মুক্তিযোদ্ধা দারোগ আলীর যুদ্ধ
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
দারোগ আলী (৫৮)। তিনি মুক্তিযোদ্ধা। কুড়িগ্রামের যাত্রাপুর ইউনিয়নের ছত্রপুরে তার বাড়ি। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন টগবগে এক তরুণ। ২৫ শে মার্চের কালো রাতের কথা তিনি শুনেছেন রেডিও থেকে। পাকিস্থানী বাহিনীর নিরীহ নিরস্ত্র বাঙ্গালীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে নির্বিচারে হত্যা করার খবরে তার শরীরের রক্ত সেদিন খলবলিয়ে উঠেছিল। কিন্তু প্রতিবাদের কোন ভাষা তার জানা ছিল না। তার পর যখন যুদ্ধ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ল দারোগ আলী নিজেকে স্থীর রাখতে পারেননি। এলাকার অন্যান্য যুবকদের সংগঠিত করে তিনি যুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। দারোগ আলীর মা জীবিত ছিলেন না। দাদী তাকে বড় করে তুলেছেন। যুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা তিনি দাদীর কাছে বলতে পারেননি। ভেবেছিলেন ফিরে এসে দাদীর কাছে না বলে চলে যাওয়ার জন্য ক্ষমা চাইবেন। তখনো পাকিস্থানী বাহিনী জেলা শহর কুড়িগ্রাম থেকে ধরলা নদী পার হতে পারেনি। দারোগ আলী নিজেই বললেন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তার স্মৃতি কথা-- তারিখ মনে পড়ে না , মেহেরজামাল, আজাহুর ইসলাম, মোখতার আলী, হামিদ আলী , নায়েব আলী, জহির উদ্দিন, গোলাম মন্ডল, ফজলুল হক, কুতুব মেম্বার সহ ৬০ জনের একটি দল মুক্তিযুদ্ধের উদ্দেশে একটি নৌকায় করে যাত্রা করি। প্রথমেই দলটি চলে যাই আসামের ধুপরীতে। সেখানে মুক্তিযোদ্ধার সংগঠক নজরুল ইসলাম পাটোয়ারী ভোলা থাকতেন। তার কাছে গিয়ে তাকে না পেয়ে তার স্ত্রীর কথা মতো সৈয়দ মনসুর আলী টুংকুর কাছে যাই। তিনি সকলের নামের তালিকা করে তাতে মুক্তিবাহিনীর সীলদিয়ে কোচবিহারে পাঠান। কোচবিহার মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে ২ দিন থেকে পায়ে হেঁটে টাপুরহাট অস্থায়ী প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে পৌঁছি। সেখান থেকে আমাদের ছোট ছোট দলে ভাগ করে পাঠিয়ে দেয়া হয় দার্জিলিংয়ে। এখানেই মূল প্রশিক্ষণ হয় ২১ দিন এল এম জি,এস এল আর, স্টেইন গান, রইফেল (থ্রি নট থ্রি ) চালানো শেখানো হয়। কিন্তু থাকতে হয় ৩২ দিন। প্রশিক্ষণ শেষে ৩ দিনের খাদ্যও অস্ত্র -সস্ত্র নিয়ে দার্জিলিং থেকে ৫০ জনের একটা প্লাটুন বাংলাদেশ ভারত সীমান্তের কাছে সাহেব গঞ্জে ৬ নং সেক্টরের অধীন যোগ দেই।দারোগ আলীর প্লাটুনের নেতৃত্ব দিতেন লেঃ আবু নঈম মোহাম্মদ আশফাকুর সামাদ। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে ভারতীয় সৈন্যরা মিলিত হয়েছে। এর মধ্যে পাকিস্থানী বাহিনী ভরুুঙ্গামারীর দখল নিয়েছে। আমরা প্রতি রাতে ছোট বড় অপারেশনে অংশ নিতাম। সারাদিন বাংকার খোড়া চলতো রাতের বেলায় সেই বাংকারে ঢুকে পড়ে ভারতীয় সৈন্য। জয়মনির কাছে এক বাড়ি হতে দুইজন পাকিস্থানী সৈন্যকে বেড়িয়ে আসতে দেখে তাদের বন্ধি করে ফেলেছি। ২০ নভেম্বর রায়গঞ্জ ব্রীজের দক্ষিণ পাশে পাকিস্থানী অ্যাম্বুসে ধরা পড়ে যাই আমরা। সামনে পাকিস্থানী সেনা মাঝখানে মুক্তিবাহিনী পিছনে ভারতীয় সৈন্য এ সময় পিছন থেকে লেঃ আবু নঈম মোহাম্মদ আশফাকুর সামাদ এর নির্দেশের অপেক্ষায় ছিলাম আমরা। কিন্তু কোন নির্দেশ না পেয়ে পাকিস্থানীদের গুলির মুখে দল ছত্রভঙ্গ হয়ে যাই। ভারতীয় সৈন্যর সাথে পাকিস্থানী সৈন্যর তুমুল যুদ্ধ হয়। এ সময় লেঃ আবু নঈম মোহাম্মদ আশফাকুর সামাদ সহ আরো কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও ভারতীয় সৈন্যর অনেকে হতাহত হন। পরদিন জঙ্গলে দারোগ আলীর মাথায় গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়। ২১ নভেম্বরের পর থেকে পাকিস্থানী সৈন্যরা পিছু হটতে থাকে । আমরা পাকিস্থানী সৈন্যের পিছু পিছু পাটেশ্বরী পযর্š— আসতে কুড়িগ্রাম মুক্ত হয়। তখন ধরলা নদীর তীর ধরে হাঁটতে হাঁটতে কুলাঘাট দিয়ে লালমনির হাটে পৌঁছি। ততক্ষনে লালমনিরহাটও মুক্ত হয়। তখন আবার হেঁটে তিস্তা ব্রীজের পারে গিয়ে থেমে যাই। সেদিন ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর। পাকিস্থানী সৈন্যরা পিছু হটতে হটতে আত্মসর্মপনে বাধ্য হয়েছে।
যুদ্ধ শেষ হয়েছে। বিজয়ের পতাকা হাতে বাড়ি ফিরে এসে শুনতে পাই আমি যুদ্ধে যাওয়ার কারনে আমার দাদীকে হত্যা করেছে পাকিস্থানীরা। তাই আর ক্ষমা চাওয়া হয়নি দাদীর কাছে। আর ক্ষমা হয়তো করবেনও না তিনি। কারন যে রাজাকাররা আমার যুদ্ধে যাওয়ার খবর দিয়েছিল পাকিস্থানী সৈন্যকে, তারাই আজ মুক্তিযোদ্ধার সনদ ধারী। তাদের হাতেই আজ দেশের পতাকা শোভা পায়। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধায় যে ছেয়ে গেছে দেশ। সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধারাই আজ কোন ঠাসা।
জীবনে দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধে তিনি আজও অবতীর্ন। কিন্তু ক্লান্ত নন । বেঁচে থাকতেই যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও ভুয়ামুক্তিযোদ্ধাদের সনাক্ত করে তাদের শাস্তি দাবী করেন তিনি
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
স্মৃতিপুড়া ঘরে
বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।
দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন
গরমান্ত দুপুরের আলাপ
মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন
রাজীব নূর কোথায়?
আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন
=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=
©কাজী ফাতেমা ছবি
মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।
হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।
ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন