চিত ভাব নিয়ে অবশেষে কাগজটা হস্তান্তর করলেন, রাগে গনগন করতে থাকা বাবার কাছে। বাবা ভালোই বুঝতে পারছিলেন, তার উৎকণ্ঠা বাড়ানোর জন্যই ইন্সপেক্টর ইচ্ছা করে এতটা সময় নিলেন।