
কোথাও কেউ নেই -হূমায়ন আহমেদের খুবই জনপ্রিয় একটি ধারাবাহিক নাটক ৯০ এর দশকে বিটিভিতে প্রচারিত হতো। ২০২৪ সালে এই কথাটি যাদের জন্য বেশি প্রযোজ্য তারা হলেন শিক্ষক সমাজ! কোন দেশের শিক্ষক যদি পদে পদে অপমান হন সে দেশের শিক্ষার্থী ও তরুণ সমাজ ধ্বংস হবে এটাই স্বাভাবিক। শিক্ষকদের প্রতি ছাত্র-ছাত্রীদের সম্মান ও শ্রদ্ধা ভবিষ্যতে মিউজিয়ামে গিয়ে দেখতে হতে পারে। শিক্ষকতা পেশায় যেদিন থেকে দুর্বৃত্ত ঢুকে গিয়েছে সেদিন থেকে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের দালাল উপাধি দেয়া শুরু করেছে। অসৎ শিক্ষক অপরাধ করেও টাকা ও ক্ষমতার জোরে পার পেয়ে যান কিন্তু সৎ শিক্ষক ফেঁসে যান। বাংলাদেশের সমাজে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হওয়া ব্যক্তিদের সন্তানেরা শিক্ষক দের চাকর মনে করে থাকেন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমন ধারণা চলে এসেছে যে, আমার টাকায় স্যারের পেট চলে তাই আমি যা বলবো তাই স্যার কে মানিয়া লইতে হইবে। স্কুল ও কলেজ গুলোতে শিক্ষকেরা দলাদলি না করলে নিজের বেসিক রাইটস গুলো ঠিকমতো পান না। এছাড়া স্কুল- কলেজ-মাদরাসার মালিক ও সভাপতির ক্ষমতাবলে শিক্ষকদের দিয়ে যে কোন ধরণের কাজ করাতে বাধ্য করা হয়। এতে না চাইতেও শিক্ষকেরা মানসিক নিপীড়ন থেকে রক্ষা পেতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত হন। আবার কেউ কেউ রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে শিক্ষকেরা নিজেরাই নিপীড়ক বনে যান।
চট্টগ্রামের হাজেরা তজু ডিগ্রী কলেজের শিক্ষকদের যেব দুর্দশা কাটছেই না। জুলাই অভ্যুত্থানের পর বৈষম্য বিরোধী দলের নাম ভাঙিয়ে কিছু বখাটে ছেলে হাসিনা সরকারের দালাল উপাধি দিয়ে চারজন শিক্ষক কে জোর করে পদত্যাগ করায়। তাদের মধ্যে একজন শিক্ষক অপমান সইতে না পেরে মারা যান। এখানেই কলেজের শিক্ষকদের দুর্দশা শেষ হয়নি। এবার ৮ জন শিক্ষক কে জোর করে পদত্যাগ করানোর অভিযোগ তুলেছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকদের বহিস্কার আদেশ বাতিল করতে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত থাকার জন্য আটজন শিক্ষক কে বহিস্কার করা হয়েছে। কলেজের প্রতিষ্ঠাতা নুরুল হক বিএসসির ছেলে মুজিবুর রহমান কলেজের সভাপতিকে ইন্ধন দিয়ে কাজটি করিয়েছেন। আন্দোলনের পক্ষে থাকাও বিপদ, বিপক্ষে থাকাও বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বর্তমানে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি কে পদত্যাগ করানোর পিছনে বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা বেশ সোচ্চার ছিলেন। তাদের তীব্র চাপে অবশেষে ভিসি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। আবার ফেনীর পরশুরামে এক মাদরাসার অধ্যক্ষ কে জোর করে পদত্যাগ করানোর বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। তাদের মাদরাসার অধ্যক্ষ সভাপতি সাহবের কথা মতো কাজ না করতে চাওয়ায় অধ্যক্ষ কে জোর করে পদত্যাগ করানো হয়।
প্রতিদিন এমন সব কষ্টদায়ক ঘটনা ঘটছে দেখে দেশে প্রায়শই মনে হয় বর্তমান সমাজে সব চেয়ে অসম্মানজনক পেশা শিক্ষকতা করা! মানস্মমান ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা প্রতিনিয়ত সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। কিন্তু তাদের সমস্যা নিয়ে ভাবার জন্য -কোথাও কেউ নেই৷!
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ২:৪২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



