somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কুশন
আলো –অন্ধকারে যাই- মাথার ভিতরে স্বপ্ন নয়,- কোন এক বোধ কাজ করে! স্বপ্ন নয়- শান্তি নয়-ভালোবাসা নয়, হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়! আমি তারে পারি না এড়াতে, সে আমার হাত রাখে হাতে; সব কাজ তুচ্ছ হয়,-পণ্ড মনে হয়। -জীবনানন্দ দাশ

আমাদের গ্রাম

০৮ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমাদের গ্রামে বেশ কয়েকটা ধনী পরিবার ছিলো। ধনী বলতে যাদের অনেক জমি ছিলো। নিজেদের বড় পুকুর বা দীঘি আছে। এবং পাকা বাড়ি আছে। দরিদ্রদের বাড়ি ছিলো বাঁশের বেড়া দিয়ে, উপরে টিন। সেই টিনের চালে বড় বড় ফুটো থাকতো। বৃষ্টির সময় ঘর পানি দিয়ে ভেসে যেত। পাটাতন ছিলো মাটির। কিছু দিন পরপর পুরো ঘর মাটি দিয়ে লেপটে দিতে হতো। আমাদের গ্রামে পুরুষ মানুষরা গোছল করতো নদীতে। আর নারীরা গোছল করতো স্কুলের পুকুরে। স্কুলের পুকুর সবার জন্য উন্মুক্ত ছিলো।

আমরা ভয়াবহ রকমের দরিদ্র ছিলাম। নিজেদের কোনো জমি ছিলো না। পুকুর ছিলো না। আমি বাবার সাথে নদীতে গোছল করতাম। মা গোছল করতো স্কুলের পুকুরে। বাবা আমাকে সাঁতার শিখিয়েছে বারাশিয়া নদীতে। একদিন বাবার হাত ধরে নদীতে গিয়েছি। বুক পর্যন্ত পানিতে নেমেছি। বাবা আমাকে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দিলো। আমি ডুবে যাচ্ছিলাম। মরে যাচ্ছিলাম। শেষ মুহুর্তে বাবা আমাকে টেনে তুললো। তারপর বাবা আমাকে শিখিয়েছে কিভাবে পানিতে ভেসে থাকতে হয়।

বাবা বাজার থেকে খুব কমই মাছ কিনে এনেছে। বছরের বেশির ভাগ সময়ই বাবার কাছে টাকা থাকতো না। এমন কি ঈদের সময়ও বাবার কাছে টাকা থাকতো না। আমাকে নতুন জামা কিনে দিতে পারতো না। কোনো ঈদেই নতুন জামা পড়তে পারি নাই। আমার বয়সী অনেকেই ঈদের দিন নতুন জামা পরতো। তাদের বাড়িতে নানা রকম মজাদার খাবার রান্না হতো। আমাদের বাড়িতে সারা বছর আউশ ধানের ভাত, সাথে আলু ভর্তা। সেই আলু ভর্তাতে বেশির ভাগ সময় শরিষার তেল থাকতো না।

আমরা মাংস খেতাম বছরে একবার। কোরবানীর ঈদের সময়। গ্রামের ধনী বাড়ি গুলোতে মস্ত বড় গরু জবাই হতো। তাঁরা আমাদের মাংস দিতো। সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই, তিন কেজির মতো মাংস হতো। মা একসাথে সব মাংস রান্না করতো। আমাদের তিন জনের সংসার। ঈদের দিন ইচ্ছা মতো বাবা আর আমি মাংস খেতাম। মা মাংস খুব একটা পছন্দ করতো না। রতন কাকা প্রতি বছর ঈদে পোলাউ আর সেমাই রান্না করে আমাদের বাসায় পাঠাতেন। শুনেছি রতন কাকা করোনায় মারা গেছেন গত বছর।

আমার বাবা দরিদ্র ছিলেন। কিন্তু একজন হৃদয়বান মানুষ ছিলেন। আমার দাদার সম্পদ ভালোই ছিলো। কিন্তু নদী সব খেয়ে নিয়েছে। শুনেছি আমাদের একটা পাটকল ছিলো। সেটাও নদী খেয়ে নিয়েছে। একদিন বাবাকে বলেছিলাম, বাবা বড় মাছ দিয়ে ভাত খেতে ইচ্ছা করে। বাবা করিম চাচার নৌকা নিয়ে মাঝ নদীতে গিয়ে আমার জন্য একটা বড় বোয়াল মাছ ধরে এনেছিলেন। সেই মাছের স্বাদ এখনও মুখে লেগে আছে। আমার মা ভালো রান্না জানতেন। সামান্য পেঁয়াজ মরিচ ঢলে ভর্তা বানাতেন। দারুন স্বাদ লাগতো খেতে।

প্রাইমারী স্কুলে পড়তাম। আমার কোনো স্কুলের ড্রেস ছিলো না। ছিলো না এক জোড়া জুতো। খালি পায়ে স্কুলে যেতাম। যে জামাটা পরে স্কুলে যেতাম সেটার আবার দুটা বোতাম ছিলো না। বই খাতা নিতাম হাতে করে। কারন স্কুল ব্যাগ ছিলো না। বৃষ্টির দিনে বই খাতা গুলো শার্টের ভেতরে নিয়ে দিতাম এক দৌড়। আমার শিক্ষকেরা আমাকে ভালোবনাসতেন। কারন তারাও আমাদের মতো দরিদ্র ছিলেন। লেখাপড়ায় আমি বেশ ভালো ছিলাম। আসলে আমি সব কিছুতেই ভালো ছিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১২:১৩
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×