somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কুশন
আলো –অন্ধকারে যাই- মাথার ভিতরে স্বপ্ন নয়,- কোন এক বোধ কাজ করে! স্বপ্ন নয়- শান্তি নয়-ভালোবাসা নয়, হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়! আমি তারে পারি না এড়াতে, সে আমার হাত রাখে হাতে; সব কাজ তুচ্ছ হয়,-পণ্ড মনে হয়। -জীবনানন্দ দাশ

গ্রামে ফিরে যেতে মন চাইছে

১৬ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমার বাবা ছিলেন প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক। বাবা যখন শিক্ষক ছিলেন তখন আমার জন্ম হয়নি। আমার জন্মের আগেই বাবা চাকরী ছাড়তে বাধ্য হোন। আমাদের গ্রামের চেয়ারম্যান হান্নান তালুকদার বাবাকে স্কুল থেকে ছাটাই করেছেন। চেয়ারম্যান হান্নান তালুকদারের ছেলে বার্ষিক পরীক্ষায় ফেল করেছিলো। চেয়ারম্যান বলেছিলো- তার ছেলেকে পাশ করিয়ে দিতে। বিনিময়ে সে বাবাকে দশ হাজার টাকা দিবে। বাবা বলেছিলো সেটা সম্ভব না। আমি একজন শিক্ষক মানুষ। আমি অসৎ হতে পারবো না। স্কুলের সভাপতি ছিলো চেয়ারম্যান। নিজের ক্ষমতার জোরে বাবাকে স্কুল থেকে অব্যহতি দেয়।

চেয়ারম্যান সাহেব বাবার নামে মিথ্যা চারটা মামলা দিলো। সেই মামলা লড়তে গিয়ে আমাদের জমিজমা সব গেলো। অবশ্য চেয়ারম্যান সাহেব মৃত্যুর আগে আমার বাবার পা ধরে ক্ষমা চেয়েছিলেন। গ্রামবাসী সেদিন বাবাকে বলেছিলো- ক্ষমা করে দিন চেয়ারম্যানকে। বেচারা মৃত্যুশয্যায়। আমার বাবা চেয়ারম্যানকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু আমাদের জমিজমা আর ফিরে আসে নি। আমার মা মারা যায় ভালো চিকিৎসার অভাবে। মাকে তো আর ফিরে পাওয়া সম্ভব না। আজ আমি অনেক টাকার মালিক। গ্রামে অনেক জমি আমি কিনে নিয়েছি। সেসব জমিতে অসহায় লোকজন চাষবাস করছে। তাঁরা খেয়েপরে বেঁচে আছে।

গ্রাম তো আর গ্রাম নেই। শহরের মতো হয়ে গেছে। আমাদের গ্রামে বিউটি পার্লার আছে। কমিউনিটি সেন্টার আছে। ইংলীশ মিডিয়াম স্কুল আছে। ফাস্ট ফুডের দোকান আছে। ব্যায়ামাগার আছে। ডিশের লাইন আছে। ইন্টারনেটের লাইন আছে। বাবা আমাকে প্রতি সপ্তাহে দুটা মেইল করেন। খুব বেশি দরকার হলো হোয়াটসঅ্যাপ করেন। বাবাকে বলেছি- আমেরিকা চলে আসো। আমার সাথে কিছু দিন থেকে যাও। বাবা বলেন, এই গ্রাম ছেড়ে আমি কোথাও যাবো না। অন্য কোথাও গেলে আমার ঘুম হবে না। এই গ্রামের সমস্ত গাছ আমার পরিচিত। সমস্ত পথ আমার পরিচিত। মানুষজন, জমি, পুকুর, খাল, খেলার মাঠ, স্কুল ঘর আমার আত্মার সাথে মিশে আছে।

গ্রামের অন্তত দশজন ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়েছেন আমার বাবা। নিয়মিত তাদের খোজ খবর নেন। প্রাইমারী স্কুলে পাকা টয়লেট করে দিয়েছেন বাবা। পাকা মসজিদ থেকে সালতা বাজার পর্যন্ত বাবা দুই শ' গাছ লাগিয়েছেন। সেসব গাছের যত্ন তিনি নিজে করেন। কবরস্থানের দেয়াল ভেঙ্গে পড়েছিলো বাবা সেটা মেরামত করে দিয়েছেন। মসজিদের জন্য আঠারটা ফ্যান দিয়েছেন। পূজোর সময় মন্দির কমিটিকে বড় অংকের টাকা দেন প্রতি বছর। আমি প্রচুর টাকা ইনকাম করি। তার সামান্য কিছু বাবাকে পাঠাই। তাতেই বাবা মহৎ কাজ করেন। আমি বাবাকে বলেছি, আরো টাকা লাগলে আমাকে বলবে।

আমি বাবাকে বলেছি ঢাকায় অন্তত একটা ফ্লাট কিনো। বাবা রাজি হননি। বলেছেন, গ্রামে আমাদের তিন তলা বাড়ি আছে। থাকার মানুষ নেই। বিশাল পুকুর। প্রতিমাসে একবার মাছ ধরে বিলিয়ে দেই। জমি থেকে যা ফসল আসে সেটাও নিই না। বহু বছর হয়ে গেলো গ্রামে যাই না আমি। বাবা খুব করে এবার আসতে বলছেন। আমারও গ্রামে যাওয়ার জন্য মনটা আকুপাকু করছে। অথচ এমন এক চাকরী করি হুট করে যাওয়া যায় না। অনেক বড় দায়িত্ব আমার হাতে। মাস গেলে অনেক গুলো ডলার আমার একাউন্টে ঢুকে যায়। বাবা যেমন গ্রামে অনেক কিছু করেছেন। আমিও আমেরিকাতে বাড়ি গাড়ি করেছি। ব্যাংকে প্রচুর টাকা জমেছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১:২০
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×