কি করে ঘটলো এতো বড় সাংঘাতিক ঘটনা! যে ধরনের ঘটনার কথা আমরা শুনি বা শুনতাম মধ্যপ্রাচ্যের কোনও এক দেশে বা পাকিস্তানের মতো কোনও দেশে আজ সে ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা নিজের ঘরের আঙ্গিনায় প্রত্যক্ষ করতে হল আমাদের। এধরনের ঘটনা তো আমাদের দেশে হওয়ার কথা নয়। আমাদের মতো নির্বিরোধী , শান্তিপ্রিয় , অতিথিপরায়ণ দেশে এবারে যে নজিরবিহীন ভয়াবহ ঘটনা ঘটলো তার ভিত এক দিনে তৈরি হয়নি। বছরের পর বছর ধরে যে ধরণের উগ্র মৌলবাদের চাষাবাদ এখানে হয়েছে এবং যেটা আমাদের সর্বনাশা রাজনীতির ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে সেটাই এধরনের ঘটনার ভিত তৈরি করেছে। যে বিষবৃক্ষ আমাদের উঠোনে আমাদের নজর দিয়েও কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় এতো বড় হয়ে বেড়ে উঠেছে সেটা কোনও ফল দেবেনা এটা কিকরে আশা করা যায়? এবারের ঘটনা হচ্ছে সেই বিষবৃক্ষেরই একটি ফল। অবশ্য এটাই প্রথম ফল নয়। আমরা নিশ্চয় ভুলে যাইনি বাংলা ভাই, শায়খ আব্দুর রহমানদের কথা, বোমা মেরে বিচারক হত্যা, ৬৪ জেলায় একসাথে টাইমবোমা বিস্ফোরণের ঘটনাগুলো। সেগুলোও ছিল ঐ বিষবৃক্ষেরই ফল। সময় গড়িয়েছে। বাংলা ভাইদের বিচার হয়েছে, ফাঁসি হয়েছে, কিন্তু আসল কাজটাই হয়নি। হ্যাঁ, বিষবৃক্ষ কাটা হয়নি। উগ্র ধর্মীয় মতবাদের চাষাবাদ চলেছে জোরকদমে। রাজনৈতিক ছত্রছায়া তাকে দিয়েছে আরও ভালভাবে বিকশিত হওয়ার পরিবেশ। তার সাথে জড়িত আন্তর্জাতিক ভু-রাজনীতি তথা জিওপলিটিক্স। এমন নয় যে আমরা এসব সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল ছিলাম না। ছিলাম। তার চেয়ে বড় কথা আমরা ছিলাম উদাসীন। দেখেও দেখিনি। একই কথা প্রযোজ্য দেশের রাজনীতিকদের বেলায়, শাসকগোষ্ঠীর বেলায়। দেশের শাসকগোষ্ঠী এর বিরুদ্ধে সত্যিকারের কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। উলটো তারা এনিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটেছে।
দায় রয়েছে আমাদেরও। আমরা আমাদের মূল্যবোধ ধরে রাখতে পারিনি, নৈতিকতা বজায় রাখতে পারিনি। নিজেদের ভাই-বোনদের, নিজেদের সন্তানদের শেখাইনি। পরিবারে নৈতিক মূল্যবোধের চর্চা আমরা করিনা। শিল্প সাহিত্য চর্চা এখানে বিকশিত হতে পারেনি সঠিকভাবে। সবখানেই সুবিধাবাদীতা আর ধান্ধাবাজি। এরকম পরিস্থিতি উগ্র ধর্মীয় মতবাদ বিকাশের সহায়ক এবং সেটাই হচ্ছে। এর থেকে পরিত্রান লাভ করতে হলে পারিবারিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে হবে। সচেতন হতে হবে নিজেকে নিয়ে, নিজেদের পরিবারকে নিয়ে, সমাজকে নিয়ে। পরিবারে নৈতিকতার চর্চা, মূল্যবোধের চর্চা করতে হবে। সমাজকে বাঁচাতে হলে, দেশকে বাঁচাতে হলে শুরুটা নিজেদের পরিবার থেকেই করতে হবে। ইসলাম আসলেই কি বলেছে সেটা জানতে হবে। যাতে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে আর কেউ আমাদের বিপথে না নিয়ে যেতে পারে। খোদ মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) বলেছেন, “ তোমরা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করোনা” । এখনই সময় নিজেদেরকে শুধরে নিতে। অনেক দেরী হয়ে গেছে। ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। এখন ঘুরে দাঁড়াতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ২:০৩