somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কুশন
আলো –অন্ধকারে যাই- মাথার ভিতরে স্বপ্ন নয়,- কোন এক বোধ কাজ করে! স্বপ্ন নয়- শান্তি নয়-ভালোবাসা নয়, হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়! আমি তারে পারি না এড়াতে, সে আমার হাত রাখে হাতে; সব কাজ তুচ্ছ হয়,-পণ্ড মনে হয়। -জীবনানন্দ দাশ

খাজা ভাই

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রবাস জীবনটা খুব আনন্দময় কিছু না। আমি দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসী। এই দেশে কাজ করলে টাকা আছে। সেই টাকা দিয়ে বিলাসিতা করা যায়। কিন্তু বিলাসিতা জীবন আমার পছন্দ না। তবে আমি একটা গাড়ি কিনেছি। গাড়ি ছাড়া এই দেশে চলা অসম্ভব। অবশ্য আমেরিকাতে সব প্রবাসীর অন্তত একটা গাড়ি আছে। কারো কারো একাধিক গাড়ি। গাড়ির তুলনায় প্রবাসীদের বাড়ি কম। বেশির ভাগই ভাড়া থাকে। প্রবাসে আমার কষ্ট একটাই দেশের কথা খুব মনে পড়ে। যখন কাজে থাকি তখন কিছু মনে আসে না। রাতের বেলায় বিছানায় নিজ দেশের কথা গুলো, সৃতি গুলো বুকের মধ্যে চেপে বসে। বড় কষ্ট হয়। বড় যন্ত্রনা হয়।

কিছুদিন ধরে খাজা ভাইয়ের কথা খুব মনে পড়ছে। খাজা ভাইয়ের বয়স আমার বাবার চেয়ে বেশি। কিন্তু খাজা ভাই খুব কঠিন করে বলে দিয়েছেন- আমাকে চাচা ডাকবে না। ভাই বলে ডাকবে। খাজা ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় ঢাকার গুলিস্তানে। তখন ঢাকায় নতুন এসেছি। নটরডেম কলেজে ভর্তি হয়েছি। থাকি পুরান ঢাকার আগামসি লেনের এক সস্তার মেসে। আগামসি লেন থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত হেঁটে আসতাম। একদিন গুলিস্তানে আমার পকেটমার হয়। সারা মাসের খরচ ছিলো ম্যানিব্যাগে। সারা মাস কি করে চলবো এই চিন্তায় আমি অস্থির। তাছাড়া মেছের ভাড়াও দেওয়া হয়নি। প্রচন্ড মন খারাপ নিয়ে গোলাপ শাহ মাজারের সামনে বসে ছিলাম।

চারিদিকে গাড়ি বাসের বিকট শব্দ। অথচ কোনো শব্দই আমাকে স্পর্শ করছিলো না। সারা মাসের খরচের টাকা পকেটমার হয়েছে। এখন কি করবো? এই চিন্তায় আমার গলা বুক শুকিয়ে এসেছিলো। এমন সময় খাজা ভাই আমার পাশে বসে বললেন- তোমার পকেটমার হয়েছে নিশ্চয়? আমি খাজা ভাইয়ের দিকে ভালো করে তাকালাম। সাদা পাঞ্জাবী আর সাদা লুঙ্গি পড়া একজন বয়স্ক মানুষ। মাথার চুল সাদা। গাল ভরতি সাদা দাঁড়ি। চোখে সুরমা দিয়েছেন। খাজা ভাই বললেন, আমি ইচ্ছা করলে তোমার ম্যানিব্যাগ খুঁজে দিতে পারি। কিন্তু আমি তা করবো না। কিন্তু আজ সন্ধ্যায় তোমার দাওয়াত। ঐ দেখো রাস্তার ডান পাশে খিচুরী রান্না হচ্ছে। সবজি খিচুরী।

খাজা ভাই গুলিস্তান এলাকার একজন লিডার। পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় ধরে গুলিস্তান আছেন। এই এলাকার মানুষজন তাকে সবাই চিনে, জানে, সমীহ করে। গুলিস্তান এলাকার অবৈধ বিদ্যুতেই লাইন দেয় খাজা ভাই। এই কাজ করে সে মাসে মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করেন। খাজা ভাই প্রতি সপ্তাহে গোলাপ শাহ মাজারের কাছে তিন ডেক খুচুরী রান্না করেন। গরীব দুঃখীদের খাওয়ান। এমন কি প্রতি মাসে অসহায় গরীব মানুষদের শাড়ি লুঙ্গি দেন। গুলিস্তান এলাকার ব্যবসায়ীরা খাজা ভাইকে তোয়াজ করেই চলেন। আমার ঢাকার জীবনে যতবার বিপদে পড়েছি, খাজা ভাইয়ের সাহায্য পেয়েছি। তিনি আমার কাছে ফেরেশতার মতোন মানুষ।

আমার বান্ধবী লিন্ডা। ছুটির দিন গুলো আমি তার সাথেই কাটাই। একদিন লিন্ডাকে খাজা ভাইয়ের কথা বললাম। লিন্ডা প্রচন্ড অবাক হলো- খাজা ভাইয়ের কথা জেনে। বলল, সে গোপাল শাহ মাজারের খিচুরী খাবে। লিন্ডা খাজা ভাইয়ের ছবি দেখতে চাইলো। আমার কাছে খাজা ভাইয়ের কোনো ছবি নেই। লিন্ডা বলল, যাকে তুমি এত পছন্দ করো, তার ছবি তোমার কাছে থাকবে না কেন? আমি বললাম, যখন আমি বিদেশ আসি তখন খাজা ভাই ছিলেন জেলে। আমি কারাগারে গিয়েই খাজা ভাইয়ের সাথে দেখা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কারাগারের নিয়ম কানুন খুব কঠিন। দেখা হয়নি। তার মোবাইল নম্বরও আমার কাছেদ নেই।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১২:৪৫
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×