somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজকের রম্য রচনা -সংগ্রাম রিপোর্ট

১৯ শে এপ্রিল, ২০০৭ ভোর ৫:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পহেলা বৈশাখ উদযাপন : ভিন্নতর ভাবনা
-মাহবুবুল হক

কারণ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এদেশের সকল মানুষ বর্ষবরণ বা পহেলা বৈশাখকে আবেগের সাথে উদযাপন করে। উপজাতিরাও এই উৎসবে এখন মেতে থাকেন। আমরা সবাই জানি উপজাতিরা বাঙ্গালী নয়। তারা বাংলাদেশী। আর আমরা বাঙ্গালী এবং বাংলাদেশী। নৃতত্ত্ব ও জাতিগত দিক থেকে আমরা বাঙ্গালী মুসলমান, বাঙ্গালী হিন্দু, বাঙ্গালী বৌদ্ধ ও বাঙ্গালী খৃস্টান। কিন্তু জাতীয়তার দিক থেকে আমরা সবাই বাংলাদেশী আমাদের যেমন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ জাতিগত বিষয় রয়েছে, তেমনি উপজাতিদেরও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ জাতিগত বিষয় রয়েছে। কিন্তু পহেলা বৈশাখে আমরা এক দেহে লীন হয়ে যাচ্ছি। সুতরাং পহেলা বৈশাখকে সার্বজনীন উৎসব হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। সার্বজনীন ঈদ বা সার্বজনীন দূর্গা উৎসব বলাটা যে ঠিক নয়, আমাদের তা বুঝতে হবে। এখন এই সার্বজনীন উৎসবকে জাতি ও উপজাতি মিলে আমরা কি একইভাবে পালন করবো? একপক্ষ অবশ্য চাচ্ছেন একইভাবে পালন করতে, যারা উপজাতিগুলোকেও বাঙ্গালী বলে চিহ্নিত করে আসছেন। তারা বাঙ্গালী মুসলমান এবং বাঙ্গালী হিন্দুর মধ্যে কোনো ভেদরেখা টানতে চান না। তাদের কাছে বাঙ্গালিত্বই বড়ো। ধর্মের বিষয়কে তারা নির্মমভাবে উপেক্ষা করতে চান, তাদের কথা হলো, আমরা আগে বাঙ্গালী পরে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খৃস্টান। যারা ধার্মিক হবেন বা ধর্ম কর্ম পালন করবেন তারা তা করবেন ব্যক্তিগত ও পারিবারিকভাবেই। সামাজিকভাবে ধর্মাচরণের কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু বাঙ্গালী মুসলমান বা বাঙ্গালী হিন্দু কখনো কি এ কথা মেনে নিয়েছে না ভবিষ্যতেও নিবে?
বাঙ্গালী হিন্দুর কথাই ধরা যাক, ওরা কিন্তু ১৪ই এপ্রিলকে এখনো পহেলা বৈশাখ হিসেবে মেনে নেয়নি। বর্ষবরণ করছে তারা ১৫ই এপ্রিলে। লোকনাথ পঞ্জিকায় ১৫ই এপ্রিলকে বাংলা নবর্ষের প্রথম দিন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পশ্চিম বাংলার বাঙ্গালীরা ১৫ই এপ্রিলেই বর্ষবরণ করছে। আমাদের দেশেও যারা জাতহিন্দু, যারা বাঙ্গালিত্ব ও হিন্দুত্বকে এক করে ফেলেননি, তারাও কিন্তু ১৫ই এপ্রিলে বাংলা নববর্ষ পালন করছে। ধর্ম এখানে একটা বিভেদ রেখা টেনেছে কুলীন হিন্দুরা ১৫ই এপ্রিলে নববর্ষ পালন সাধারণ হিন্দুরা ১৪ই এপ্রিলে নববর্ষ পালন করেছে।
দিনক্ষণ ও তারিখ নিয়ে বাঙ্গালী মুসলমানদের মাঝে কোনো বিভেদ নেই। বিভেদ হলো দিবসের কর্মসূচি নিয়ে। দিবসটি পালন ও কর্মসূচি নিয়ে বাঙ্গালী মুসলমানদের মাঝে তিনটি মতের প্রাধান্য আমরা দেখতে পাই। ১. নববর্ষের প্রথমদিনটি পালন করা যাবে না। স্বয়ং রাসূলে খোদা (সা:) এর বিরোধিতা করেছেন। ইরানীদের নওরোজ দিবস পালনের মতো মুসলমানরা যাতে বর্ষবরণ না করে, সে বিষয়ে তিনি সতর্ক করেছেন। আমাদের দেশে লা-মজহাবী বা আহলে হাদীসরা বরাবর নববর্ষ পালনের বিরোধিতা করে আসছেন তারা বিষয়টিকে হারাম ও বিদআত হিসেবে গণ্য করেন, এই দিবস উপলক্ষ্যে ধর্মীয় কোন অনুষ্ঠানকেও তারা সমর্থন করেন না। ২. দ্বিতীয় মত হলো, এটা স্খানীয় সংস্কৃতি প্রত্যেক জাতির নিজস্ব সংস্কৃতি আছে। ইসলাম জাতিগত সংস্কৃতিকে উপেক্ষা বা অবজ্ঞা করেনি। স্খানীয় সংস্কৃতি থেকে শিরক ও বিদআত দূর করার প্রয়াস পেয়েছেন মাত্র, এই মতের লোকেরা হানাফী মজহাবভুক্ত। তারা নিজস্ব ঐতিহ্যের আলাকে এ দিবসটি পালন করে আসছেন। দূর অতীত থেকে আমরা দেখছি যে, বাঙ্গালী মুসলমান ও বাঙ্গালী হিন্দু পৃথক পৃথকভাবে সাড়ম্বরে বর্ষবরণ করে আসছে। মুসলমানরা দোয়া-দরুদ, ওয়াজ মাহফিল, মিলাদ মাহফিল, অতিথি আপ্যায়ন, মিষ্টান্ন বিতরণ, নতুন জামা কাপড় পরিধান করা, মুসলিম পদ্ধতিতে হালখাতা করা, নববর্ষের মেলায় অংশগ্রহণ করা, মসজিদ মাদরাসা ও এতিমখানায় ভালো খাবার সরবরাহ ইত্যাদির মাধ্যমে নববর্ষ উদযাপন করে আসছে। এখনও পল্লী অঞ্চলের সাধারণ মুসলমান এই পদ্ধতিতে বর্ষবরণ করে থাকে। ৩. শহুরে মুসলমান এখন আর ধর্মের ধার ধারছে না। তারা সার্বজনীন সেক্যুলার পন্থায় পহেলা বৈশাখকে বরণ করে নিচ্ছে। বয়স্কদের মধ্যে এ নিয়ে বাদপ্রতিবাদ বা দ্বিধা-দ্বন্দব থাকলেও তরুণরা এসব নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। উদ্বাহু আনন্দে তারা নিমগ্ন হচ্ছে। বাধা বনহীন নানা যান্ত্রিক আনন্দিক উপকরণে তারা নিজেদের আত্মস্খ করে নিচ্ছে। বিনোদনে তারা এমনভাবে আকন্ঠ নিমজ্জিত হচ্ছে যে, দু'দণ্ডের জন্যও তারা ভাবতে রাজি নয় বিনোদনের এই উপকরণটি তাদের সংস্কৃতি, জীবন আচার বা ঐতিহ্যের বিরোধী কিনা? বর্ষবরণ করতে গিয়ে যে শিরক-বিদআত এবং ভারতীয় ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতিকে আমরা অবাধভাবে বরণ করে নিচ্ছি তাও আমরা ভাবছি না। আমাদের আনন্দের দরকার, আনন্দিত হওয়ার দরকার। সুতরাং চোখের সামনে বিনোদনের যে উপকরণ পাচ্ছি, তাকেই আমরা দু'বাহু বাড়িয়ে আলিঙ্গন করছি। এ এক নতুন প্রেক্ষাপট, এক নবতর উন্মাদনা। একে মাইলফলক বলা যায় না। নতুন কোনো টার্নিং পয়েন্ট কিনা, তাও এই মুহূর্তে সম্মতভাবে উপলব্ধি করা যাচ্ছে না। এর মধ্যে জাতিগতভাবে যে ভালো দিক রয়েছে তা হলো, সার্বজনীনভাবে নিজস্ব একটি দিনে মিলিত হওয়া, আমোদিত হওয়া, খুশি হওয়া এবং কোনো না কোনোভাবে নিজস্ব সংস্কৃতির দিকে ফিরে আসা বা নিজস্ব সংস্কৃতির টান অনুভব করা। আমাদের সংস্কৃতি বেশীরভাগটাই লোকজ সংস্কৃতি। নববর্ষের প্রথম দিনে আমরা লোকজ সংস্কৃতির নাড়ির টান অনুভব করি। শহুরে মানুষেরা গ্রামীণ অন্ত্যজ জীবনে ফিরে যাবার আকাকôখা অনুভব করি। এদিনে আমরা পান্তা-ইলিশ খাই, শাক-ভর্তা খাই, মুড়ি-মুড়কি খাই। এসব খারাপ কিছু নয়। এদিনেই গ্রামীণ জীবনের কথা আমাদের মনে পড়ে। একদিনের জন্য হলেও আমরা গ্রামের জীবনে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করি। এই চেতনাকে অবশ্যই অভিনন্দন জানাতে হয়। কিন্তু মিলনের নামে, আনন্দের নামে এ দিনে আমরা যা কিছু করছি তা-কি আমাদের ঐতিহ্য, বহমান জীবনাচরণ, বা আমাদের ঐশ্বর্যময় সংস্কৃতির সাথে কি সঙ্গতিপূর্ণ? নর-নারীর এই যে খোলামেলা অবাধ মেলামেশা তা কি আমাদের ঐহিত্যময় সংস্কৃতির সাথে সাযুজ্যপূর্ণ? নতুন প্রজন্মকে এসব নিয়ে ভাবতে হবে। এই প্রজন্ম একদিকে যেমন অতি আধুনিক অপরদিকে তারা দারুণভাবে চিন্তাশীল। তারা জানে তাদের গন্তব্য কোথায়? অবশ্যই তারা জানে তাদের গন্তব্য ভারত মহাসাগর, প্রশান্ত মহাসাগর বা অতলান্তিক মহাসাগর নয়। তাদের গন্তব্য অন্য কোথায়, অন্য কোনো খানে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০০৭ সকাল ৯:৪১
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×