
জুলাই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে অতিষ্ঠ হয়ে জনগণ ছাত্রদের ডাকে রাস্তায় নেমে আসে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটায়। অবশ্য বাংলাদেশের সেনাবাহিনী এই অভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ড. ইউনূস কে প্রধান উপদেষ্টা করে একটি টেম্পোরারি সরকার গঠিত হয় ছাত্র-জনতার সমন্বয়ে। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিলো এই সরকার শেখ হাসিনার আমলের অনিয়মগুলো বন্ধ করে দেশকে মোটামুটি স্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে আসতে পারবে। মোটা দাগে ভালো মন্দ মিলিয়ে সরকার দেশ পরিচালনা করতে থাকে। তবে মূল্যস্ফীতি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের সাফল্য আপ টু দি মার্ক ছিলো না। সরকারকে পুরোপুরি দোষ দেওয়া যায় না মূল্যস্ফীতি কেন আশানুরূপ ভাবে কমাতে পারছে না তার জন্য কারণ বিগত শেখ হাসিনার আমলে মূল্যস্ফীতি অতীতের চেয়ে অনেক বেশি ছিলো। একদিকে ঋণ পরিশোধের চাপ অন্যদিকে সাধারণ জনগণের আয় না বাড়াতে খাধ্যের দাম মানুষের নাগালের বাইরে ছিলো অনেকদিন আগে থেকেই। নতুন সরকার শুল্ক মুক্ত সহ নানা পদক্ষেপ নিয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করলেও খাদ্য পণ্যের দাম কমাতে পারেনি। কারণ সিন্ডিকেট সরকারের গৃহীত পদক্ষেপকে ব্যর্থ করতে নানাভাবে চক্রান্ত করে।
নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শাকসবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে আসা শুরু করে। বাজারে সরবরাহ বেড়ে যায়। এতে সাধারণ জনগণ ম জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম দৃশ্যমান সুফল পেতে শুরু করে। কিন্তু সরকারের ঘোষিত ভ্যাট বৃদ্ধির কারণে জনগণ ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ জাগ্রত হয়। সরকার রেস্টুরেন্ট, পোশাক, এয়ারলাইন্সের টিকিট সহ ৪৩ টি পণ্যে ৫ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সরকারের অর্থ উপদেষ্টার কাছে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের মাঝামাঝি হঠাৎ করে ভ্যাট বাড়ানোর কারণ জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, মূলত আইএমএফের পরামর্শে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। বাইরের দেশ থেকে ঋণ সহায়তা কমানোর জন্য সরকার এই কাজ করেছে। অর্থ উপদেষ্টা মনে করেন এতে জনসাধারণের তেমন কষ্ট হবে না। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন ভ্যাট দেয়া সবার জন্য বাধ্যতামূলক না হওয়ায় একই ইন্ড্রাষ্টির বিভিন্ন প্রতিযোগীর মধ্যে বৈষম্য দেখা দিবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন দেশের এই উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে সরকারের এমন সিদ্ধান্ত জনগণের উপর আরো চাপ বাড়বে। যদি মূল্যস্ফীতি কম থাকতো তখন এই ধরণের ভ্যাট বাড়ানোর পদক্ষেপ জনগণের উপর তেমন প্রভাব ফেলতো না। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য ভ্যাট বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে। সরাসরি কর আদায় করা সরকারের জন্য কঠিন কাজ তাই পরোক্ষ করের মাধ্যমে তা আদায়ের চেষ্টা চলছে। সরকার খুব সম্ভবত খুব বেশি বৈদেশিক ঋণের ব্যবস্থা করতে পারছে না। তাই নিরুপায় হয়ে ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত সরকার নিতে বাধ্য হয়েছে।
বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের একটি বড়ো অংশ সরকারি কর্মকর্তাদের পিছনে ব্যয় হয়। সরকারি কর্মকর্তাদের মহার্ঘ ভাতা বাড়ানোর কথা রয়েছে। শেখ হাসিনা তার শাসনামলের শেষ সময়ে সরকারি কর্মকর্তাদের খরচ কমাতে সার্বজনীন পেনশন সিস্টেম চালু করার কথা চিন্তা করেছিলেন। কারণ বাজেটের তিনভাগের একভাগ ব্যয় হয় সরকারি চাকুরিজীবীদের জন্য সুযোগ সুবিধা দিতে। এতে সরকারের বাজেটের উপর মারাত্মক চাপ বাড়ে। এখন নতুন সরকার যদি সার্বজনীন পেনশন আবার চালু করে তবে নতুন সরকারি চাকুরিজীবীদের সুযোগ সুবিধার জন্য বাজেটে অর্থ কম বরাদ্দ করতে হবে। এতে বাজেটে অন্যখাতগুলোতে বেশি বরাদ্দ দিতে পারবে সরকার।
বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে স্বস্তিতে নেই সরকার। একদিকে অনেক লোক বিভিন্ন কারণে জুলাই অভ্যুত্থানের পর চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির মতো কাজে জড়িয়ে পড়ছে । এখন যদি খাদ্য পণ্যের দাম আরো বাড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরো অবনতি হতে পারে। সরকারের উচিত ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত পুনরায় বিবেচনা করা। এতে সকলের মধ্যে মঙ্গল নিহিত রয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১১:১৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



