----------------------------------
একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়,জ্ঞানচর্চা ও বিশ্বকে কাছে থেকে জানার একমাত্র উন্মুক্ত প্লাটফর্ম হলো তথ্য ও প্রযুক্তি। তবে প্রযুক্তি কি সবসময় মঙ্গল বয়ে আনছে নাকি পাশাপাশি অজানা আতংক ছড়িয়ে দিচ্ছে তা নিয়ে বহু তর্ক-বিতর্ক আছে।
লক্ষ্য করা যায় প্রযুক্তির ব্যবহারে মাত্রাতিরিক্ত আসক্ত হয়ে শিশু-কিশোররাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একটি শিশুর বিভিন্ন সামাজিক অপরাধে যুক্ত হওয়া ও বিকারগ্রস্ত মানসিকতা তৈরীতে মারাত্মক প্রভাবক হিসাবে কাজ করছে প্রযুক্তির অপব্যবহার। বিভিন্ন কার্টুন, ভিডিও গেমস, মোবাইল, এ্যাপস, ট্যাবসহ ডিভাইসগুলোর অতিরিক্ত ব্যবহার শিশুদের মাঝে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এর ফলে তারা পারিবারিক ও সামাজিক শিক্ষা,আদব, শিষ্টাচার, ও ভ্যালুজ এডুকেশন অর্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সিরিয়ার কথাই ধরা যাক, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার তরুণ-তরুণীর মগজে সুক্ষ হাতের ইনোভেটিভ ক্রাইমপ্ল্যান করে তাদের দলে যুক্ত করে। যার ফলে দেশে দেশে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মাদক,ইয়াবা,সাইবার ক্রাইম,শারিরীক, মানসিক ও স্নায়বিক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে শিশু- কিশোররা অসহনীয় পরিণতি ভোগ করছে ।
২০১৭ সালে Birkbeck University of London ও King's College of London এক গবেষণা করে ৭১৫ জন মা-বাবা’র ওপর এক জরিপ চালায়। এতে দেখা যায়, যেসব শিশু টাচস্ক্রীন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের রাতে কম ঘুম হয়। আর প্রায় ৭৫ ভাগ শিশু প্রতিদিন টাচস্ক্রিন ব্যবহার করে তাদের ৫১ শতাংশ হলো ৬ থেকে ১১ মাস বয়সী শিশু।
অনেক সময় দেখা যায়, ছয় বছরের শিশু ষাটোর্ধ বৃদ্ধের ন্যায় চশমা ব্যবহার করছে। দীর্ঘ সময় ধরে ইলেকট্রনিকস ডিভাইস ব্যবহারের রেডিয়েশনের প্রভাবে ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। শিশুর মস্তিষ্ক সঠিক সময়ে সঠিক উপাদান পায় না ফলে শিশু বিষাদগ্রস্হ ও বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। কায়িক পরিশ্রম কিংবা খেলাধুলা আগ্রহ হারিয়ে শরীরে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটতে থাকে।
বছর খানেক আগে, এক নিকট আত্নীয় তার আড়াই বছরের ছেলেকে নিয়ে আমার বাসায় বেড়াতে আসেন। তখন ছোট্ট ছেলেটির চঞ্চলতা ও এক্টিভিটি দেখে মনে হলো সে বড় হলো একস্ট্রা বুদ্ধিমান কিছু একটা হবে। কিছুদিন পর ছেলেটার অসুস্থতা শুনে খুব মর্মাহত হলাম।ছেলেটার শ্রবণ শক্তি ও স্মৃতি শক্তি লোপ পাওয়াতে তাকে দেখতে যাই। গিয়ে দেখি ছেলেটি আড়াই বছর বয়সে যা একটু আব্বু - আম্মু বলতো এখন সাড়ে তিন বছর বয়সে তাও বলতে পারে না। অনেক আলাপচারিতায় জানলাম, মা বাবা শিশুটির দুষ্টমি সইতে না পেরে প্রায়ই মোবাইল ফোন হাতে দিয়ে দিতেন। আর সে ইচ্ছেমতো বিভিন্ন গেমস, কার্টুন ইত্যাদি দেখে শান্ত থাকতে। কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে ডিভাইস ব্যবহার আস্তে আস্তে তার মানসিক বিকাশ লোপ পায়। এখন চিকিৎসা চলছে এর থেকে মুক্তি আদৌও মিলবে কি না জানা নেই। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এ ধরনের অপব্যবহার রোধ করতে পিতামাতার দায়িত্ববোধ ও সচেতনতা বৃদ্ধি একান্ত জরুরী বলে মনে হলো।
ভারী মন নিয়ে বাড়ি ফিরে ভাবলাম,
হায় প্রযুক্তি!
তুমি কত সহজেই দাও কুযুক্তি,
সুযোগ পেলে গুড়িয়ে দাও--
আছে যত ধব্জাধারী সুযুক্তি।
নোট-
১) প্রযুক্তির অশুভ প্রভাবে অদূর ভবিষ্যতে ক্যন্সারের চেয়েও ভয়াবহ রোগ সৃষ্টি করবে।
২) আধুনিক প্রযুক্তি -ফ্যাশনের আগ্রাসনে আকৃষ্ট হয়ে শিশুরা বিকৃতমনা হয়ে গড়ে উঠেছে।
৩) আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশ যতটা হচ্ছে ঠিক ততটাই একটি পরিবারে মা-বাবা ও শিশুর মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে।
আরো পড়ুন -
গড ইজ স্মাইলিংং টু'ডে,নোট -০১
ইউ আর এ পাকি বয়, নোট -০২
একজন বিদেশীনীর বঙ্গ দর্শন,নোট-৩
বন্ধুর কৃতজ্ঞতাও থ্রি ডাব্লিউ,নোট-৪
পুত্রসন্তান ও লালবাতি, নোট-৫
জুলুমের যাতনা, নোট ৬
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০১৯ সকাল ৯:০১