সিলভার বিপ্লব সম্পর্কে বাংলাদেশের কত পারসেন্ট মানুষের আইডিয়া আছে তা তর্কসাপেক্ষ। বাংলাদেশ ব্যাংকের এসিস্ট্যান্ট ডাইরেক্টর পরীক্ষার প্রিলিমিনারিতে সিলভার বিপ্লব কোন দেশে ঘটে এই প্রশ্ন অনেকের মাথা খারাপ করে দিয়েছিল। সবার মনে প্রশ্ন এত বিপ্লব নিয়ে পড়েছি মাইরি কিন্তু সিলভার বিপ্লব কি তা বইতে ছিলো না। কোন চিপা-চাপা থেকে প্রশ্ন করে পড়তে পড়তে জীবন শেষ এমন ধরণের হতাশা ছিলো সবার মধ্যে!
সিলভার বিপ্লব মূলত ভারতে চলেছিলো ১৯৬৯-১৯৭৮ সন ধরে । ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন এই বিপ্লবের কান্ডারী। মূলত সিলভার বিপ্লব পোল্ট্রি ইন্ড্রাষ্টির সাথে জড়িত। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিম উৎপাদন বহুগুণে বাড়ানো ছিলো সিলভার বিপ্লবের প্রধান লক্ষ্য। জুলাই বিপ্লবের পর হঠাৎ ডিম বিপ্লব শুরু হয় বাংলাদেশে। তবে ভারতের ডিম বিপ্লব ও বাংলাদেশের ডিম বিপ্লবের প্রধান উপাদান ডিম হলেও প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন!
জুলাই অভ্যুত্থানে পলাতক আওয়ামী লীগের অনেক হেভিওয়েট নেতা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। তাদের আদালতে হাজিরার সময় বাংলাদেশের বিচারালয়ে এক অভূতপূর্ব ঘটনা দেখা যায়। শয়ে শয়ে ডিম ছোড়া হচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতাদের লক্ষ্য করে। এই মহৎ কাজে অংশ নিয়েছিলেন বিএনপি-জামাতের আইনজীবীরা। ফলে বাজারে ডিমের সংকট দেখা দেয় এবং ডিমের ডজন ১৬০-১৭০ টাকা পর্যন্ত উঠে। সর্বশেষ এই ডিম বিপ্লব ঘটে সুপ্রীম কোটের একজন বিচারপতির উপর! বাংলাদেশের ন্যায় বিচারের সবশেষ আশ্রয় স্থল সুপ্রীম কোটে এমন বিপ্লবের ফলে হতবাক হয়ে যান সবাই। সবত্র চলতে থাকে সমালোচনা। কতিপয় আইনজীবী কিভাবে একজন বিচারপতির উপর ডিম বিপ্লব ঘটাতে পারেন সে প্রশ্ন সবার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। ডিম বিপ্লবের ভ্রূণ জন্ম নেয় ২০১৭ সালে একটি সংবিধান সংশোধনী বাতিল কে কেন্দ্র করে। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৪ সালে সংবিধানে ষোড়শ সংশোধনী আনে যেখানে বিচারপতিকে অপসারণের ক্ষমতা সংসদের উপর ন্যস্ত করা হয়। কিন্তু ২০১৭ সালে এই সংশোধনী বাতিল করেন বিচারপতি এস কে সিনহার বেঞ্চ ! এতে সিনহা সাহেব আওয়ামী লীগের রোষানলে পড়ে দেশত্যাগে বাধ্য হন। আওয়ামী লীগের একজন ক্রিমিনাল নেতা ফজলে নূর তাপস গর্ব করে বলেছিলেন, আমরা একজন বিচারপতিকে নামায়ে দিয়েছিলাম......। এতে আদালতের জন্য প্রচন্ড খারাপ নজির সৃষ্টি হয়েছিলো। তার প্রেক্ষিতে জুলাই অভ্যুত্থানের পর আদালত প্রাঙ্গনে ডিম বিপ্লব শুরু হয় যার সর্বশেষ শিকার সুপ্রীম কোটের বিচারক। মহামান্য বিচারকের উপর যারা ডিম বিপ্লব ঘটিয়েছেন তারা সবাই জিয়ার সৈনিক কাম আইনজীবী। জিয়ানুভূতিতে আঘাত আনার অভিযোগে আইনজীবীরা এহেন বিপ্লব করেছেন বলে দাবী করেছে। কি ঝামেলা হয়েছিল জিয়ার সৈনিক কাম আইনজীবী ও বিচারকের মধ্যে যার কারণে তারা ডিম বিপ্লব ঘটাতে বাধ্য হন?
সুপ্রীম কোর্টে ষোড়শ সংশোধনীর পূর্ণাঙ্গ রায় কে কেন্দ্র করে এই ঘটনার সূত্রপাত হয়। আসাদুজ্জামান বনাম বাংলাদেশ শীর্ষক এ মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিচারপতি আশরাফুল কামাল বাংলায় দেওয়া তাঁর রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বাকবাকুম করে ক্ষমতা নিয়ে নিলেন, তথা রাষ্ট্রপতির পদ দখল করলেন। একবারও ভাবলেন না, তিনি একজন সরকারি কর্মচারী। সরকারি কর্মচারী হয়ে কীভাবে তিনি আর্মি রুলস ভঙ্গ করেন। ভাবলেন না তাঁর শপথের কথা। ভাবলেন না তিনি দেশকে রক্ষা করতে প্রয়োজনে মৃত্যুকে বরণ করার শপথ নিয়েছিলেন।’ তিনি আরও কিছু মন্তব্য করেছেন, যা একজন বিচারক হিসেবে করতে পারেন কি না, তা নিয়ে অভিযোগ তুলেছে জিয়ার সৈনিকেরা !
সুপ্রীম কোর্টে বিচারকদের উদ্দেশ্যে ডিম বিপ্লব হওয়ার জন্য আদালত পাড়া থেকে প্রধান বিচারপতি ও আইন উপদেষ্টার দিকে অভিযোগের তীর উঠানো হয়। জুলাই অভ্যুত্থানের পর অন্তত দুইবার ছাত্রদের আন্দোলনের ফলে সুপ্রীম কোটের বিচারকদের দালাল উপাধি দিয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। তখন যদি যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হতো তবে সুপ্রীম কোটের বিচারকের উপর ডিম বিপ্লব ঘটানোর চেষ্টা কেউ করতো না। দীর্ঘদিন পর প্রধান বিচারপতির নজরে আসে এই বিপ্লব। এই ধরণের কোন বিপ্লব যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে তার জন্য তিনি যথাযথ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
ডিম বিপ্লব কি তবে ব্যর্থ হয়ে যাবে? জিয়ার সৈনিকেরা কি তবে কোন মেডেল পাবেন না? তবে এই কথা সবার মনে রাখতে হবে, জিয়ার সৈনিকদের মাধ্যমে শুরু হওয়া ডিম বিপ্লব ভবিষ্যতে আবার শুরু করা হবে ! তখন শুধু সৈনিকেরা চেঞ্জ হবেন কিন্তু বিপ্লব একই ভাবে ঘটবে।