somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পারদানা লিডারশিপ ফাউন্ডেশন(মালয়শিয়া) এ একদিন এবং কিছু বিচিত্র আভিজ্ঞতা

১৫ ই অক্টোবর, ২০১০ বিকাল ৫:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লাইব্রেরীতে বসে বসে ফেইসবুক এর আন-রিড মেইল গুলো পড়ছিলাম।অনেকগুলো গ্রুপ এর মেম্বার হওয়ায় প্রতিদিন অনেক গুলো মেইল আসে।সবগুলো মেইল সময়মত চেক করা হয়না।ইচ্ছে হলে মাঝে মাঝে চেক করি।মেইল চেক করতে গিয়ে দেখলাম আমাদের ভার্সিটির স্টুডেন্ট রিপ্রেসেন্টেটিভ কাউন্সিল থেকে ১টা মেইল এসেছে।পারদানা লিডারশিপ ফাউন্ডেশন ৩০জুন ২০১০ তারিখে “The Role of Education in Leadership Development” শীর্ষক ১টি ডিসকোর্স সিরিজ আয়োজন করছে।যারা যারা এই প্রোগ্রাম এ যেতে আগ্রহী তাদের নাম এবং মেট্রিক নাম্বার জমা দিতে বলা হয়ছে এই মেইল এ।লিডারশিপ নিয়ে দেশে থাকতেই আমার আগ্রহ ছিলো তাই বলে মালয়শিয়া এসে এরকম একটা প্রোগ্রাম এ যাওয়ার সুযোগ পাবো কখনো ভাবিনি।মনে মনে ভাবলাম কোনো ভাবেই এই সুযোগ হাতছাড়া করা যাবেনা।মেইল এ দেখলাম নাম জমা দেওয়ার ডেডলাইন শেষ হয়ে গেছে ১দিন আগেই।তাও স্টুডেন্ট রিপ্রেসেন্টেটিভ কাউন্সিল এর সাধারন সম্পাদক এর কাছে মাইল করে নাম জমা দিলাম।বিকালে উনি মেইল করে বললো যে আমি সবার নাম আয়োজক দের কাছে জমা দিয়ে দিয়েছি।তুমি যদি জেতে চাও জেতে পার তবে তোমাকে হয়তোবা প্রজেক্টরের মাধ্যমে আনুষ্ঠান টি দেখতে হতে পারে।আমি উনাকে জানালাম আমার কোনো সমস্যা নেই,আমি যাচ্ছি।পরদিন সকালে সময়মত ভার্সিটির মেইন স্টেয়ারকেস এর সামনে চলে আসলাম। এসে দেখি বাংলাদেশি স্টুডেন্ট শুধু আমি একা না,৬জন বাংলাদেশি সিনিয়র ভাইয়াও জাচ্ছে ওই প্রোগ্রাম এ।মজার বেপার হলো আমরা যারা যাচ্ছি তার প্রায় অর্ধেক ই বাংলাদেশি।যাই হোক যথাসময়ে বাস যাত্রা করলো মালয়শিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রজায়ার উদ্দেশে।আমি বসেছিলাম শাফী ভাইয়ের পাশে। যেতে যেতে উনি পুত্রজায়া তে আবস্থিত ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালায়শিয়া সম্পর্কে কিছু তথ্য দিলো। ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালায়শিয়া হলো মালায়শিয়ার অন্যতম রিসার্চ ইউনিভার্সিটি।উনার বাবা এই ইউনিভার্সিটি থেকেই পিএইচডি করেছে।সেই সুবাদে শাফী ভাই ছোট থাকতেই উনি সহ উনার পরিবার কয়েকবছর মালয়শিয়াতে ছিলো।শাফী ভাই এর সাথে কথা বলতে বলতে এবং রাস্তার দুপাশের চোখজুড়ানো সব দৃশ্য দেখতে দেখতে আমরা পৌছে গেলাম পারদানা লিডারশিপ ফাউন্ডেশন।
রেজিস্ট্রেশন করে সবাই মিলে নাস্তা করতে গেলাম।
খুব সাকলে বের হওয়ার কারনে সবাইকেই নাস্তা না করেই বের হতে হয়েছে।

আমাদের সাথে একই টেবিলে কিছুটা বয়স্ক ১চাইনিজ দম্পত্তি বসলো।কিছুক্ষন পর মহিলা আমদের জিজ্ঞেস করলো আমরা কোথা থেকে এসেছি। ইউনিভার্সিটির নাম বলার মাহিলা আবার জিজ্ঞেস করলো আমদের দেশ সম্পর্কে।যখনি বললাম বাংলাদেশ তখনি মহিলা আবাক হয়ে বললো ও!! বাংলাদেশ!!। বাংলাদেশের অনেক শ্রমিক মালায়শিয়াতে কাজ করতে আসে।নিশ্চয়ই তোমাদের বাবা-মা খুব ধনী তাই তোমাদেরকে মালয়শিয়াতে লেখাপড়া করতে পাঠিয়েছে।ভদ্রমহিলা আমার বলার আর কিছুই রাখলোনা।আমি সম্মতিসূচক মাথা নাড়িয়ে আবার নাস্তা করাতে মনোনিবেশ করলাম।এই একই ধরনের পরিস্থিতির সম্মুক্ষিন আমি আরো একবার হয়েছিলাম।আমাদের ইউনিভার্সিটিতে গ্রুপ বাইন্ডিং প্রোগ্রাম এর সময় আমার টেবিলে বসেছিল সিঙ্গাপুর এর এক মেয়ে।ও যখন শুনলো আমি বাংলাদেশের তখন একই কথাই বললো।সে বললো তোমার দেশের অনেক শ্রমিক আমার দেশে কাজ করতে আসে।আমি তখন তাকে আসল কারন ব্যাখ্যা করে বললাম তাদের কারনেই আমাদের আর্থনীতির চাকা এখনো সচল আছে।তাদেরকে নিয়ে আমার দেশ গর্ব করে। আসলেইতো তাই, কেউ যখন আমাকে বলে তোমাদের ইউনিভার্সিটিতে কতজন বাংলাদেশি আছে, তখন আমি বলি আমাদের ইউনিভার্সিটির প্রায় আর্ধেকই বাংলাদেশী!! ইউনিভার্সিটির সুইপার থেকে শুরু করে বাবুর্চী,দোকানদার,শ্রমিক,ঝাড়ুদার,ছাত্র-শিক্ষক মিলে বাংলাদেশিদের সংখ্যা মন্দ না।


যাই হোক নাস্তা সেরে আমরা আডিটোরিয়াম এ প্রবেশ করলাম।যদিও কথা ছিলো আমকে বাইরে বসে প্রজেক্ট্রে প্রোগ্রাম দেখতে হবে তবুও আমি আডিটোরিয়াম এ প্রবেশ করতে পারলাম।কারন আধিকাংশ মেহমানই তখনো

এসে পৌছায়নি।যথা সময়ে অনুষ্ঠান শুরু হলো।দেশী-বিদেশী আনেক ভিআইপি ব্যাক্তি এবং বিভিন্ন পাবলিক ইউনিভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রী এই অনুষ্ঠানে আংশগ্রহন করছে।এই ধ রনের গুরুত্বপূর্ন প্রোগ্রাম এ বিভিন্ন ইউনিভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রীদের আমন্ত্রন করা মালয়শিয়াতে ট্রাডিশন এর মতো কারন তারা বিশ্বাস করে আগামীদিনের নেতৃত্ব এদের মধ্যে থেকেই উঠে আসবে সুতরাং তাদের সব বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে।
কিছুক্ষন পর মালায়শিয়ার ডেপুটি প্রাইম মিনিষ্টার “ইয়াম্বর বাহাগিয়া তানশ্রি দাতো মুহিউদ্দীন বিন হাজি মোহাম্মদ ইয়াসিন” তার বক্তব্য দিলো।

নিচের লিঙ্ক এ ক্লিক করুন উনার বক্তব্য pdf file এর জন্য।





লাঞ্চ ব্রেক এর সময় আমরা নামাজ পড়ে একসাথে লাঞ্চ করলাম।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি প্রোগ্রাম শুরু হতে এখনো প্রায় আধাঘন্টা বাকী।আশিক ভাই এবং মুজাহিদ ভাই প্রস্তাব দিলো চলো পুত্রজায়ার আন্যতম আকর্ষন মসজিদ বেসি পুত্রজায়া তে ঘুরে আসি।এই রোদের মধ্যে প্রায় ১কিলোমিটার হেটে মসজিদ বেসিতে যাওয়ার মতো এনার্জি প্লাস আত্ববিশ্বাস কোনোটাই আমাদের ছিলোনা।আশিক ভাই এবং মুজাহিদ ভাই নাছোড়বান্দা যেভাবেই হোক তারা আজ মসজিদ বেসি দেখেই আসবে।


মসজিদ বেসির আন্যতম আকর্ষন হলো এই মসজিদ এর তিন পাশেই কৃ্ত্তিমভাবে ঝরনা স্রৃষ্টি করা হয়েছে যার পানি মসজিদ এর মেঝের সাথে প্রায় মিশে গেছে।

মসজিদের বাইরে থেকে দেখলে মনে হয় মসজিদের ভেতর থেকে তার ৩ পাশ দিয়ে পানি গড়িয়ে হ্রদ এ পড়ছে আর মসজিদের ভেতর থেকে দেখলে মনে হয় কোনো এক জলাশয়ের মাঝে এই মসজিদ তৈরী করা হয়েছে।





প্রবল আত্ববিশ্বাস এবং এনার্জি নিয়ে দুইভাই মসজিদ বেসির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।আর আমরা পারদানা লিডারশিপ ফাউন্ডেশনের লাইব্রেরী দেখতে চলে গেলাম।
লাইব্রেরী টি ছোট হলেও খুব সাজানো-গোছানো।আনেক দূর্লভ বই আছে এই লাইব্রেরী তে।বিরতির পর আমরা যথাসময়ে আমরা প্রোগ্রামস্থলে চলে গেলাম।প্রোগ্রাম শেষ হলো বিকাল ৫টায়।আমরা আডিটোরিয়াম থেকে বের হয়ে দেখি আশিক ভাই এবং মুজাহিদ ভাই ভ্রমন শেষ করে আডিটোরিয়াম এর বাইরে আমাদের জন্য আপেক্ষা করছে।এরপর সবাই মিলে বিকালের নাস্তা সেরে ক্লান্ত শরীরে ইউনিভার্সিটির বাস এ উঠে বসলাম।বাস চলতে শুরু করলো আমাদের ইউনিভার্সিটির উদ্দেশ্যে।

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০১০ রাত ১০:০৪
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×