somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যত ভাবি, তালা-চাবি

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক বিলম্বে হইলেও বুঝিলাম, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ কেন ’ভেঙে মোর ঘরের চাবি...’ লিখিয়াছিলেন বা গাহিয়াছিলেন। আসলে তাহার একবার ঘরের চাবি হারাইয়া গিয়াছিল। বাইরে কনকনে শীতে দাঁড়াইয়া ছিলেন। খুঁজিতেছিলেন, চাবি সারাইবার মিস্ত্রি। রাত বাড়িতেছিল, মিস্ত্রির দেখা না পাইয়া, এই দুর্দশা লাইয়া একখানি প্রেমগীত লিখিবার উদ্যোগ গ্রহণ করিলেন। দারোয়ানকে ডাকিয়া বারান্দায় পিলসুজ জ্বালাইয়া লিখিয়া ফেলিলেন, হৃদয়স্পশী গানখানি। কিন্তু সেই রাতে আর দরজা খোলা হইলো না। নিদারুণ শীতে বাহির বারান্দায় বসিয়া আরো বেশ কয়েকটি কবিতা লিখিলেন। তিনি আসলে তালা ভাঙিবার কথা লিখিতে গিয়া, চরম বিরক্তিহেতু গুলাইয়া ফেলিয়াছিলেন তাই, লিখিত হইয়া গিয়াছিল চাবি ভাঙিবার কথা।
বন্ধুরা মাফ করিবেন। আমার মাথা ঠিক নাই। এতক্ষণ যাহা বলিলাম, তাহা বানোয়াট। আমার মাথাও বিরক্তিহেতু গুলাইয়া গিয়াছে। এখন মস্তিষ্ক ঠাণ্ডা করিতে গুরু ঠাকুরের স্মরণাপন্ন হইয়াছি। আসল কথা হইতেছে, বাসায় স্ত্রী ছিলেন না। সামান্য শীত বাড়িয়াছে বুঝিয়া শীতল বায়ু সেবন, সেসঙ্গে ভাজা ছোলাবুট কিনিবার জন্য ঘরের বাহির হইয়াছিলাম। খুব আয়েশ করিয়া খাইব ভাবিয়া সবকিছু কাগুজে ঠোঙায় লইয়া ফিরিয়াছি। তালা খুলিবার জন্য পকেট হইতে চাবি বাহির করিতে গিয়া জিহ্বায় কমড় খাইলাম। ইহা, আমার অফিসের চাবি। কিরুপে খুলিবে দুয়ার? বিষয়টি নিয়া একখানি সভার মতো করিলাম, গৃহকর্তার কক্ষে গিয়া। সেইখানে সুস্বাদু বিস্কিট আর চা খাইয়া, ঘরে ঢুকিবার টান মিইয়ে পড়িল। আমার গৃহস্থ সহকারীদীগকে ডাকিয়া বিকল্প চাবি খুঁজিলাম। উহারা পাগলের মতো খুঁজিল। আমি বলিলাম তালা ভাঙিয়া ফেল। ইহা বলিতে এক্কেবারে পানি হইলেও কাজটি যেন বেসম্ভব হইয়া উঠিল। চকককে ইস্পাতের তালার ওপর হাতুরি চলিতেছে, তালা যেন হাসিতেছে। আশপাশ প্রকম্পিত হইতেছে। পাশ্ববর্তী বাসিন্দারা ভাবিতেছেন, এইখানে নতুন কোন নির্মাণ কাজ শুরু হইয়াছে। ঢাকা শহরে ইহা নিত্যকার বাস্তবতা। ওই শব্দ সহ্য করিতে না পারিয়া আমি একেবারে ডিআইটি সড়কে গিয়া ট্রাক, সিএনজিসহ অন্যান্য পরিবহনের গর্জন শুনিতেছি। তাহাও সুমধুর লাগিতেছে। ভাবিতেছি, বাসায় না ঢুকিতে পারিলে, অদ্য রাত্তিরে বিলাশবহুল কোন হোটেলে রাত্রী যাপন করিলে মন্দ হয় না। বিদুষী স্ত্রী আমার একটি বিবাহ খাইয়া ফিরিতেছিলেন। খবর জানিয়া বলিলেন, আমি ফিরিতেছি না। তুমি গৃহকর্তার সঙ্গে কথা বলিয়া তাহার অতিথিশালায় রাত্রী যাপনের জন্য তাহাকে প্রস্তাব করিয়া দেখ। আমার বন্ধঘরের খাবার টেবিলে সাজানো খাদ্যের কথা মনে পড়িয়া বুকটা শূণ্য হইয়া গেল। আহা চাবি কত দরকারি। চাবি ছাড়া মানব জীবন যেন অচল। ভাবিতেছি ওই চাবিটির কথা, যেটি দিয়া মাঝে মাঝেই কট্ করিয়া তালা খুলিয়া ফেলি। ওই চাবিটিকে মনে হইতেছে আমার অতীব প্রিয়বস্তু। উহা এখন আমার বন্ধ ঘরের দেয়ালের একটি হুড়কোর সঙ্গে ঝুলিতেছে আর হাসিতেছে।
অফিসে ফোন করিলাম। কারিগরী বিভাগের রাত্রীকালীন দায়িত্বশীলদের একজনকে তালা ভাঙিবার যন্ত্রপাতি দিয়া একানি চার চাকা শকটে পাঠাইবার জন্য অভ্যর্থনাকে অনুরোধ করিলাম। তাহারা বলিল, দেখিতেছি। কারিগরী বিভাগ হইতে আরিফ সদলবলে যন্ত্রপাতি লইয়া রওয়ানা হইলো। ভাবিলাম, উহা হইবে রাত্রীকালীন শেষ প্রচেষ্টা। না হইলে এই রাত্তিরে প্রিয় কক্ষযুগল আমাকে দেখিতে পারিবে না। আমার দুইজোড়া কবুতর ভিন্নরকম রাত্রী কাটাইবে। দুশ্চিন্তা হেতু হয়তো রাত্তির ছন্দময় করিয়া বাক বাকুম ডাকিবে না। রাস্তার দিকে তাকাইয়া ভাবিতেছি, আহা আমার মতো কেহ কি আর আছেন, যাহার জলজ্যান্ত বাসস্থান থাকিয়াও গৃহহীন হইয়া রাস্তায় যাপন করিতেছে এই মাঘের শৈত্য?

ভাবনার ইন্দ্রজাল ভাঙিয়া গেল। আমার কর্মসহকারী শ্রাবণ সরেন ফোন করিয়াছে। স্যার, তালা কাটা গিয়াছে। যেই তালা দৃঢ়তা একদা ভীষণ নিশ্চিন্ত করিয়াছিল, আজ তাহা ভাঙিবার কিংবা কাটিবার সাফল্যে যেন উহারা নিজেকে মুসা ইব্রাহিম ভাবিতেছে। আমিও কিছুটা মুহিতের মতো বীরত্ব মাখাইয়া গদগদ গলায় স্ত্রীকে নিশ্চিন্ত করিলাম, তালা কাটিয়া ফেলিয়াছি। ইহার কৃতীত্বের জন্য তিনি তালা কাটিবার কারিগর হিসাবে পাশ্ববর্তী গার্মেন্টস্ এর দারোয়ানকে বখশিশ প্রদান করিবার পরামর্শ করিলেন। আমি অফিসের কারিগরী দলকে রাস্তা হইতে ফিরাইলাম।

আমার কর্মসহকারীদীগের একজন, যাহার নির্বুদ্ধিতায় এই চাবি জটিলতা, সে আমার বাদাম-বুটের তিনটি ঠোঙ্গা লইয়া, আমার কাছে আসিল। আমি ভুলিয়াই গিয়াছি, কী ভাবিয়া এইসব বাজে জিনিস কিনিয়াছিলাম।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×