
শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে বিচারের জন্য ভারতের কাছে ফেরত চাইতে হলে অবশ্যই বাংলাদেশকে প্রতিহিংসামূলক বিচারপদ্ধতি বাদ দিতে হবে। বিচারে শেখ হাসিনা যাতে ন্যায় বিচার পান বাংলাদেশকে আগে তা নিশ্চয়তা দিতে হবে এমনটাই মনে করেন ভারতের আইনজীবী বিশেষজ্ঞরা ।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC)'র প্রধান কৌসুলি ও প্রখ্যাত আইনজীবী করিম এ এ খান বাংলাদেশ ভ্রমণকালে ড.ইউনূসের সাথে সাক্ষাৎ করেন। জুলাই-আগস্টের যারা আন্তর্জাতিক অপরাধ ঘটিয়েছে সেই অভিযুক্ত অপরাধীদের তদন্ত শুরু করার জন্য আহবান জানিয়েছেন। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালকে করিম এ এ খান ICC 'র পক্ষ থেকে সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছেন। প্রশ্ন হলো বাংলাদেশে বিদ্যমান আইসিটিবিডি আইন থাকা সত্ত্বেও কেন ইউনূস সরকার আইসিসিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে একটি সমান্তরাল বা পৃথক তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করার ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন? বাংলাদেশ সরকার কি আইসিটিবিডি তে শেখ হাসিনার ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে এবং আইসিটি বিডিতে বিচার হলে তা আন্তর্জাতিক ভাবে গ্রহন যোগ্য হবে কিনা তা শঙ্কায় আছেন?
ভারতের আইনজীবী বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভারত সরকার বাংলাদেশের হাতে শেখ হাসিনাকে ফেরত দিবে কিনা তা মূলত নির্ভর করছে আইসিটিবিডির মাধ্যমে বিচারকাজ পরিচালনা করলে ভারত সরকার তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠাতে পারে সেক্ষেত্রে ভারত শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করবে না।
ভারতের আইনজীবীরা আরো বলেছেন, আইসিটিবিডিতে বিচারের মূল ভিত্তি হলো ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশে জাতীয় সংসদে পাশ হওয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালস আইন - যার প্রধান লক্ষ্য ছিলো একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত বিচার। সে সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ সংজ্ঞায়িত আইনের উদাহরণ ছিলো দুইটি : ন্যুরেনবার্গ ট্রাইবুনাল ও টোকিও ট্রাইবুনালের সনদ। কিন্তু বিগত ৫০ বছরে মানবতা বিরোধী অপরাধের তালিকা অনেক বেশি সম্প্রসারিত ও পরিমার্জিত হয়েছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সমর্থিত দুইটি আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল রুয়ান্ডা ও যুগোস্লাভিয়ার গণহত্যার বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইবুনালে যে রায় দেয়া হয়েছে তাতে মানবতা বিরোধী অপরাধের সংজ্ঞা অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এখন সেগুলোকে বিবেচনায় না নিয়ে যদি আইসিটিবিডি ১৯৭৩ সালের আইনের ভিত্তিতে তদন্ত ও বিচার চালানো হয় তাহলে আন্তর্জাতিক ভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না।
ভারতের আইনজীবীরা আইসিটিবিডি রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। ট্রাইবুনালের প্রধান কৌসুলি তাজুল ইসলাম রাজনৈতিক দল জামাত ঘনিষ্ঠ বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি জামাতের অভিযুক্ত নেতাদের পক্ষের আইনজীবী ছিলেন ফলে সরকারে প্রধান চীফ প্রসিকিউটরের পক্ষে নিরপেক্ষ থাকা বেশ কঠিন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর বড়ো সমস্যা হলো বিচার প্রক্রিয়া কে প্রভাবিত করার জন্য নিজেদের পছন্দের লোক নিয়োগ দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চিন্তায় মত্ত থাকে। বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হচ্ছে কিনা, আন্তর্জাতিক ভাবে গ্রহণযোগ্য হবে কিনা তার কোন মাথাব্যথা নাই। ভবিষ্যতে ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার সকল আসামীর মতো জুলাই-আগস্ট হত্যার সকল আসামী খালাশ পেয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও ন্যায়বিচার যে অধরাই থেকে যাচ্ছে!
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



