
এই ঘটনা আমার নানার বাড়িতে টং দোকানে বসে ভুক্তভোগীর আত্নীয়ের কাছ থেকে শোনা। আমাদের দেশে সরকারি চাকুরিতে কিভাবে নিয়োগ হয় এবং কাদের সুপারিশ ছাড়া সরকারি চাকুরি হয় না তা জানা যাবে এই ঘটনা পড়লে। এছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা কিভাবে তাদের নিজ দলের কর্মীদের বঞ্চিত করে লেনদেনের বিনিময়ে অন্য মতাদর্শের কর্মীদের চাকুরি পেতে সহায়তা করেন তাও জানা যাবে। মূলত বড়ো দুইটি রাজনৈতিক দলের নেতারা এই কাজ করে থাকেন।
২০১৮ সালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃপক্ষের পিয়ন পদে সারকুলার হয়। রাজউক এবং সিডিএ তে চাকুরি যেন সোনার হরিণ। কারণ সেখানে এক্সট্রা ইনকামের সুযোগ আছে। ডবলমুরিঙ থাবার আওয়ামী লীগের এক কট্টোর সমর্থক নিজাম পিয়ন পদে চাকুরির জন্য দৌড়ঝাপ শুরু করে। পরীক্ষা দেয় এবং মৌখিক পরীক্ষার জন্য সিলেক্ট হয়। যেহেতু নিজাম পলিটিক্স করে সে একটি সূত্রে খবর পায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃপক্ষের এক বোর্ড মেম্বার হাটহাজারী এলাকার একজন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা। সাধারণত কোন রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকলে তাদের লোকজন সব প্রতিষ্ঠানের পদ-পদবী দখল নেন। এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক কালচারে পরিণত হয়েছে। নিজাম প্রথমে তার রাজনৈতিক দলের বড়ো ভাইদের সহায়তায় এক আওয়ামী লীগের এমপির কাছে যায় যাতে লবিং করে তার চাকুরি হয়। এমপি সাহেব নিজাম কে আশ্বাস দেন যে তিনি চেষ্টা করবেন কিন্তু রাজনৈতিক দলের নেতারা ভোটের আগেও এমন আশ্বাস দেন সাধারণ জনগণকে। তাই কোন ধরণের কাজ হয় নি। নিজাম তখন সিডিএ'র সদস্যের সাথে বড়ো ভাইদের কানেকশনে দেখা করে মৌখিক পরীক্ষায় পাশ করার জন্য অনুরোধ জানায়। সিডিএ'র মেম্বার নিজাম কে আশ্বাস দেয় তিনি নিজাম কে চাকুরি পেতে সহায়তা করবেন। তবে কিছু খরচাপাতির ব্যবস্থা করতে হবে।
নিজাম একটু সময় নিয়ে এলাকার স্থানীয় অনেক বড়ো ভাইদের সাথে কথা বলে তিন লাখ টাকা জোগাড় করতে সক্ষম হয়। নিজাম নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে এবং ত্যাগী ছাত্রলীগের কর্মী ছিলো। সে ধান্দা করে তেমন টাকা কামাতে পারেনি। নিজাম তার জোগাড় করা টাকার খবর জানাতে সিডিএ'র মেম্বারের বাসায় যায়। যাওয়ার সময় ১৫ হাজার টাকা খরচ করে ৮/১০ পদের মাছ নিয়ে যায় যাতে সিডিএ'র মেম্বার সে আওয়ামী লীগ নেতা তার প্রতি ভালো মনোভাব রাখেন। যথারীতি সিডিএ'র মেম্বার নিজাম কে নিজ দলের কর্মী বলে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানায়। তিনি আরো জানান নিজামের জন্য সুপারিশ করবেন যাতে তার চাকুরি হয়। নিজাম তার যোগাড় করা টাকার পরিমাণ মেম্বারকে জানান । সিডিএ'র মেম্বার নিজামের চাকুরি ৯০ ভাগ কনফার্ম বলে জানান। নিজাম বাড়ি চলে আসে
মৌখিক পরীক্ষা শেষে রেজাল্ট বের হয় কিন্তু নিজাম সিলেক্ট হয় না। এতে নিজামের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। সে বড়ো ভাইদের কাছে গিয়ে এর কারণ জানতে চায়। বড়ো ভাইয়েরা ও খুব অবাক হয়েছিল যে এত তদবীরের পরও নিজামের কেন চাকুরি হলো না। পরে নিজেদের সোর্স ব্যবহার করে নিজামের এক রাজনৈতিক দলের বড়োভাই তাকে জানায়, সিডিএ'র মেম্বার ৮ লাখ টাকার বিনিময়ে অন্য একটি বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মীর জন্য সুপারিশ করেন। যে ছেলেটা চাকুরি পেয়েছে তার বড়ো ভাই নিজামের রাজনৈতিক দলের বড়ো ভাইকে বলেছে যে তারা সিডিএ'র সেই মেম্বারের কাছ থেকে শতভাগ গ্যারান্টি পেয়েছিল যে চাকুরি তার ছোট ভাই পাবেই। নিজাম হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে পড়ে এবং এলাকা ছেড়ে দেয়। সে ছাত্রলীগের সকল কার্যক্রম থেকে অব্যহতি নেয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৮:২৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



