somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এনজাইমের গল্প

০৭ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৩:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


করোনার এই সময়টায় একটা শব্দ আমরা সবাই কমবেশি শুনেছি। যে টেস্টের মাধ্যমে করোনা শনাক্ত করা হচ্ছে তার নাম হচ্ছে আর টি পিসিআর। অর্থাৎ রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন পলিমারেজ চেন রিএকশন। এই টেস্ট সম্ভব হচ্ছে একটা এনজাইমের কারণে । রিভার্স ট্রান্সক্রিপ্টেজ। আজকে এই এঞ্জাইমের গল্প বলব।
রাউস নামে এক বিজ্ঞানী লক্ষ্য করেন যে মুরগির এক ধরণের ক্যান্সার হচ্ছে যেটা এক আক্রান্ত মুরগি থেকে নিয়ে আরেক মুরগিতে ইঞ্জেক্ট করলে তাতেও সেই ক্যান্সার হচ্ছে। সময়টা ১৯১১ সালের দিকে। তখনকার জানা তথ্য অনুযায়ী ক্যান্সার এর এমন আচরণ করার কথা না। সেই ক্যান্সারের নাম হয়ে গেল রাউস সারকোমা। ধারণা করা হল মুরগিতে এক ধরণের ভাইরাস আছে যার মাধ্যমে সেই ক্যান্সারটা ছড়াচ্ছে। ভাইরাস দিয়ে ক্যান্সার হবার ঘটনা একদমই একটা নতুন ধারণা ছিল তখনকার জন্য। লুডভিক নামে এক বিজ্ঞানী তার বেশ অনেক বছর পরে খেয়াল করেন ইঁদুরের এক ধরণের লিউকেমিয়া ( রক্তের ক্যান্সার) এক ইঁদুর থেকে আরেক ইঁদুরে ছড়াচ্ছে। প্রথমে ধারণা করা হল যে ব্যাপারটা বোধহয় জেনেটিক কোন ডীফেক্টের কারণে হচ্ছে। কিন্তু লুডভিক ধারণা করলেন যে এটা কোন একটা ভাইরাস যেটার মাধ্যমে ইঁদুরের মিউরিন লিউকেমিয়া ছড়াচ্ছে। তখন পর্যন্ত ক্যান্সারের গবেষণায় যতটুকু জ্ঞান ছিল তার ভিত্তিতে ভাইরাস দ্বারা ক্যান্সার হওয়া ব্যাপারটাকে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছিল না। তাই লুডভিক কে বিজ্ঞানী সমাজে পাগল ভাবা হতে লাগল।

জেনেটিক্সে সেন্ট্রাল ডগমা বলে একটা নীতি আছে। যেটাকে সোজা বাংলায় বললে এইভাবে বলা যায়, ডিএনএ থেকে আরএনএ এবং আরএনএ থেকে প্রোটিন তৈরি হয়। ডিএনএর ডাবল হেলিক্স এবং এই সেন্ট্রাল ডগমার আবিষ্কারের সাথে জড়িত একজন নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী ক্রিক। তার নামে ডিএনএর ওয়াটসন ক্রিক মডেল।তখনকার সময়ে সেন্ট্রাল ডগমাকে খুব সম্মানের চোখে দেখা হত। এর যে ব্যাতিক্রম হতে পারে এটা বিজ্ঞানীরা মানতেই রাজি ছিলেন না । যারাই ভাইরাস দিয়ে ক্যান্সার হবার কিংবা সেন্ট্রাল ডগমায় ব্যতিক্রমের কথা তোলার সাহস করছিলেন তাদের কে বিজ্ঞানীরা ভাল চোখে দেখছিলেন না। তাদের আর্টিকেল কোন জার্নাল প্রকাশ করতে চাইছিল না।
আরেক বিজ্ঞানী হাওয়ারড টেমিন রাউস সারকোমা নিয়ে গবেষণা করছিলেন অনেক বছর। তিনিও ব্যাপারটাকে ব্যাখ্যা করতে না পেরে বিজ্ঞানী ক্রিককে চিঠিও লেখেন যে সেন্ট্রাল ডগমায় হয়ত সংশোধন আনার প্রয়োজন হতে পারে। তখনকার নোবেলজয়ী প্রভাবশালী বিজ্ঞানী ক্রিক তার কথায় পাত্তা দিলেন না। কিন্তু হাওয়ারড টেমিন বছরের পর বছর তার গবেষণা জারি রাখলেন। তিনি গবেষণা করছিলেন রাউস সারকোমা ভাইরাস নিয়ে । একই সময়ে মিউরিন লিউকেমিয়া ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করছিলেন টেমিন এর পুরনো বন্ধু ডেভিড বাল্টিমোর। তারা একই সময়ে আলাদা ভাবে দুটি ভিন্ন ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করে এক যুগান্তকারী আবিষ্কার করেন। একটা এনজাইম। সেন্ট্রাল ডগমায় ডিএনএ থেকে আরএনএন তৈরি হবার প্রকিয়া কে ট্রান্সক্রিপশন বলা হত। ধারণা করা হত এর উলটো সম্ভব না। কিন্তু তাদের সেই এনজাইম রিভার্স ট্রানশক্রিপশন করে যেটা বিজ্ঞানের জগতে এক বিশাল সাড়া ফেলে দেয়। রিভার্স ট্রান্সক্রিপ্টেজ এনজাইমের আবিষ্কার পরবর্তীতে আরো অনেক ভাইরাসের আবিষ্কার এ ভূমিকা রাখে। বিজ্ঞানী গ্যালো এ থেকে অনুপ্রানিত হন। পরবর্তীতে তিনি এই মূলনীতির ভিত্তিতে মরনব্যাধি এইডস এর ভাইরাস আবিষ্কার করেন।
রিভার্স ট্রান্সক্রিপ্টেজ চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এক অনন্য আবিষ্কার হিসেবে বিবেচিত হয়। এইডস , হেপাটাইটিস এর মত রোগের ভাইরাস শনাক্তকরনে , অনেক এন্টি ভাইরাল ড্রাগ আবিষ্কারে এটা মূল হিসেবে কাজ করেছে। বিশ্বজুড়ে এখন অনেক রোগের ডায়াগনসিস করতে রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেজ এর মূল নীতি পিসিআর এ ব্যবহার করা হচ্ছে।
করোনার এই বিশ্বমহামারীর সময়ে আমরা অতি সহজেই বুঝতে পারি কি অসাধারণ একটা আবিষ্কার ছিল এই রিভার্স ট্রান্সক্রিপ্টেজ। এবং এই আবিষ্কার সম্ভব হয়েছিল কিছু একরোখা বিজ্ঞানীর প্রচলিত নিয়মের বাইরে গিয়ে চিন্তা করার , সবার সমালোচনা উপেক্ষা করে নিজের বিশ্বাসে অটল থেকে বছরের পর বছর কাজ করে যাওয়ার মানসিকতার জন্য।
বিজ্ঞানী বাল্টিমোর আর টেমিন কে ১৯৭৫ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল দেয়া হয়। এই বিষয়ে আর জানতে নিচের পডকাস্ট টি শুনতে পারেন ।
http://revisionisthistory.com/episodes/40-the-obscure-virus-club

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৩:০৭
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×