আমার ইদানিং খুব মনে হয় এই করোনাকাল আসলে আমাদের বয়সকালের 'ডিফাইনিং মোমেন্ট' । স্পানিশ ফ্লু, প্রথম আর দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ , হিরোশিমা-নাগাসাকি কিংবা বিভিন্ন দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম- আমার মনে হয় বিভিন্ন জেনারেশন তাদের জীবদ্দশায় কমপক্ষে একটা এমন 'ডিফাইনিং মোমেন্টের' সম্মুখীন হয়েছে। আমাদের যাদের মস্তিস্কের কুঠুরিতে অল্প কিছুটা হলেও মগজ অবশিষ্ট আছে , আমরা যারা কখনো একবার হলেও সেই মগজটা খাঁটিয়ে আশেপাশের সমাজ সভ্যতা পরখ করতে চেয়েছি তাদের অনেকেরই একবার হলেও মনে হয়েছে -এই সমাজ-সভ্যতা মেরামতের অযোগ্য । যদি না হুট করে কিছু এসে সব কিছু লন্ডভন্ড করে দিয়ে যায়। এই করোনাকাল হল সেই লন্ডভন্ড করার মৌসুম। এমনটা আশা করাই বাতুলতা যে এই মহামারী যখন শেষ হবে তখন শুধু যারা ভাল তারাই টিকে থাকবে। এই বানের স্রোতে ভেসে যাবে এবং ইতমধ্যে যাচ্ছে সমাজের সব স্তরের মানুষ। এই মহামারী আমাদের দেখিয়ে দিচ্ছে যে আসলে সমাজের কোন কোন স্তরে পচন ধরেছে। এই মহামারীতে আমরা নিজেদের কোল্যাটেরাল ড্যামেজ বলে নির্দোষ সাজার আসলে কোন অবকাশই নেই । নজরুল বলেছেন ' দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা , শুধিতে হইবে ঋণ'। এখন সময়টা আমাদের ঋণ পরিশোধের। সমাজের হিস্যা হয়েও যখন আমরা চুপ ছিলাম আর কেউ আমাদের ভোট চুরি করেছে, কেউ রডের বদলে বাঁশের পিলার গড়েছে, হাসপাতালের বরাদ্দের টাকা মেরেছে , বিনা বিচারে মানুষ মেরেছে , বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের আদব কায়দা শেখানোর ছলে খুন করেছে , খাবারে ভেজাল দিয়েছে আর আমরা পা চাটতে চাটতে নিজেদের জিহবা সমতল করেছি কারণ এই পরিস্থিতিগুলোর একটাও তখন আমাদের সরাসরি আঘাত করেনি। এখন সেই চুপ থাকার মাশুল দিচ্ছি আমরা সবাই। কারো মা ,বাবা, দাদা, দাদী , স্ত্রী কিংবা সন্তান আজ মরে যাচ্ছে । একটুকু অক্সিজেন এর অভাবে পথে পথে ঘুরতে ঘুরতে শেষ নিঃশ্বাস ফেলছে। আমাদের সিস্টেমের কোন কোন জায়গায় আসলে ঝামেলা সেটুকু বোঝার জন্য আপনার খুব কাছের একজনের এই মহামারিতে অসুস্থ হওয়াই যথেষ্ট।
আমি খুব বিনীতভাবে আপনাদের সবাইকে নিজ নিজ হাত দেখতে বলব। দেখবেন সেই হাত রক্তে টকটকে লাল হয়ে আছে । এতগুলো মানুষকে খুন করার রক্ত । এই মহামারীও যদি আপনাকে সেই রক্ত দেখার চোখ তৈরি করে দিতে না পারে তাহলে আপনার আসলে নিজেকে মানুষ ডাকা উচিত কিনা তা নিয়ে আবার ভাবুন।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০২০ ভোর ৫:১৪