
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ইন্টেরিম সরকার বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসে। তারা দেশকে আমূলে বদলে দেওয়ার জন্য কতগুলো সংস্কার কমিশন গঠন করে। এর মধ্যে নারী অধিকার সংস্কার কমিশন নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক বিক্ষোভ - পাল্টা বিক্ষোভ চলছে। ইসলামপন্থী ও বামপন্থী সেক্যুলারদের দের মধ্যে বিরোধ বেড়েই চলেছে। ইন্টেরিম সরকার কে সোশ্যাল রিফর্ম বা নারী অধিকার সংস্কার কমিশন গঠন করতে কে বলেছে ? জুলাই আন্দোলনে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার লক্ষ্য ছিলো একটাই তা হলো শেখ হাসিনার পতন। নারীরা জুলাই আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে । শিক্ষিত চাকুরি প্রত্যাশী মেয়েরা কোটা নয় মেধার মাধ্যমে নিয়োগের জন্য মাঠে ছেলেদের পাশাপাশি আন্দোলন করেছিলো। একজন মেয়েও সোশ্যাল রিফর্মের দাবীতে মাঠে নামে নাই। আওয়ামী লীগ নিশ্চয়ই আর যাই হোক নারীদের অধিকার খর্ব করতে কোনো আইন পাশ করে নাই। বরং নারীরা শেখ হাসিনার সময়ে কোটায় প্রাইমারী(৬০ ভাগ) , শিক্ষক নিবন্ধন(৩০ ভাগ) ও সরকারি ৯/১০ দশম গ্রেডে(১৫ ভাগ) কোটার সুযোগ পেয়েছিলো। কোনো রাজনৈতিক সরকার নারীদের অধিকার নিয়ে ধর্মীয় বিধিবিধান সংস্কারের চিন্তা ভাবনা করেনি কোনোদিন। একমাত্র ইন্টেরিম সরকার কে দেখলাম নারী অধিকার সংস্কার কমিশন গঠন করতে যা সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।
জুলাই আন্দোলনের পর চাকুরিতে নারী কোটা বাতিল করা হয়। শিক্ষিত নারীরা এখন কোটা নয় মেধায় নিয়োগ পেতে চায়। তাহলে নারী অধিকার সংস্কার কমিশনের কি কাজ ? নেই কাজ তো খই ভাজ ! এখন তাই সামাজিক রিফর্মেশনের নামে সম্পত্তিতে নারী ও পুরুষদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে তারা কিছু সুপারিশ তৈরি করেছে যা ধর্মীয় চেতনার বিপরীত ! ইসলাম পন্থীরা এসব সুপারিশ দেখতে পেয়ে তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। তারা লাগাতার সমাবেশ-বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে যেসব নারীরা দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক রিফর্মেশনের পক্ষে কথা বলেছেন তারাও পাল্টা নারী মৈত্রী সমাবেশ আয়োজন করে। এই সমাবেশে বাম সেক্যুলার নারীরা অংশ নেয়। ডানপন্থী বা মধ্যপন্থীদের অংশগ্রহণ তেমন ছিলো না। ইসলামিস্টদের ক্ষোভ যেন আরো বেড়ে যায়। এদিকে বাংলাদেশের একজন বুদ্ধিজীবী গফুর ওরফে ফরহাদ মজহার নারী অধিকার সংস্কার কমিশন কে জুলাই স্পিরিটের ফসল অভিহিত করে আগুনে ঘি ঢালছেন। যে সব নারীরা মৈত্রী সমাবেশে অংশ নিয়েছিলো তাদের বিরুদ্ধে অনলাইন-অফলাইনে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। এর হাত থেকে এনসিপির নেত্রী তাসনুভা জেরীন ও রেহাই পান নাই। একজন পাকিস্তান পন্থী ইউটিউবার তাসনুভা জেরীনের চরিত্র নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন। তবে সবচাইতে বিপদে পড়েছেন নরসিংদী সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাদিরা ইয়াসমিন !
অধ্যাপক নাদিরা ইয়াসমিন একজন সেক্যুলার নারী একটিভিস্ট ! তিনি জুলাই আন্দোলনের সময় বিগত সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। খুব সম্ভবত একসময় ঢাবির শামসুন্নাহার হলে থাকতেন। সেখানেও কোনো একটি আন্দোলনে উনার ভূমিকা ছিলো প্রশংসনীয় ! যাই হোক ম্যাডাম 'হিস্যা' নামে নারীদের একটি ম্যাগাজিনের সাথে জড়িত। এই ম্যাগাজিনে পরিবার ও সমাজে নারীদের সমান অধিকার নিয়ে লেখালেখি হয়েছে। ম্যাডামের বিরুদ্ধে ট্রান্সজেন্ডার দের সমর্থন করার অভিযোগ রয়েছে। ম্যাডাম নারী মৈত্রী সমাবেশে অংশ নিয়েছিলেন। এরপর উনার জীবনে নেমে আসে ভয়াবহ বিপর্যয় ! হেফাজতে ইসলাম সহ কমপক্ষে তিনটি কওমী মাদরাসা ভিত্তিক ইসলামিক দল উনার বিরুদ্ধে মাঠে নামেন। ম্যাডাম নাদিরা ইয়াসমিন কে চাকুরি থেকে বহিস্কারের জন্য তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হয়। ইন্টেরিম সরকার যে কোনো অযৌক্তিক আন্দোলনে মব সৃষ্টি হলেই ভয়ে তা মেনে নেয়। এমনিতেও ইসলাম পন্থীদের প্রতি সরকারের আলাদা দুর্বলতা রয়েছে। নাদিরা ইয়াসমিন ম্যাম কে বদলি করে দেয়া হয়। এতে যারা প্রগতিশীল চেতনার মানুষ বলে নিজেদের দাবী করেন তারা তীব্র ক্ষুব্ধ হন।
এনসিপির নেত্রী সামান্তা শারমিন মব সৃষ্টি করে ম্যাডামকে বদলি করার তীব্র সমালোচনা করে। কিন্তু সেই একই দলের নেতা হাসনাত হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে গিয়ে তাদের সাথে সুর মেলায়। এনসিপির রাজনৈতিক দর্শন এখনো ঠিক হলো না। মানুষের মধ্যে তাদের কে ঘিরে সন্দেহ বাড়ছেই। শিক্ষিত নারীদের মধ্যে এনসিপিকে নিয়ে অবিশ্বাস সবচাইতে বেশি কারণ যে কোনো দমন-পীড়নের প্রথম ঝাপটা নারীদের উপর যায়। আবার খোদ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নারীরা আওয়ামী-বিএনপি-জামায়াত সবার ট্রলের শিকার হচ্ছে। এনসিপি হলো বৈবিছার রাজনৈতিক সংগঠন ! যে সংগঠন শক্তভাবে তাদের নারী কর্মীদের পক্ষে ডিফেন্ড করতে পারছে না তারা কিভাবে একজন সাধারণ নারীর পক্ষে দাঁড়াবে ?
আজকে বাম সেক্যুলার নারীদের সাথে ইসলামিস্টদের যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তার জন্য একমাত্র দায়ী নারী অধিকার সংস্কার কমিশন ! এসব উদ্ভট সংস্কার কমিশন দেশের এই অস্থিতিশীল সময়ে কোনো প্রয়োজন নেই। দেশে যখন রাজনৈতিক-সামাজিক ঐক্য প্রয়োজন তখন যেন বিভেদের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। ম্যাডাম নাদিরা ইয়াসমিন সম্পর্কে কেউ এত ওয়াকিবহাল ছিলো না। যারা হয়তো সোশ্যাল মিডিয়ায় উনাকে ফলো করতেন তারা কিছুটা জানতেন উনার কার্যক্রম নিয়ে। এখন পুরো দেশ জানলো এবং যারা ইসলামিস্ট তারা যেমন ক্ষুব্ধ হলো একই সাথে যারা নিজেদের প্রগতিশীল দাবী করেন তাদের সরকারের উপর অবিশ্বাস বাড়লো। এভাবেই ইন্টেরিম সরকার সমাজের বিভিন্ন গোষ্ঠীর কাছে অজনপ্রিয় হয়ে উঠছে । ইসলামিস্টদের হাতে রাখতে তারা বাকিদের দূরে ঠেলে দিচ্ছে। অথচ সরকারের উচিত ছিলো সকল জাতি-গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করা। তারা সে কাজে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু সরকারের হুশ হচ্ছে না। নারী অধিকার সংস্কার কমিশন বাতিল না করে সেই কমিশনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে !
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০২৫ রাত ১০:৪৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



