আমরা অনেক সময়ই বলি 'Let's talk' । এটা হালের অনেকগুলো ট্রেন্ডের একটা। কিন্তু সঠিক মানুষের সাথে কথা বলাটা আমার কাছে বেশ জরুরি মনে হয়। ফেসবুকে আমার শতশত বন্ধু আছে , কজনকে আমরা ব্যক্তিগতভাবে চিনি, কতজনের সাথে আমার কিছু 'কমন শেয়ারড এক্সপেরিয়েন্স 'আছে, কজন কথা বলতে চাইলে আমরা আসলে সত্যিই শুনতে চাইব এটা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে । সময়ের সাথে সাথে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলার প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে নিঃসন্দেহে। কিন্তু আমার মনে হয় যে এই ব্যাপারটাকে হালকাভাবে নেয়ার প্রবণতা ও বেড়ে গেছে। ব্যাপারটাকে এত সহজভাবে নেয়ার কিছু নেই । ব্যাপারটা যদি এত সহজ হত তাহলে ইউনিভারসিটিতে ক্লিনিকাল সাইকোলজি বিষয়ে গ্রাজুয়েশন তারপর পোস্টগ্রাজুয়েশন কিংবা মেডিকেল কলেজের গ্রাজুয়েশন শেষে ৫/৬ বছরের পোস্টগ্রাজুয়েশন ডিগ্রির প্রয়োজন হত না । আমরা অনেকেই জানি না যে আমার একজন বন্ধু বা আত্নীয় তার ডিপ্রেশন ,এংজাইটি বা সুইসাইড নিয়ে কথা বলতে চাইলে তার সাথে কিভাবে কথা বলতে হবে । যেহেতু সমাজে বিভিন্ন পেশার মানুষ আছে তাই সবার পক্ষে এসব নিয়ে পেশাজীবিদের মত ভালভাবে জানাটাও বাস্তবম্মত না । তাই আমাদের পরিচিত বা অপরিচিত কেউ যদি এমন কোন কন্ডিশনে থাকে সেক্ষেত্রে আমার মনে হয় সবচেয়ে ভাল হয় যে আমরা তাকে যদি কোন অভিজ্ঞ পেশাজীবির কাছে রেফার করি। যেতে উৎসাহিত করি । বন্ধু, আত্নীয় , ভাই-বোন , বাবা-মা হিসেবে আমরা অবশ্যই তাদের কথা শুনব । কিন্তু পরিস্থিতির তীব্রতার বিবেচনায় তাকে একজন মানসিক স্বাস্থ্যপেশাজীবির কাছে যেতে উৎসাহিত করাটাই হবে আমাদের সবচেয়ে ভাল পরামর্শ।
তবে এই জায়গাটায় আমার নিজের একটু কথা আছে। যেহেতু বিষয়টা একটা ট্যাবুর মতই ছিল এতযুগ ধরে তাই হুট করেই সব বদলে যাবে ভাবাটা ঠিক না। অন্যদিকে মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবিদের ( এক্ষেত্রে আমি সাইকিয়াট্রিস্ট আর সাইকোলজিস্টদের কথাই ভাবছি) সেবা নেয়া একটা ব্যয়বহুল ব্যাপার সেই ব্যাপারটাও কিছু ক্ষেত্রে অনেককে সেবা নেয়া থেকে নিরুৎসাহিত করতে পারে। সব মেন্টাল হেলথ কন্ডিশনের জন্য শুরুতেই হয়ত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ প্রয়োজন নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে ফার্স্ট রেস্পন্ডার হিসেবে বেশ কিছু কাউন্সিলর ( সল্প সময় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ) বা সাপোর্টগ্রুপ যদি আমাদের দেশে করা যায় এবং তাদের কাছ থেকে সাহায্য প্রাপ্তিকে যদি সহজলভ্য করা যায় তবে সেটাও আমাদের উপকারে আসতে পারে ।
আঠারো কোটি মানুষের জন্য আমাদের দেশে সাইকিয়াট্রিস্ট এর সংখ্যা শদুয়েকের আশেপাশে। সাইকোলজিস্ট বা কাউন্সিলর ও খুব বেশি সহজলভ্য না । চারপাশের এই প্রতিকূলতার মাঝে নিজেকে অনেক সাহস জোগাড় করে তারপর পেশাজীবীদের কাছে যেতে হয়। তাই Let's talk' কথাটার মানে এই হওয়া উচিত না যে আসো আমার সাথে কথা বল, এরপর আমি উপদেশ দেই আর তোমার মন ভাল হয়ে যাবে । ' Let's talk ' মানে হওয়া দরকার যে আসো কথা বলি এবং তারপর আমরা ঠিক করি তোমাকে সাহায্য করার জন্য কার কাছে যাওয়া উচিত , কার সাথে কথা বলা উচিত, একজন মানসিক স্বাস্থ্যপেশাজীবীর কাছে যাওয়া কোন দোষের না , তার কাছে শুধু বদ্ধ উন্মাদরাই যায় না , সাহায্য নিলেই তোমার সমাজে অন্য সবার মত কাজ করার যোগ্যতা বা ক্ষমতা কমে যায় না বরঞ্চ আমরা এই যে সমস্যাটাকে চিহ্নিত করতে পেরেছি , সমাধানের জন্য সাহায্য খোঁজার কথা ভাবছি এটাই তোমার মানসিক শক্তির প্রকাশ করে ।
এই বিষয়ে এত বিশাল একটা লেখা লিখে ফেলার মানেই এই না যে আমি আসলে ব্যাপারগুলো নিয়ে খুব জানি। আমি আসলে জানতে চাই এবং একটা গঠনমূলক আলোচনা করতে চাই । তাই আমার লেখার কোন পয়েন্টেই যদি কোন অসঙ্গতি থাকে কিংবা যদি কোন বিশেষজ্ঞ যদি দয়া করে কোন মতামত দিতে চান -আমি তার প্রত্যাশায় থাকব।