রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। তাই রাজনীতিবিদেরা সরাসরি কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে চান না। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কোনো রাজনীতিবিদ নন। উনার সাদা মনে কোন কাদা নেই। প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে তিনি যখন বিডিআর বিদ্রোহের ভুক্তভোগীদের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন তখন দ্ব্যর্থহীন ভাবে আওয়ামী লীগ কে নিষিদ্ধ করার জন্য প্রতিশ্রুতিব্দ্ধ ছিলেন। কিন্তু ২৪ ঘন্টা পার হতেই সব কিছু কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেলো। গত দুই সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মুখে আওয়ামী লীগ কে নিষিদ্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানানো হয়েছিল। বৈষম্যবিরোধী সংগঠনের নেতারা গতকাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ কে নিষিদ্ধ করার দাবী জানিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ করার থেকে আওয়ামী লীগের বিচারের প্রতি জোর দিয়েছে। মোটা দাগে আওয়ামী লীগ কে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে সবাই একমত হয়েছে বলে ধারণা করা যায়।
বইমেলার ঘটনার পর দুইটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিং নিয়ে জনসাধারণের বেশ আগ্রহ দেখা যায়। একটি হচ্ছে আমেরিকার বাংলাদেশে নিযুক্ত চার্জ দি এফিয়ার্সের সাথে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক এবং পাকিস্তানের হাইকমিশনারের সাথে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের বৈঠক। যতদূর শোনা যাচ্ছে দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি, ডেভিল হান্ট সহ নানা বিষয়ে কথা হয়েছে দুইটি মিটিংয়ে। প্রধান উপদেষ্টার সাথে আমেরিকার প্রতিনিধি বৈঠক কালে সকলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে অনুরোধ জানান। প্রধান উপদেষ্টা হয়তো এমন অনুরোধ শুনে অবাক না হলেও অনেকে খবরের কাগজে পড়ে কিছুটা অবাক হয়েছে বৈকি ! আজ ভারপ্রাপ্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাথে বৈঠকের পর মিডিয়াতে ফখরুল সাহেব জানান আওয়ামী লীগ কে নিষিদ্ধ করা হবে কি হবে না তা নির্ভর করবে সাধারণ জনগণের উপর। কিন্তু মির্জা সাহেবের সাথে ড. ইউনূসের সাক্ষাতের সময় আওয়ামী লীগ কে নিষিদ্ধ করার জন্য বিচারিক কার্যক্রম শুরু করতে সরকারকে অনুরোধ জানান। ফখরুল সাহেবের পূর্বের বক্তব্য ও বর্তমান বক্তব্য কিছুটা আলাদা। অন্যদিকে বিএনপির অনেক নেতা এখনো আওয়ামী লীগ কে নিষিদ্ধ করবার জন্য সরকারকে বারবার চাপ দিচ্ছে।
জুলাই গনহত্যার তদন্ত প্রতিবেদন জাতিসংঘ সরকার কে দিয়েছে। এতে শেখ হাসিনার জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। জাতিসংঘ অপরাধের মাত্রা কে গুরুতর বললেও তা মানবতাবিরোধী অপরাধ কিনা সে ব্যাপারে এখনই কোন সিদ্ধান্ত দিতে চাচ্ছে না। তবে নিরপেক্ষ বিচার ও ফাঁসি দেয়ার মতো শাস্তি বাদ না দিলে জাতিসংঘ দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল কে সহযোগিতা করবে না বলে জানিয়েছে। এই ব্যাপারে শুরু থেকেই ব্লগে লিখে আসছিলাম। জামায়াতের তাজুল কে চীফ প্রসিকিউটর হিসাবে নিয়োগ দানের মাধ্যমে ট্রাইবুনালের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। জাতিসংঘ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার পাশাপাশি কিছু সুপারিশ করেছে যার মধ্যে একটু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ হলো কোন রাজনৈতিক দল কে নিষিদ্ধ না করা তথা আওয়ামী লীগ কে নিষিদ্ধ না করা। তাদের বক্তব্য হচ্ছে এতে একটি বড়ো অংশের ভোটার তাদের ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকবে। এতে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে আশঙ্কা থাকবে। এখনো বিএনপি-জামায়াত কে বিদেশি শক্তি গুলো একটি রাজনৈতিক দল হিসাবে মনে করে। বিএনপি-জামায়াত আজকে তাই পরস্পরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়ে নিজেদের স্বতন্ত্রতা প্রমাণে ব্যস্ত ছিলো।
প্রধান উপদেষ্টা এখন কি করবেন ? সমন্বয়কদের সাথে প্রধান উপদেষ্টার নিশ্চয়ই এই বিষয় নিয়ে আলাপ হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে তাদের মনোভাব বোঝা যাবে। বিএনপি ও জামায়াত বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে লড়তে থাকবে। তারা আওয়ামী লীগ কে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে আসলে কতটুকু একমত সেটা নিয়েও কথা উঠেছে। জুলাই অভ্যুত্থানে জামায়াতের অবদান থাকলেও জাতিসংঘের নিকট তারা উল্লেখ করার মতো কোনো তথ্য দিয়ে সহায়তা করেনি বলে তদন্ত রিপোর্টে লেখা আছে। জামায়াতের এমন কর্মকান্ডে সামাজিক মাধ্যমে সারাদিন ব্যাপক শোরগোল হয়েছে।
সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে যাচ্ছে সামনের দিনগুলোতে। এর মধ্যে আওয়ামী লিগকে নিষিদ্ধ করা নিয়ে বিদেশি শক্তিদের সাথে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর টানাপোড়েন শুরু হলে অবস্থা আরো খারাপ হবে। সময় যত গড়াচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন তত্ত্ব নিয়ে হাজির হচ্ছে বাংলাদেশের বিদেশি সহযোগীরা। এতে রাজনীতিবিদ ও সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উপর ভবিষ্যতে চাপ বাড়বে সেটা সহজেই অনুমেয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:১১