somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কুশন
আলো –অন্ধকারে যাই- মাথার ভিতরে স্বপ্ন নয়,- কোন এক বোধ কাজ করে! স্বপ্ন নয়- শান্তি নয়-ভালোবাসা নয়, হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়! আমি তারে পারি না এড়াতে, সে আমার হাত রাখে হাতে; সব কাজ তুচ্ছ হয়,-পণ্ড মনে হয়। -জীবনানন্দ দাশ

প্রবাসীর কষ্ট

২১ শে নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বিদেশে আসার পর বুঝতে পেরেছি, দেশ কি। নিজের দেশ! প্রবাসী হয়ে থাকা খুব কষ্টের। বারবার দেশের কথা মনে পড়ে। বুকের মধ্যে উথালপাথাল করে। দেশে থাকতে কখনও দেশ নিয়ে চিন্তা ভাবনা আসে নি মনে। বিদেশের মাটিতে পা রেখে বুঝলাম নিজের দেশ কি জিনিস। কি শান্তি। বাংলায় কথা বলতে না পেরে আমি ছটফট করি। আমার দম যেন বন্ধ হয়ে আসে। শুধু মাত্র বাংলায় কথা বলার জন্য ছুটে যাই, জ্যাকসন হাইটস। নিজ দেশের খাবার খাই। ফুটপাতে দাঁড়িয়ে চা খাই, গল্প করি। নিজের দেশের গল্প করি। বড় ভালো লাগে। পরবাসে নিজের দেশের গল্প করা অনেক আনন্দের। সদ্য কেউ দেশ থেকে আমেরিকা এলে তার কাছে ছুটে যাই। যেন সে আমার আপন আত্মীয়। তার কাছ থেকে জেনে নিই দেশের কথা। আমেরিকাতে বাংলাদেশের কারো সাথে দেখা হলে আমি তাকে জড়িয়ে ধরি।
বাংলাদেশ নিয়ে একবার আমরা একটা অনুষ্ঠান করে আমেরিকানদের মাথা নষ্ট করে দিয়েছিলাম।

দেশে থাকলে দেশ নিয়ে এত চিন্তা হয় না। এত চিন্তা আসেও না। বিদেশে আসার পর দেশ নিয়ে চিন্তাভাবনা আসে। খারাপ সংবাদ শুনলে অস্থির হয়ে যাই। ভালো সংবাদ শুনলে বন্ধুবান্ধব মিলে পার্টি দেই। বিয়ার খাই। দেশে বাঙ্গালীরা মিলেমিশে না থাকলেও বিদেশের মাটিতে মিলেমিশে থাকে। সপ্তাহ শেষে কারো না কারো বাসায় অনুষ্ঠান থাকেই। সবাই মিলে আনন্দ করি। খাই। মজা করি। কখনও কখনও দূরে পিকনিক করি। বড় ভালো লাগে। বিদেশে বসে ভাবি কেন আমাদের দেশটা বিদেশের মতো হলো না। কেন আমাদের দেশের মানুষ গুলো খারাপ। লোভী। মিথ্যাবাদী, প্রতারক আর ভন্ড। ৭১ সালেও দেশের সব মানুষ এক হতে পারেনি। কেউ কেউ আড়ালে চেয়েছিলো পাকিস্তানই থাকুক। তাদের জয় হোক। আজকাল দেশের অবস্থা এতটাই খারাপ হয়েছে যে নিজের দেশে খেলা হলেও নিজের দেশকে সাপোর্ট করে না। সাপোর্ট করে পাকিস্তানকে। পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে উল্লাস করে।

প্রবাসীরা জ্ঞানীগুণীরা দেশ নিয়ে অনেক আলাপ করে। তাদের আলাপ আলোচনা আমি মন দিয়ে শুনি। বুঝতে চেষ্টা করি। বেশির ভাগ প্রবাসীরা মনে করে- দেশের সর্বনাশের পেছনে দায়ী পুলিশ, সরকারী আমলা এবং রাজনীতিবিদরা। পুলিশ ঘুষ ছাড়া কিচ্ছু বুঝে না। তাদের আচরন দেখলে মনে হয়- ঘুষ খাওয়ার জন্যই তাঁরা পুলিশে জয়েন করেছে। অবশ্য পুলিশে চাকরির জন্য, পদন্নোতির জন্য, ভালো জাগায় পোষ্টিং এঁর জন্য পুলিশকেও ঘুষ দিতে হয়। সামান্য ফুটপাত থেকে পুলিশ নিয়মিত টাকা তোলে। আসামী ধরা পড়লেও টাকার বিনিময়ে তাকে ছেড়ে দেয়। সমস্ত অন্যায় কাজই পুলিশ করে। আমাদের গ্রামে দেখেছি, একলোক সীমাহীন টাকার মালিক। কালো টাকা। প্রতিদিন পাঁচ জন পুলিশ সারারাত তার বাড়িতে গার্ড দেয়। অথচ সে কোনো মন্ত্রী, এমপি বা বড় সরকারী কর্মকর্তা না। পুলিশ জনগনের বন্ধু না। পুলিশ দুষ্টলোকদের বন্ধু। দেশের এই অবস্থার জন্য পুলিশ অনেকখানি দায়ী। পুলিশ সৎ হলে দেশ বদলে যেতো।

পুলিশের মতো সরকারী আমলারাও ঘুষ ছাড়া কিছু বুঝে না। বাংলাদেশে এমন কোনো সরকারী দফতর আছে যেখানে ঘুষ লাগে না? এই ঘুষ লেনদেন বন্ধ হলে দেশের অনেক সমস্যার সমাধান এমতেই হয়ে যেত। সিটি করপোরেশনের অফিস গুলোও ঘুষের আড্ডাখানা। সামান্য একটা ট্রেড লাইসেন্স করাতেও ঘুষ দিতে হয়। সরকারী অফিসের বিজ্ঞাপন পত্রিকায় ছাপানোর জন্য ঘুষ দিতে হয়। রাজনীতিবিদদের লন্ডন, আমেরিকা, কানাডা আর মালোশিয়াতে বাড়ি আছে। এই বাড়ির নাম দিয়েছে তাঁরা সেকেন্ড হোম। দেশের টাকা দিয়ে বিদেশে বাড়ি করে। অন্যায় ভাবে। অসৎ ভাবে। দুদক এসব দেখে না। দুদকও ঘুষ খায়। তাদের বাড়িতে চলে যায় ঘুষের টাকা। কোরবানীর ঈদের সময় চলে যায় আস্তো গরু। জামা কাপড়। পাঁচ তাঁরা হোটেলের খাবার। দুদক চাইলে অসৎ লোকদের ধরা কোনো ব্যাপারই না। বরং দুদক অসৎ লোকদের ভরসা দেয়। সাপোর্ট দেয়।

আমাদের গ্রামের হাই স্কুলের পিয়নের চাকরী পেতে আট লাখ টাকা লেগেছে। দাড়োয়ানের চাকরির জন্য লেগেছে ছয় লাখ টাকা। হাজার হোক সরকারী স্কুল। আমাদের গ্রামের এক ছেলে প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকরী করে। সে এখন সরকারী চাকরির জন্য পনের লাখ টাকা নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। জমি বিক্রি করেছে। ধারধেনা করেছে। প্রাইভেট চাকরির নিশ্চিয়তা নেই। যে করেই হোক সরকারী চাকরী পেতেই হবে। উকিলরা টাকা খেয়ে ভালো মানুষকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। দোষী লোককে ফুলের মালা দিয়ে বরন করে। জজরাও ঘুষ খায়। সব কিছু মিলিয়ে বলা যেতে পারে বাংলাদেশে কোনো সৎ মানুষ নেই। বাংলাদেশ হলো খারাপ মানুষের দেশ। বাংলাদেশে যারা কারাগারে আছে তাদের যদি প্রচুর টাকা থাকতো তাহলে তাদের কারাগারে থাকতে হতো না। কারাগার হলো দরিদ্র লোকদের জন্য। ধনীরা অপরাধ করে কিন্তু তাদের কারাগারে যেতে হয় না।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:৫৬
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×