রাত তখন ১১:৩০।আমরা সবাই মিলে ভার্সিটির মেইন ফটকে উপস্থিত।
উদ্দেশ্য কেদাহ যাবো।কেদাহ হলো মালায়শিয়ার ১৪টি আঙ্গরাজ্য এর আন্যতম ১টি আঙ্গরাজ্য যার রাজধানীর নাম 'আলোর সেতার'।এই আলোর সেতার ই হলো ডঃমাহাথীর মোহাম্মাদ এর জম্মস্থান।আমি কলেজ এ থাকা কালে মাহাথীর কে নিয়ে রচিত ১টি বই পড়ে আলোর সেতার সম্পর্কে ১ম জানতে পারি।মালায়শিয়ার উত্তরদিকে এবং থাইল্যান্ড বর্ডার এর খুব কাছেই কেদাহ আবস্থিত। কেদাহ তে খুব সম্প্রতি ১ সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে এবং থাইল্যান্ড তার পানি ছেড়ে দেওয়াতে খুব ভয়াবহ ধরনের ১ বন্যা হয়েছে।এটি ছিলো মালায়শিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বান্যা।আমাদের কেদাহ যাওয়ার উদ্দেশ্য মুলত বন্যা দূর্গতদের সাহায্য করা।আমাদের ভার্সিটির রিলিফ টিম এর আমরা প্রায় ১০জন বাংলাদেশি যাচ্ছি।সবাই উপস্থিত হওয়ার পর রিলিফ টীম এর প্রধান ১টি ছোটখাট ব্রিফিং দিলো।ওখনে যেয়ে আমাদের কি কি করতে হবে আবং আমারা কোথায় থাকবো এসব বিষয় নিয়ে মোটামুটি ১টী ধারনা দিলো।বাস ছাড়ার পুর্বে আমাদের কে ১০রিঙ্গিত করে ভাতা দিলো পথিমধ্যে যাত্রা-বিরতিতে খাবার কেনার জন্য।৫রিঙ্গিত যাওয়ার সময় এবং ৫রিঙ্গিত আসার সময়।আমাদের বাস রাত ১২:৩০ মিনিটে ভার্সিটি থেকে কেদাহ এর উদ্দেশ্যে ছেড়ে দিলো।

পথের দুপাশের আলোর ঝিকিমিকি দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম খেয়াল ছিলোনা।বাস থামার ঝাকুনিতে ঘুম ভেঙ্গে গেলো।জেগে দেখি বাস ১জায়গায় যাত্রা-বিরতি দিলো।সবাই মিলে বাস থেকে নেমে ফ্রেশ হয়ে হাল্কা নাস্তা সেরে আবার বাসে উঠে বসলাম।রাত তখন ৩টা।আমাদের বাস এগিয়ে চলছে দুরন্ত গতিতে।ঘুম ভেঙ্গে যাওয়াতে আমি বসে বসে চাদের আলোতে রাস্তার দু-পাশের দূশ্য দেখছিলাম।দুপাশেই বিশাল বিশাল পাহাড়,মাঝে-মাঝে অনেকটা দূরে কিছু জন-বসতি দেখা যায়।আমাদের বাস পথিমধ্যে আরেকটা জায়গায় থামলো সবাই মিলে ফজরের নামাজ পড়ার জন্য এবং সকালের নাস্তা করার জন্য।নামাজ পড়েই বসে পড়লাম সবাই মিলে আড্ডা দেওয়ায়।আগের বিরতিতে নাস্তা করায় প্রায় সবারই পেট ভরা ছিলো।দু-একজন নাস্তা করলো যারা আগের বিরতিতে কিছুই নাস্তা করেনি।তখন প্রায় সকাল হয়ে গেছে।রেস্তোরা থেকে বের হয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি সেই দূর পাহাড়ের কোল ঘেষে কিছু মেঘ ছুটো-ছুটি করছে।খুব এ সুন্দর লাগছিলো দূশ্যটা,তাই কোনো দেরী না করেই সবাই মিলে ১টা গ্রুপ ছবি তুলে নিলাম।

এরপর আবার বাসে উঠে রওনা দিলাম গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।কুয়ালালামপুর থেকে কেদাহ যেতে প্রায় ৬ঘন্টা সময় লাগে।আমরা যথাসময়েই আমাদের গন্তব্যস্থলে পৌছে গেলাম যদিও আমাদের পাইলট শেষ মুহুর্তে ভুল পথে চলে গিয়েছিল।আমাদের থাকার ব্যবস্থা করা হলো ইউনিভার্সিটি উতারার তামান সিসওয়া তে।ইউনিভার্সিটি উতারা হলো মালায়শিয়ার অন্যতম ১টি পাবলিক ইউনিভার্সিটি।ইউনিভার্সিটি উতারা যখন প্রথম শুরু হয় তখন মূল ক্যম্পাস থেকে কিছুটা দূরে এই তামান সিসওয়া ছিলো ইন্টারন্যশনাল ছাত্রদের হোস্টেল।পরবর্তিতে হোস্টেল মূল ক্যাম্পাস এ স্থানান্তর করা হয়।এখন এই তামান সিসওয়া গেষ্ট হাইস হিসেবে ব্যবহার করা হয়।যাই হোক,রুম এ ব্যাগ রেখে ফ্রেশ হয়ে এসির বাতাসে বিছনায় গা এলিয়ে দিলাম যদিও তা দীর্ঘস্থায়ি হলোনা।কিছুক্ষন পর ইযযুদ্দীন,আমাদের এই টীম এর প্রধান,এসে রেডি হয়ে নিচে নামতে বললো।সবাই মিলে ১সাথে বের হলাম।খোলা আকাশের নিচে সংক্ষিপ্ত ব্রিফিং

শেষে সবাই চললাম ক্যান্টিন এর উদ্দেশ্যে।

কিছুক্ষনের মধ্যেই পৌছে গেলাম ক্যান্টিন এ।ক্যান্টিন এ যেয়ে দেখি আমাদের আগে আরো কয়েকটা ভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রীরা উপস্থিত।পরে জানতে পারলাম ওরা আরো কয়েকদিন আগেই এসেছে।আজকেই চলে যাবে তারপর ওদের ভার্সিটরই আরেকটা গ্রুপ আসবে ওদের স্থানে।যাই হোক খাবার নিতে গিয়ে দেখলাম মালায় খাবার পরিবেশন করা হয়েছে।মালায় খাবার যে আমি পছন্দ করি তা না।শুধুমাত্র কয়েকটা আইটেম আমি পছন্দ করি।মালায়রা সকাল বেলা ভাত খেয়ে অভ্যস্ত।আমাদেরকে দেওয়া হল নাসি গোরেং।নাসি মানে হলো ভাত আর গোরেং মানে হোলো ভাজি অর্থ্যাৎ ভাত-ভাজি যাকে ইংরেজীতে আমরা বলি ফ্রাইড রাইস।খারাপ হয়নি নাসি গোরেং।নাসি গোরেং শেষ করে হাল্কা কফি পান করে সবাই ছুটলাম ব্রিফিং রুম এ নতুন কিছু শোনার প্রতিক্ষায়।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১০ রাত ৯:৫৯