পীর সাহেবের দরবারে (রম্য চিঠি)
সংগ্রহে : সাইফুল ইসলাম
সংগ্রহের স্থান : sonarbangladesh.com
মোজাদ্দেদে জামান, গাউসুল আজম, শায়খুল মাশায়েখ, আমীরে শরীয়ত, বাহারে তরীকত, নওয়াবে হাকীকত, রাহবারে মারেফাত, মাহবুবে ছোবহানী, কুতুবে রাব্বানী, ছৈয়দে ছামদানী, এশকে হামদানী, বারকাতে রুহানী, হযরতুল আল্লামা, জনাব মাওলানা, হাজী, গাজী, কাজী, ক্বারী, মুন্সি, মোহাম্মদ তদারক উল্লাহ ফরায়েজী সাহেব মাদ্দাজিল্লহুল আলী, দা মাত বরকাতিহুমুল আলীয়াহ। আসছালামু আলাইকুম............।
হুজুর, আমি অধম, নাপাক, নাখাস্তা, নালায়েক, পাপী, বদবখত, অকৃকজ্ঞ, গুনাহগার খাদেম, হুল মিয়া। একদা আপনার দরবার শরীফে তশরীফ নিয়াছিলাম। আপনার বহু গুণ ও কেরামতির খবর শুনিয়া, আপনার দরবারের নিয়োগকৃত খলিফা ওলী মিয়ার কথায় সম্মোহিত হইয়া, বিদেশ যাওয়ার জমানো সমূদয় টাকা ভাঙ্গাইয়া আপনার মূল্যবান-পুণ্যবান চেহারা মোবারক দেখিতে আপনার দরবার শরীফে উপনিত হইয়াছিলাম। দূরের রাস্তার হাজারো ঝক্ষি ঝামেলা পোহাইয়া ওলি মিয়ার সাথে আপনার দরবারে ছহিছালামতে পৌঁছাই। দরবারের বিশাল তোরণ দেখিয়া ও তোরনে লিখা উক্তি পড়িয়া, মনের আনন্দে ছফরের সকল দুঃখ কষ্ট নিমেষেই উদাও হইয়াছিল। আপনার দরবারে উপস্থিত হাজারো মুরীদ-মুর্শীদকে ঠেলিয়া, গায়ের সমুদয় শক্তি বুকে নিয়া, ধাক্ষা-ধাক্ষি করিয়া, এমনকি বহু ছল চাতুরীর আশ্রয় নিয়াও আপনার খুব কাছাকাছি পৌঁছিতে পারি নাই। আপনাকে একটু নিজ হাতে ধরিবার কিংবা আপনার পদ যুগলে একটু চুম্বন করিবার বাসনা পূরণ ব্যর্থই হইল। নিজের সকল পাপ মোছনের জন্য, বিদেশ যাওয়ার সমূদয় অর্থ খরছ করিয়া, আপনার কাছাকাছি হইয়াও, সানিধ্যে যাইতে পারি নাই। এই দুঃখ আমাকে চিরকাল জ্বালাতন করিবে। আমার টাকা পয়সা সবই গিয়াছে এটা নিয়ে চিন্তা করিনা। তবে আপনার সাথে কথা বলিতে পারি নাই, আপনাকে একটু ছুঁইতে পারি নাই, এই ব্যর্থতা আমাকে চিরকাল আঘাত করিয়া ছাড়িবে। এটাই আমার জীবনের বড় দুঃখ হইয়া চিরকাল সাথে সাথে থাকিবে।
হুজুর আপনার বহুত কেরামতির কথা শুনিয়া, আপনাকে নিজ চোখে দেখিতে স্বীয় দরবার শরীফে গিয়াছিলাম। তবে সরাসরি আপনার সাক্ষাৎ না পাইলেও আমি আপনার বহু কেরামতির নমুনা চোখে দেখিয়াছি, কানে শুনিয়াছি, অন্তরে উপলব্ধি করিয়াছি। যাহা দু কলম লিখিতে না পারিলে, আমি অধম মুরীদের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি অশ্রদ্ধা হইবে বলিয়া মনে করি। লোকমুখে শুনিয়াছি আপনার নূরানী মুখমন্ডল দেখিলে নাকি বহুত পুণ্য অর্জিত হয় এবং বেশুমার গুনাহ মাফ হইয়া যায়। সেজন্য দলে দলে, আপনার পুণ্য মুখশ্রী দর্শনে মানুষকে ঠেলাঠেলি করিতে দেখিয়াছি। আপনার মোটা ভ্রু, চ্যাপ্টা নাক, ক্রিম কালারের দাঁড়ি, সুরমা মাখা চোখের অনিন্দ সুন্দর পূত-পবিত্র মুখখানা দূর হইতে দেখিয়া নিজেকে পূলকিত ও গর্বিত অনুভব করিয়াছি।
হুজুর, আপনার পবিত্র মুখদর্শনে আমার গর্বিত হওয়ার পাশাপাশি বহু নিঃসন্তান রমনীকে দেখিয়াছি দরবারের বারান্দায় বড় আশা নিয়ে ঘুরাঘুরি করিতে। একটি সন্তানের আশায় রমনীরা গর্ভিত হইবার জন্য, আপনার দেওয়া পানি পড়া ও তেল পড়া ইজ্জতের সহিত লইয়া যাইতেছে। দরবারে কোন নারী তার স্বামীর সাথে, কেউবা পিতার সাথে, কেউবা মায়ের সাথে, কেউবা ভ্রাতার সাথে আসিয়াছেন। আপনার মহামূল্যবান সাক্ষাতের জন্য দরবারের বাহিরে তাঁদের সলককে লম্বা লাইনে দাঁড়াইয়া থাকিতে দেখিয়াছি। কাহারো হাতে দেখিলাম বোতল ভরা পানি, কাহারো আঙ্গুলে পেঁচানো সূতা, কাহারো রসির মাথায় পেঁচানো তাবিজ, অনেকের হাতে পবিত্র সনালু গাছের লাটি সমেত দরবারের অভ্যন্তর হতে বাহির হইতে দেখিলাম। কাহারো হাতে আপনার মোবারক শরীর ধৌত গোসল শরীফের শিশি ভরা পানি। বরকতের আশায় কাহারো চশমায়, আংটিতে, কানফূলে, মোবাইলের হুকে, আপনার পরিধের বস্রের সুতা পেঁচানো। তাঁদের মুখ দেখে অনুমান হইল তাঁরা বিজয়ী হইয়াছেন, অচিরেই তাঁরা গর্ভবতী হইবেন বলিয়া নিশ্চিন্ত মনে দরবার ত্যাগ করিতেছেন।
হুজুর, বাস-টেক্সিতে করিয়া, দোলনায় দুলিয়া, পালকিতে চড়িয়া, রিক্সায় বসিয়া, পায়ে হাঁটিয়া কিংবা কারো পিঠের উপর ভর করিয়া, প্যারালাইসিস, পঙ্গু, প্রতিবন্ধী, বোবা ও কানা রোগীকে আপনার হুজুরী খানার সামনে লাইন ধরিয়া, তীর্থের কাঁকের মত হাঁ করিয়া দাঁড়াইয়া থাকিতে দেখিয়াছি। আরো দেখিয়াছি বহুমূত্র, প্রেসার, জন্ডিস, হাঁপানি, একজিমার রোগীকে, যাহারা আপনার মূল্যবান সাক্ষাতের জন্য রাস্তায় উপর পেটের খিদে নিয়া বসিয়া আছেন। যারা আপনার দরবার হইতে বাহির হইতেছেন তাদের হাতে বিভিন্ন রোগের, বিভিন্ন আকৃতির তাবিজ-কবজ দেখিলাম। টেকো মাথার মানুষকেও দরবার হইতে চূল গজাবার তৈল পড়া নিয়ে হাসিমুখে বাহির হইতে দেখিলাম। বিয়ে হচ্ছেনা এমন কুশ্রী মেয়েকে নিয়ে দুঃচিন্তাগ্রস্থ বাবাকে দেখিলাম তেল সমেত আপনার দরবার হইতে হাসিমুখে বাহির হইতে। চামড়া কিসমিসের হইয়াছে, এমন বুড়িকে দেখিলাম আপনার নিকট হইতে তৈল পড়া জোগাড় করিতে। শুনিলাম আপনার পড়া তৈলের কল্যাণে বুড়ির শরীরের চামড়াও নাকি যৌবনকালের ন্যায় উজ্জ্বল-উচ্ছল আর আঙ্গুরের মত মশৃন হবে। যাহারা আপনার দর্শন পাইয়াছে, তাহাদের সকলের চেহারায় বিজয়ের হাঁসি, মুখে আনন্দের বন্যা বইতে দেখিলাম। অপেক্ষমান সবাইকে আপনার বিভিন্ন কারামতের প্রশংসা করিতে দেখিলাম।
হুজুর, আপনার দরবারের দুইপাশে সারি সারি দামী গাঁড়ি দেখিতে পেয়েছিলাম। গাড়ীওয়ালা কাউকে গাড়ী থেকে নেমেই, সরাসরি দরবারের অভ্যন্তরে ঢুকিতে দেখিলাম। তাহাদের কাউকে আপনার দর্শন শেষে, দাঁত খিলাল করিতে করিতে দরবার হইতে বাহির হইতে দেখিলাম। তাহারা নাকি দরবারের সর্ম্মানিত মেহমান, সেজন্য তাহাদের লাইনে দাঁড়িয়ে তকলিফ করিতে হয়না। আপনার দর্শনে সম্মানিত মেহমানদের যত জনই আসিল, তাহাদের হাতে বিভিন্ন কিসিমের উপহার সামগ্রী দেখিলাম। আমি মূর্খ মানুষ এসব জিনিষ চিনিবার কথা নয়, তবে আকল দিয়া বুঝিতে পারিলাম এর সবই দামী জিনিষ হইবে। আপনার নিয়োগকৃত খলিফা ওলী মিয়ার নিকট জানিতে চাইলে তিনি জানাইলেন। তাহাদের কেউ বিদেশে থাকেন, কেউ বিদেশে যাইবেন। অনেকে দেশে বড় চাকুরী করেন অনেকেই বড় ব্যবসায়ী। তাহাদের বিভিন্ন নিয়ত আছে, নিয়ত পূরণের জন্যই আপনার দরবারে আসিতেছেন। অনেকেই আসিয়াছেন টেন্ডারের জন্য দোয়া চাইতে। কাহারো নিয়ত কাষ্টমস্� এ আটকানো মাল ছহি ছালামতে উদ্ধার পাইতে, কেউ এসেছেন দূদকের দেওয়া মামলা থেকে রক্ষা পাইতে। আবার কেউ আসিয়াছেন ইটের ভাটায় ভাল ইট তৈরী হচ্ছেনা বলে ইটের দোয়া নিতে। কেহবা আসিয়াছেন তাহার অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যত জানিতে। শুনিলাম আপনি নাকি চোখ বন্ধ করা মাত্রই অতীত বর্তমান ভবিষ্যত দেখিতে পান। আপনার জন্য চোখের পলকে মক্কা-মদিনা, বোগদাদ শরীফ দেখানো কোন ব্যাপার নয়। একজনকে দেখিলাম লম্বা চুল, ধান কাটা কাঁচির মতো দাঁড়ি, টোঁঠে কানফুল লাগানো। যাঁহাকে পিছনের দিকে দেখিতে মহিলার মতন সামনের দিকে গেলে লাগে পুরুষের মতন। এই ব্যক্তি আসিয়াছেন গ্রীন কার্ডের জন্য ডিজিটাল দোয়া নিতে। ওলি মিয়া কহিলেন, হুজুরের কাছে গ্রীন কার্ড, ডিবি লটারী থেকে শুরু করে প্রবাসীদের সকল সমস্যা সমাধানের জন্য অনেকেই দরবারে আসেন। আপনিও সাথে সাথে তাহাদের সমস্যা সমাধান করিয়া থাকেন। গ্রীন কার্ড, ডিবি লটারী কি জিনিষ জানিতে চাহিলে, ওলি মিয়া বিরক্ত হইলেন এবং বেশী বেশী প্রশ্ন করিতে নিষেধ করিলেন, সেটা নাকি হুজুরের নির্দেশ।
হুজুর, আপনার দরবারে আঙ্গিনায়, কাউকে দেখিলাম পরকালের সওয়াবের আশায় গানের তালে তালে হালকায়ে জিকির করিতে। নারী পুরুষ সবাই একসাথে জিকিরে মত্ত হইল, খুবই পূলকিত হইলাম। আমার জিলার মোল্লা হুজুরেরা এই কিসিমের জিকিরের নিয়ম জানেনা বলেই মনে হইল। হারমোনিয়ামের সূর আর ঢোলের বাড়িতে নারী-পুরুষ সবাই মতোয়ারা হইবার উপক্রম হইল। সবার দিলে তখন অন্য জগত, ওলী মিয়া কহিল এটার নাম মারফত। মারফতের নাম বহু শুনিয়াছি কখনও দেখিনাই। আপনার দরবারে আসিবার পরই মারফতের দৃশ্য ও নমুনা দেখিলাম এবং নিজেকে বড় ধন্য মনে করিলাম। আপনার সম্মানিত কতক মুরীদানদের দেখিলাম তাঁহারা বেহুশের মতো পড়ে আছে যেখানে সেখানে। ওলি মিয়া জানাইলেন তাঁহারা নাকি হালকায়ে জিকিরের গভীর জযবায় হুঁশ হারিয়ে ফেলেছেন। কাউকে দেখিলাম গাছের কলকির ভিতর কি জানি ভরিয়া তাহাতে আগুন লাগাইয়া, হুঁক্কার মত সুখ-আনন্দে ধুমপানের মত কিছু পান করিতেছেন। সবাইকে দেখিলাম বৃত্তাকারে বসিয়া-দাঁড়াইয়া খুব ইজ্জত-এহতেরামের সহিত কলকি থেকে কিছু একটা টানিতেছেন। শান্তভাবে, ভদ্রতা সহকারে ছওয়াবের নিয়তে তাহাদেরকে এভাবে কল্কি টানিতে দেখিয়া আমারও একটু টানিবার বাসনা হইল। ওলি মিয়া জানাইল সর্বনাশ, এটা পান করিতে হইলে তরিকতের আরো গভীরে যাইতে হইবে। নতুবা বমি করিয়া, মাথা ঘুরাইয়া জমিনের উপর আছাড় খাইয়া পড়িব। হতেও পারে আর কোনদিন উঠিতে পারিব না। তবে ওলি মিয়া সেখান থেকে নির্গত ধূম শূন্য থেকে একটু-আধটু টানিবার সুযোগ করিয়া দিলেন। তরিকতের কল্কিথেকে উত্থিত সেই ধুম, একটুখানি নাকে টানিয়াই আমি ভূমিতে ধসিয়া পড়িলাম। পরদিন সকালে নিজেকে অর্থকড়ি সব হারিয়ে এক বস্রে উদ্ধার করিলাম। তখন বুঝিতে পারিলাম তরিকতের অনুসারী হিসেবে আমার অবস্থান কত নিচে।
হুজুর, চুল-মোচ-দাঁড়ি জঠলা পাকানো, আলকাতরা মিস্রিত বস্তা পড়িধানকারী কাউকে উদাস মনে চলিতে দেখিলাম। ধারনা হইল এদের জন্য গোসল করা নিষেধ। নাকের কফ মোচের সাথে মিশিয়া মুখে নতুন রঙ্গের মোচদন্ড সৃষ্টি হইয়াছে। তাঁহাদের দাঁড়ি-মোচ-চুল জটলা পাকাইয়া বটগাছের ঝুলন্ত মূলের ন্যায় ঝূলিতে দেখিলাম। তাঁহারা শরীরের নিচের অংশ আবৃত করার চেয়ে ঊপরের অংশ আবৃত করার প্রচেষ্টা বেশী করেন বলিয়া মনে হইল। কৌতুহলী মানুষ তাঁদের শরীরের সবকিছু দেখিতে পায়। ওলি মিয়া জানালেন এরা বড় বুজুর্গ, আল্লাহর পেয়ারা বান্দাহ, তাদের কাছে কি আছে তা কেউ জানেনা। প্রকৃতপক্ষে দুনিয়াতে তারাই আল্লাহকে পেয়েছেন। ওলি মিয়াকে কহিলাম তাহাদের কাছে কি আছে, এটাতো না জানার কথা নয়? একটু খেয়াল করিয়া তাকালেই তো তাহাদের সব দেখা যায়, কোন কিছু্�ইতো গোপনীয় নাই। ওলি মিয়া বড় অসন্তুষ্ট হইয়া কহিল, �আমি বলিমাম এক জগতের কথা আর আপনি বুঝিলেন অন্য কথা�। যাক তাহারা নাকি দুনিয়া বিরাগী হইয়াছেন। তাহাদের সম্মান নাকি অনেক উঁচুতে। মশা, মাছি পর্যন্ত বেয়াদবী হবে মনে করে তাদের বিরক্ত করেনা। অপরিনামদর্শী ছারপোকা যদি তাঁহাদের চামড়াতে কামর বসাইয়া দেয়, তাহলে ছাড়পোকার ভবলীলা সেখানেই সাঙ্গ হয়। এই ধরনের আল্লাহর পেয়ারা বান্দাদের খুবই কাছে পেয়ে, আমি উৎফুল্ল হইলাম। তাই ভক্তি সহকারে একজনের সাথে সাক্ষাৎ করিতে চেষ্টা করিলাম। তাঁর কাছাকাছি হইতেই বুজুর্গ সাহেবের পবিত্র শরীর থেকে এমন এক ধরনের কটু গন্ধ আমার নাকে আসিল, তাহা আমার জন্য সহ্য করা দায় হইল। ভাবিলাম আবার বুঝি বেহুশ হইতে হইবে, ভয়ে উপর ওয়ালার সাহায্য চাইলাম, এটা যাতে আমার জীবনের শেষ বেহুশ না হয়। উপর ওয়ালার দয়ায় সেযাত্রায় বেঁচে যাই। তবে কোন মতে বমিটা দমাইয়া রাখিতে পেরেছিলাম। তখনই বুঝিলাম দুগর্ন্ধ প্রিয় মশা মাছি কেন তাঁদের সন্নিকটে আসিতে ভয় পায় আর কেনই বা ছারপোকার ভবলীলা নিমেষেই সাঙ্গ হয়। আরো বুঝিলাম আল্লাহর দেওয়া স্বীয় নাকটিকে আরো যথেষ্ট পবিত্র করিতে হইবে, নতুবা এঁদের সান্নিধ্যে এলে আমার নাকই প্রথম প্রতিবাদকারী হইবে, ফলে আমার আমও যাইবে ছালাও যাইবে।
হুজুর এভাবে মানুষকে দলে দলে, বহু সমস্যা নিয়ে, বহু দূর-দুরান্ত হইতে আপনার দরবারে আসিতে দেখিলাম। মনে হইল আপনার দরবারে আসিতে পারিয়া, সকল মানুষই খুশি হইয়াছেন। আপনার বিভিন্ন পরামর্শ, দোয়া, তাবিজ, কবজ, তবরুক পাইয়া তাহারা সবাই নিজেদের ভাগ্যবান মনে করিতেছিল। হুজুর আপনি নাকি কখনও কখনও আপনার বোগল মোবারক উপরের দিকে তুলিলে আমেরিকা থেকে জাপান, যার যাহা ইচ্ছা তাহা দেখিতে পায়। নিজের শত্রুকে দেখিতে পায়, নিজের হারানো জিনিষ কোথায় লুকানো হয়েছে তাও নাকি দেখা যায়। গর্ভে ছেলে হবে কি মেয়ে হবে তাহাদের ভবিষ্যত ছবিও নাকি দেখিতে পাওয়া যায়। আমি এসব খবর পূর্বে শুনিয়াই বিদেশ গমনের যাবতীয় অর্থ খরছ করিয়া আপনার পবিত্র চেহারা মোবারক দেখার নিয়তে, আপনার সান্নিধ্য পাইতে চাহিয়াছিলাম। কিন্তু বদবখতের কপাল এতই খারাপ কোথায় আপনার পায়ে চুমো দিব, কোথায় আপনার শরীর মোবারকের গন্ধ নিব, কোনটাই সম্ভব হয়নি, আপনাকে শুধু এক চিলিক দেখিয়াই খুশি থাকিতে হইল।
হুজুর আজ দুঃখ ভারাক্লান্ত মন নিয়া আপনার নিকট দুকলম লিখা শেষ করিতে যাইতেছি। জানিনা পাপিষ্ট নরাধমের এই চিঠিখানা আপনার কাছে কবেতক পৌঁছিবে? আমার সমুদয় টাকা-পয়সা শেষ করিয়াছি, আপনার পবিত্র চেহারা মোবারক দেখিতে গিয়ে। আমার কোন দুঃখ নাই, চিন্তা নাই। তবে একটি কথা আমার মাথায় বারবার ঘুরপাক খাইতেছে, কাউকে বলিতেও পারছি না, ওলি মিয়াও নাই, তাই তাই জানিতেও পারছিনা। আশাকরি আপনি আমার বেয়াদবী নেবেন না। আপনার শানদার ইজ্জত দিয়া মাফ করিবেন, নতুবা আপনার ভীষন বদদোয়ায় আমি জ্বলিয়া যাইব। হুজুর আপনার নিকট তো অনেক কেরামত আছে, যাহা লোকমুকে শুনিতে পাইয়াছি। তাহলে আপনি যদি একটু কষ্ট করিয়া বাংলাদেশের কোথায় গ্যাসের খনি আছে, তেলের খনি আছে, সোনার খনি আছে তাহা সরকারকে বলিয়া দিতেন, তাহলে বহু মানুষের উপকার হইত। খনি খোঁজার নামে সরকারের অনেক টাকাও বাঁচিয়া যাইত। বড় বড় পুরষ্কার প্রাপ্ত খুনিরা কোথায় লূকিয়া আছেন, অন্তত একজনের ঠিকানা যদি আপনি আমাকে বলিয়া দিতেন। তাহলে আমি পুলিশ ডেকে তাকে ধরিয়ে দিতে পারতাম। তাহলে আমার জীবনে যা লোকসান হইয়াছে, পুরষ্কারের টাকা দিয়ে সব পুষিয়ে নিতে পারিতাম। আপনার বিপদগ্রস্থ মুরিদ চলমান মুসিবৎ হইতে উদ্ধার পাইত। আপনি যদি দেশের প্রধানমত্রীকে বলিয়া দিতে পারিতেন, কে কে তাঁর সম্ভাব্য খুনি। তাহলে তিনি তাদের অগ্রিম হত্যা করিতে পারিতেন। আপনার কেরামতির তথ্য বিদেশে রপ্তানী করিয়া বিদেশের বহু গুপ্তচর সংস্থা থেকে বহু বৈদেশিক মূদ্রা লাভ করা যাইত। দেশের সমূদয় তথ্য একদিকে আপনি একদিকে, আপনিতো নিজেই একটি তথ্যমন্ত্রনালয়, তাই আপনি ইচ্ছা করলেই জাতির বিপদের দিনে, এই উপকার করিতে পারিবেন। তাহলে কেন আপনি নিজেকে লুকাইয়া রাখিয়াছেন? আজ আমাদের দেশ অপশাসনে ভরিয়া গিয়াছে। খুনি, মাস্তান, লুটেরা, বখাটেদের অত্যাচারে দেশের জনজীবন অতিষ্ট হইয়া উঠিয়াছে। তাই আপনি প্রতিদিন অন্তত একটি করিয়া ভবিষ্যত বানী দিয়া পুলিশ বাহিনীকে সাহায্য করুন। পুলিশ কম করে হলেও প্রতিদিন একজনকে মৃত্যু থেকে বাঁচাইবে একজন অপরাধীকে ধরিবে। তাহলে বছরে কমপক্ষে ৩৬০ জন মানুষ বাঁচিয়া যাইবে আবার ৩৬০ জন মানুষ কম মরিবে। আপনার কেরামতের শানে বাংলাদেশের মানুষ শান্তিতে বসবাস করিতে পারিবে। আপনার খাদেম সংখ্যাও কোটি কোটি ছাড়িয়া যাইবে।
ইতি আপনার বদবখত্� অধম মুরিদ
হুল মিয়া।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০১০ রাত ১১:৩৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




