
প্রথমে বলে রাখা ভালো সাধারণ মানুষের ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারের বাড় ভেঙে ফেলা নিয়ে তেমন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নাই। আমরা সাধারণ মানুষ জুলাই অভ্যুত্থানের পর সবাই যার যার কাজে ফিরে গিয়েছি। আমাদের জীবন সেই আগের মতোই ভালো মন্দ মিলিয়ে চলে যাচ্ছে। দাম নাড়লে জিনিসপাতির কিনে খাচ্ছি, দাম কমলে একটু বেশি করে কিনে রাখছি। আইনশৃঙ্খলার এত অবনতি তবুও কোন কাজ থেমে আছে? সবাই জীবিকার তাগিদে বের হচ্ছে আবার পরিবারের টানে ঘরে ফিরে আসছে মহান আল্লাহর ভরসায়।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশে নতুন একটি ছাত্র সংগঠন আলোচনায় চলে আসে তা হলো বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বর্তমান ইন্টেরিম সরকারের প্রধান চালিকা শক্তি হিসাবে তারা ইতিমধ্যে পরিচিত। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় তারা রাজনৈতিক দল গঠন করবে, নির্বাচনে জয়ী হবে নানা রকম হিসাব কষছে কিন্তু তাদের শুরু থেকেই ভারতে বসে বাগড়া দিয়ে আসছেন শেখ হাসিনা। ভারত থেকে ফোন কল ফাঁস, অডিও ক্লীপ অনলাইনে দেয়া সহ নানা রকম চক্রান্ত তিনি ইন্টেরিম সরকারের বিরুদ্ধে করে যাচ্ছেন। এত দিনের সাজানো গোছানো বাগান হটাৎ করে ভেঙে গেলে কারো মাথা ঠিক থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। ফেব্রুয়ারিতে তাই ঘোষণা আসে যে আওয়ামী লীগ নাকি মাঠে নামছে ইন্টেরিম সরকারের পতন ঘটানোর জন্য। ইন্টেরিম সরকার দেশের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে যেখানে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে আওয়ামী লীগের আন্দোলনে মাঠে নামার ঘোষণা সরকার কে চাপের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। সরকার কি জন্য আওয়ামী লীগ কে নিষিদ্ধ করতে পারছে না তারাই ভালো জানে। বরং ইন্টেরিম সরকারে বিগত সময়ের দালাল আমলারা উপদেষ্টা পরিষদে জায়গা পেয়েছে। প্রশাসন থেকে আওয়ামী ভূত ছাড়ানোর কোন চেষ্টা এই সরকারের নাই। তাই সরকার ঠিক ভাবে ফাংশান করতে পারছে না।
আজ রাত নয়টায় শেখ হাসিনা নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের উদ্দেশ্য ভাষণ দিবেন। এর প্রতিবাদে বিদেশি কোন সংস্থা বা ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রেসক্রিপশনে ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারের বাড়ি ভেঙে ফেলার হুমকি দিয়েছে বৈষম্য বিরোধীরা। তাদের বক্তব্য হচ্ছে শেখ হাসিনা এত মানুষজন হত্যা করে, গুম করে, নির্যাতন করে কোথায় অনুতপ্ত হবেন তা না উল্টো নেতা কর্মীদের সাথে দেশের ভিতর অনলাইনে কথা বলবেন। শেখ হাসিনাকে আঘাতের উদ্দেশ্যে মূলত এমন কাজ করা হবে যাতে উনার আওয়াজ চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু মাদার অব মাফিয়া কি থেমে যাবেন যদি ধানমন্ডি ৩২ আজ বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলা হয় ?
শেখ মুজিবুর রহমান যত না সমালোচিত নিজের কারণে তার চেয়ে বেশি সমালোচিত হচ্ছেন উনার মেয়ের কারণে। ধানমন্ডি ৩২ এর সাথে শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি জড়িয়ে আছেন। ১৯৭১ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান এখনো পাঠ্যপুস্তকে স্বীকার করা হয়। তাই আওয়ামী লীগের চোখে উহা ১৬ কোটি বাঙালির আবেগের জায়গা। কিন্তু শেখ হাসিনার জুলুম নিপীড়নে অতিষ্ঠ মানুষ এখনো ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারছে না আবার তারা ধানমন্ডি ৩২ নিয়ে চিন্তা করবে কখন ? জুলাই অভ্যুত্থানে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ও ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারের বাড়ির উপর যে হামলা হয়েছিল তা ছিলো ১৫ বছরের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। ধানমন্ডি ৩২ নাম্বার যদি আজকে ভেঙে ফেলা হয় তাও শেখ পরিবারের প্রতি পুঞ্জিভূত ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ হবে। কারণ শেখ মুজিবুর রহমান ও স্বাধীনতার চেতনা বিক্রি করে জোর করে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে গিয়েছেন হাসিনা।
ধানমণ্ডি ৩২ এখন অক্ষত অবস্থানে নেই। জুলাই অভ্যুত্থানের সময় আগুন লেগে উহা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে শেখ হাসিনা কি বাড়ি ভেঙে ফেলার ভয়ে ভাষণ দেয়া থেকে বিরত থাকবেন? আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কি এখনো শেখ হাসিনার নেতৃত্ব মেনে নিয়ে সামনে এগুতে চান ? তাদের বোঝা উচিত শেখ পরিবারের রাজনীতির সম্ভাবনা এদেশে তারা নিজেরাই ধ্বংস করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ জন্মের সময় কোন পরিবারতান্ত্রিক দল ছিলো না। সে সময়ের অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ দের অক্লান্ত শ্রমে গড়ে উঠেছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু শেখ পরিবারের ভুল নেতৃত্বে আজ তা ধ্বংস প্রায়। আওয়ামী লীগের হারানো অতীত ফিরে পেতে হলে শেখ পরিবারের আনুগত্য ত্যাগ করতে হবে। অন্যথায় নেতা কর্মীরা নিজেরাও বিপদে পড়বেন এবং বিলীন হয়ে যাবে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী একটি রাজনৈতিক দল।
যদি আজ ধানমণ্ডি ৩২ নাম্বার ভেঙে ফেলা হয় আওয়ামী লীগ কি রিয়াকশন দেখাবে ? অনলাইন ও ইউটিউব ছাড়া তাদের মাঠে কোথাও উপস্থিত থাকা সম্ভব নয়। কারণ বিরোধী পক্ষের ধোলাই খাওয়ার ভয় আছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কি আরো অবনতি হবে ? তাও মনে হয় না। কারণ সাধারণ মানুষ সরকার বা বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের এসব কাজের জন্য নিয়োগ দেয় নাই। মানুষের আশা ইন্টেরিম সরকার একটু সুন্দর নির্বাচন দিয়ে বিদায় হবেন। তাই আওয়ামী লীগের কোন ধরণের চোরাগুপ্তা হামলার শিকার সাধারণ জনগণ হবেন না কিন্তু বৈষম্য বিরোধী দের উপর হামলার পরিমাণ বাড়তে পারে। ইন্টেরিম সরকার তার প্রধান শক্তি বৈবিছার উপর হওয়া হামলাকারী শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। কাউকে তেমন গ্রেফতার করতে পারেনি। তাই বৈবিছা দের খুব সাবধানে চলাচল করতে হবে।
সব কিছু নির্ভর করছে মাদার অব মাফিয়ার ভাষণের উপর। তিনি কি আজ ভাষণ দিবেন ?

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


