১৮৯৪ সালে হংকং এ ফ্রেঞ্চ ব্যাক্টেরিওলজিস্ট আলেকঞ্জান্ডার ইয়ারসিনিয়া প্লেগের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কার করেন। ১৮৯৮ সালে প্লেগ ছড়ানোর মাধ্যম আবিষ্কার হয়। প্লেগ নিয়ে গবেষণায় এই দুই আবিষ্কার বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ সরকার ইন্ডিয়ায় প্লেগের প্রাদুর্ভাবে বেশ বিচলিত হয়ে পড়ে। তারা রাশান বিজ্ঞানী ওয়াল্ডেমার হ্যাফকিন কে প্লেগের ভ্যাক্সিন আবিষ্কারের জন্য নিয়োগ দেয়। হ্যাফকিন তখন পাস্তুর ইন্সটিটিউটে কাজ করতেন। তিনি ভারতে এসে গ্রান্ট মেডিকেল কলেজের বারান্দায় ছোট্ট একটা ল্যাবরেটরিতে কাজ শুরু করেন। প্রায় তিনমাস গবেষণায় তিনি প্লেগের একটা ভ্যাক্সিন আবিষ্কার করেন।
১৮৯৭ সালে তিনি প্রথম নিজের উপর এই ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করেন। পরবর্তীতে জেলখানার কয়েদীদের উপর এই ভ্যাক্সিনের ট্রায়াল চালানো হয় এবং ভাল ফলাফল পাওয়া যায়। প্লেগ ভ্যাক্সিনের গবেষণায় কালের পরিক্রমায় আরো উন্নতি হয়েছে। শুরুর দিকে মৃত ব্যাক্টেরিয়া ব্যবহার করে ভ্যাক্সিন বানানো হত। কিন্তু দেখা যায় যে প্লেগের তিনটা টাইপ ( বুবোনিক, নিউমোনিক আর সেপটিসেমিক ) এর মধ্যে নিউমোনিক প্লেগে এই ভ্যাক্সিন ভাল কাজ করছে না। এখন জীবিত কিন্তু নির্বিষ ব্যাক্টেরিয়া আর রিকবিনেন্ট ডি এন এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরো উন্নত ভ্যাক্সিন আবিষ্কার করা হচ্ছে।
প্লেগ ভ্যাক্সিন নিয়ে গবেষণা এখনো শেষ হয় নি। যদিও পৃথিবীতে প্লেগের প্রাদুর্ভাব কমে গেছে অনেকটাই তবে এরোগ নির্মূল হয়ে যায় নি। লিপিবদ্ধ মানবসভ্যতার ইতিহাসে দেখা যায় কমপক্ষে ২০০ মিলিয়নের মত মানুষ প্লেগে জীবন হারিয়েছে। এখনো পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিবছর কিছু মানুষ প্লেগে মারা যাচ্ছে। তাছাড়া প্লেগের জীবাণু যুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার কৌশল অনেক অনেক শতাব্দী প্রাচীন। আর তাই প্লেগ ভ্যাক্সিনের গবেষণায় ওয়াল্ডেমার হ্যাফকিন এর অবদান অনস্বীকার্য ।