somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বড় অবেলায় নীড়ে ফেরা

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রথমাংশ১-৩





পর্ব --৯
------------------------
মজনু দেশে ফেরৎ যাবার জন্য আবুলকে একটি টিকিটের ব্যবস্হা করার অনুরোধ করলো।স্যরের অবস্থা পরখ করে আবুল বললো,যেহেতু মজনুর পাসপোর্ট এখনো হোম অফিসে তাই তাকে বাংলাদেশ হাই কমিশন থেকে আউটপাসের একটি রিসিট নিয়ে আসতে হবে। মজনু পরদিন সকাল বেলা বাংলাদেশ হাইকমিশনে গিয়ে আউটপাস নিয়ে আসলো।
এবার মজনুর দেশে যাবার পালা।অনেক হ'য়েছে আর এক মুহুর্ত মায়ের কাছ থেকে দূরে থাকতে ইচ্ছা করছে না।শুধু মায়ের মুখটা ভেসে আসছে।মাকে খুব কাছ থেকে জড়িয়ে ধরার,মাকে একটিবার দেখার প্রবল বাসনা নিয়ে পরদিন দুপুরে কাতার এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে করে মজুন দেশের উদ্দেশ্য রওয়ানা দিলো।


#শেষ পর্ব
------------

কাতার এয়ারলাইন্সে ঢাকা এসে তারপর বাসে করে যখন সিলেট এসে নামলো তখন রাত আনুমানিক তিনটা। এ কয়েক বছরে শহরের চিত্রটা অনেক বদলে গেছে।এখনো প্রায় সবকটি দোকানে বিক্রি চলছে।একটি ভেরাইটিজ স্টোরে ঢুকে দেখলো নিত্য প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখা।সেখান থেকে মায়ের প্রিয় দু'হালি জারা লেবু কিনলো।

সিলেট থেকে একটি সিএনজি ভাড়া করে যখন কোম্পানিগঞ্জে পৌঁছলো তখন রাত দ্বিপ্রহর।তাদের বাড়িতে দক্ষিণ পূর্ব পাশে পাশাপাশি বেড়া দেওয়া দু'টি কবরের মাটির বুকে শেষ রাতের চাঁদ এসে সাদা ঝিলিক দিচ্ছে মনে হচ্ছে যেন রাতের চাঁদ এই মাটিকে চুমু খেয়ে চলছে।
মজনু যখন বাড়িতে পা রেখলো তখন চারিদিকে মধ্যরাতের শুনশান নিরবতা।খুব কাছ থেকে কারো যেন কান্নার গোঙানির আওয়াজ সাথে ঝি ঝি পোকার শব্দ যেন নিরব রাতে করুন সুরে কান্নার স্রোত চলছে।সে এক আগন্তুক পথিকের ন্যায় থমকে দাঁড়ায় উঠোনের মাঝে। এমনি এক রাতে সে বাড়ি ফিরছিলে মাকে ডাক দেবার আগেই মা দরজা খুলে হাজির।মা বলতো তুই এসেছিস মজনু আমি বুঝতে পারছিলাম।ছেলে বাড়ির আঙিনায় পা রাখলে মায়ের আত্মা বুঝতে পারে ছেলে তার কাছে এসেছে।মা এখনি ছুয়ে দেখতে পারবে মা- ছেলেকে পাবে ছেলের আদর।মা যে বুঝতে পারে আদরের সন্তান তার কাছে চলে এসেছে।
আজ কেউ দরজা খুলে না।মা কি আজ তার আসার খবর জানলো না?এবার নিশ্চিত হলো কেন তার আদরের বোনটি কেঁদেই চলছে,মজনুও কাঁদছে,রাত,কাঁদছে,আকাশের চাঁদ কাঁদছে,বাড়ির মাটি,গাছ,ঘর সবকিছু বিলাপ করছে।চারিদিকে কান্নার সুরে কখন যে তার বুক ভেসে গেছে সে বুঝতে পারে নাই।ধপাস করে মজনু মাটিতে পড়ে যাওয়ার শব্দে সাথে সাথে বড় ভাই বাহিরে এসে অজ্ঞান অবস্থায় মজনুকে ভেতরে নিয়ে গেলো।

জ্ঞান ফিরে মজনু নিজেকে নতুনভাবে দাঁড় করালো।এ নশ্বর জীবন কতটা তুচ্ছ,মা- বাবা ছাড়া ! সংসার জীবনের নানাঘাত-প্রতিঘাত সে মর্মে মর্মে অনুধাবন করলো,

"মজনুর কুঁড়ে ঘর নেই,আছে শুধু ভিটে,
মজনুর জোয়ার নেই,আছে শুধু ভাটি।
মজনুর অনল নেই, আছে শুধু দাহ্য
মজনুর সুখ নেই,আছে শুধু দুঃখ। 
মজনুর লাইলী নেই,আছে শুধু লীলা,
মজনুর আহ্লাদ নেই,আছে শুধু অবহেলা।


বড় ভাই বললো,তার পাঠানো তিন লাখ টাকা দিয়ে ঘরে ছাদ লাগিয়েছে।আর মায়ের জন্য পাঠানো দেড় লাখ টাকার নব্বই হাজার খরচ হয়েছে বাকী ষাট হাজার তার কাছেই আছে।
আবাক হয়ে ভাবলো সে তো কোন টাকা পয়সা দেশে পাঠায় নাই তাহলে বড় ভাই এসব কি বলছে!
বড় ভাই আরো বললো,দেখ আমি বিয়ে করেছি অনেকদিন কোন ছেলেমেয়ে নেই আমার তুই আর তোর বন্ধু শাহীন এ দুজনেই ভাই ও সন্তানতুল্য।শাহীন একটু আগেও ফোন করেছিল তোর আসার খবর শুনে খুশি হয়েছে।সে বলছে একঘন্টা পরে ফোন দিবে।
বড় ভাইয়ের কথাগুলো শুনে মজনু ভাবলো,আসল শিক্ষিত তার ভাই যে কিনা লেখাপড়া ক্লাস এইটের বেশি করেনি,মজনুই অশিক্ষিত। তার ভাই এত গভীর ভালোবাসায় ও মমতা নিয়ে কথা বলছে যেন সে এক মহামানব।

ঘন্টা এখানে পর শাহীনের সাথে আলাপ হলে সে বললে,মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে সে আসলে টাকাগুলো পাঠাতে চেয়েছিলো কারণ এতগুলো টাকা মজুনর হাতে গেলে সে হয়তো নিজেকে সামালতে পারবে না।আর রেস্টুরেন্টের টিপসের টাকা দিয়ে সে প্রতি বছর কোন না কোন নিকট আত্মীয়কে ঘর করে দেয়।

মজনু এবার নিজের ভুল বুঝতে পেরে বন্ধুর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলো।

একা একা বাড়িতে থাকার পর এক ধরনের একগুয়েমি ভাব চলে এলো।সবকিছু বড্ড বিবর্ণ লাগলো।কি করবে কোথায় গিয়ে একটু শান্তি পাবে তাই ভেবে মনে মনে অস্হির হয়ে গেলো।

এভাবেই সপ্তাহে খানেক পর রোজগার অভ্যাসের মতো ভোরে মসজিদে ফজরের নামাজ আদায় করে মায়ের কবর জিয়ারত করতে গেলো।হঠাৎ একটি খবরের কাগজ মায়ের কবরের পাশে বেড়ার মধ্যে আটকে আছে দেখে তা হাতে তুলে নিলো।দৈনিক জনতার চোখ নিউজ পেপারের জনতার জিজ্ঞাসা পেজে মানুষের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন রোমি বিশ্বাস,লেকচারার আইডিয়াল মহিলা কলেজ।
তাহলে তার পুরানো কাজের জায়গায় রোমি বিশ্বাসের পোস্টিং দেখে মনে মনে ভাবলো আজই গিয়ে দেখা করে আসবে৷
দুপুর এক ঘটিকায় সে গিয়ে পৌঁছলো পুরানো কাজের জায়গায়।কেউ তাকে চিনতে পারলো না।চেনা পরিবেশ আজ কত অচেনা। রিসিপশনে গিয়ে রোমি বিশ্বাসের সাথে দেখা করতে চাইলো।নিজের নাম বলে সে অপেক্ষা করতে থাকলো ওয়েটিং রুমে।সেখানে আরো তিনটা ছেলে বসে আছে।সবাই মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত।তার প্রবেশ কারো নজড়ে পড়লো না।আস্তে করে চেয়ার টেনে বসে পড়লো।বেলা দেড়টায় রোমি বিশ্বাস এসে ওয়েটিং রুমে ঢুকলো।এবার সরাসরি চোখের দিকে তাকায়ে দেখলো রোমি ঠিক আগের মতোই আছে।
স্যারকে চিনতে পেরে কুশলাদি বিনিময় করে পাশের ক্যাফেটেরিয়ায় গিয়ে চা নাস্তা করার জন্য বললো।
কথায় কথায় অনেক কথা হলো,রোমি বললো বিয়ে করে সংসারী হওয়ার তিন বছরের মাথায় স্বামী রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়।তার সংসার জুড়ে এক মেয়ে যাকে নিয়ে তার আগামী।সে এখনো মজনুর আদর্শ নিয়ে পথ চলে।
কতাটা শুনে মজনু নিজেকে অপরাধী ভাবলো।কিছু লোক নিজের অজান্তেই তার আদর্শ নিয়ে আছে আর সে কিনা পঁচে গেছে।
মজনু তার প্রবাস জীবনের অবস্থা,তার একাকিত্ত্ব,তার আবেগ,তার কষ্ট,তার উদাসীনতা,মা-বাবাকে হারানোর কথা এগুলো বলতে বলতে কেঁদে ফেললো,চায়ের টেবিলের থেকে একটা টিস্যু দিয়ে মজনুর হাতের উপর গড়িয়ে পড়া অশ্রু ফোঁটা রোমি বিশ্বাস মুছে দিলো।
মজনু কিছু একটা বলতে চাইলো কিন্ত মুখ ফুটে বলতে পারলো না,
" "যে আগুন চোখে দেখা যায়
সে আগুনে কেউ পুড়ে গিয়ে কাঁদতে দেখে
তুমি তারে মুছে দাও চোখের জল,
ভেতরের পোড়া আগুন কেউ তো দেখে না!
কাছে এসে মুছে দেয় না অশ্রুজল ,
কিছু আগুন এ পোড়া মনে --
জনম জনম বুঝি এভাবেও দাহ্য হয়" "

সবকিছু শুনে রোমি বললো - যেখানে জীবনের কোন টান নেই,প্রাণের অস্তিত্বে ক্লান্ত শ্রান্ত,হাহাকার করে চারদিকে আঁধার সেখানে গভীর অনুরাগ নিয়ে এসোছো আজ "বড় অবেলায়"

মজনুর,বুকের ভেতর জমিয়ে থাকা চাপা বেদনা,দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া অব্যক্ত কথা আজ মুখ ফুটে বলতে বড্ড ইচ্ছে করছে,
''অন্ধকারে খুঁজি কাঙ্ক্ষিত ছায়া-"ক্ষতি কি তবুও যদি হয় নীড়ে ফেরা"

(সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১:৫৩
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×