
ড.ইউনূসের নেতৃত্বাধীন ইন্টেরিম সরকার জুলাই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতার দায়িত্ব নিয়েছে। এটি কোন রাজনৈতিক দলের সরকার নয়। বাংলাদেশের বৃহৎ দুইটি রাজনৈতিক দল দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রতিপক্ষকে দমনের উদ্দেশ্যে এবং নিজেদের লোকজনকে সেইফ রাখতে তারা সবসময় আইনকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু ইন্টেরিম সরকার কোন রাজনৈতিক দলের পরিচালিত সরকার নয়। তাই ইন্টেরিম সরকারের আমলে আইন ও আদালতে স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া ও সুষ্ঠু বিচার দেশের সকল মানুষ প্রত্যাশা করে। কিন্তু ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ইন্টেরিম সরকার কে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার প্রতি তেমন আগ্রহী মনে হচ্ছে না। বিগত কয়েকটি মামলার রায় জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক।
সমস্যা শুরু হয়েছিলো আন্তর্জাতিক দ্রুত অপরাধ ট্রাইবুনাল ও এটর্নী জেনারেল নিয়োগ দেয়ার পর থেকেই। চীফ প্রসিকিউটর ও এটর্নী জেনারেল দুইজন দুইটি রাজনৈতিক দলের সুপারিশে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিত্ব। আন্তর্জাতিক দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আর সেই আদালতের চীফ প্রসিকিউটর যদি বিরোধী রাজনৈতিক দলের সমর্থিত কেউ হন তবে স্বচ্ছ বিচার প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হবে। অন্যদিকে এটর্নী জেনারেল হিসাবে অন্য একটি রাজনৈতিক দলের সমর্থিত লোক নিয়োগ পাওয়া ও রাজনৈতিক দলগুলোর আইন-আদালতে প্রভাব বিস্তার করে কতিপয় বিতর্কিত মামলা থেকে অভিযুক্তদের গণহারে খালাস করে দেয়ার কারণে ইন্টেরিম সরকারের নিরপেক্ষ ইমেজ ভীষণ ভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হলো। দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় কাউকে সাজা না দেয়া, ২১ শে আগস্ট সআবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর গ্রেনেড হামলার বিচারে সবাইকে বেকসুর খালাস দেয়াকে কোনভাবেই সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা বলা চলে না। এসব মামলাকে একটি রাজনৈতিক দল আগে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করতো এখন ইন্টেরিম সরকারের আমলেও রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রভাব খাটিয়ে নিজেদের লোকদের মুক্ত করছে।
আজ আলোচিত মডেল তিন্নী হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে। প্রধান অভিযুক্ত গোলাম ফারুক অভি কে অভিযোগ থেকে খালাস দেয়া হয়েছে। তিন্নী হত্যা সংঘটিত হয়েছিল ২০০২ সালে। আজকে ২২ বছর পর নানা নাটকীয়তা শেষে রায় দেয়া হলো। অভির বিরুদ্ধে ২০০২ সালে মডেল তিন্নী হত্যার সাথে জড়িত থাকার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। অভি ঢাবিতে পড়ার সময় একটি রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের সদস্য ছিলো। ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে বরিশাল-২ আসনের এমপি হয়েছিল। ২০০২ সালে অভির নাম যখন হত্যাকান্ডের সাথে জড়িয়ে পড়ে তখন তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের যোগসাজশে অভি আত্নগোপনে চলে যায়। তিন্নীর বাবা জানতেন না যে আজকে রায় হবে। অর্থাৎ ভুক্তভোগীর অভিভাবকের আদালতে থাকার প্রয়োজনীয়তা কেউ মনে করেনি। তিন্নীকে হত্যা কে করেছিলো তাহলে? অভিযুক্ত বিদেশে কি করে যদি সে জড়িত না থাকে? এসব কথা বলতে বলতে তিন্নীর বাবা হতাশ হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে তিন্নীর কাছে মাফ চান। তার নিজের পক্ষে অথবা পরিবারের কারো পক্ষে এখন আর ইনসাফের জন্য লড়াই করা সম্ভব নয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠনের নেতারা মুখে মুখে ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ গঠনের কথা বললেও উপরের ঘটিত অসংগতি নিয়ে তেমন সোচ্চার নয়। তারা এখন জুলাই অভ্যুত্থানের প্রক্লেমেশন, স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে বেশি মাথা ঘামাচ্ছে। তাদের একটি রাজনৈতিক প্লাটফর্ম নাগরিক কমিটিও এসব ঘটনা নিয়ে নীরব। এ যেন চিরাচরিত বাংলাদেশের রাজনৈতিক কালচার। সবাই যার যার স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হোক এই ব্যাপারে কারো চিন্তা নেই। প্রতিটি রাজনৈতিক দল কেবল নিজের দলের কর্মীদের ইনসাফ প্রাপ্তির অধিকার আদায়ে সরব। কিন্তু সাধারণ জনগন আইন-আদালতে ইনসাফ পাচ্ছে কিনা তার খবর কেউ রাখে না।।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:০৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



