somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভুল

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শীতকাল ।দাঁড়িয়ে আছি টেম্পুর জন্য ।এই সময়টা টেম্পু খালি পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার ।সোহেলের মোবাইলে চার্জ নেই ।মোড়ের একটু সামনে নগর কর্তৃপক্ষ মোবাইলে চার্জ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন ।সোহেল সেখানে গিয়ে মোবাইলটা চার্জে দিয়ে আসলো ।কিন্তু সমস্যা একটাই, মোবাইলের সকল দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে ।
আমি, সুমিত আর সোহেল আড্ডা দিচ্ছি রাস্তার মোড়েই ।পালা করে একটু পর পর তিনজনেই চোখ রাখছি মোবাইলের দিকে ।এবার আমার চোখ মোবাইলের দিকে ।সোহেল আমার দিকে ফিরে কথা বলছে ।
কিছুক্ষণ পর তিনজন একসাথে তিনটা মোবাইল নিয়ে মোবাইল চার্জ দিতে গেলো, চার্জার পয়েন্টেরে দিকে ।
যখন তারা ফিরে আসছে, দেখলাম মাঝখানে যে আছে, তার কানে সোহেলের মোবাইল ।কিছু বুঝার আগেই সুমিত আর সোহেলকে নিয়ে লোকগুলার সামনে চলে গেলাম ।সোহেলকে দেখিয়ে বললাম এটা তোর মোবাইল না ? সোহেল চার্জার পয়েন্টের দিকে তাকিয়ে, এক ব্যাক্যেই হ্যাঁ বললো !
লোকটা বলছে, আমার মোবাইলে আমি কথা বলছি ! আপনাদের কি সমস্যা ? অথচ লোকটা যখন কান থেকে মোবাইল নামালো, দেখা গেলা মোবাইল লক করা ! সন্দেহটা বাড়লো ।
ততক্ষণে সুমিত বুঝে গেলো, কি হতে চলেছে ! সে রাস্তা থেকে একটা কাঠ নিয়ে বেদড়ক পিঠাতে লাগলো তিনজনকে একসাথে ।সোহেলের উত্তেজনা অনেক বেশী ছিলো, যেহেতু ফোনটা তার ছিলো ।সেও একটা কাঠ নিয়ে, যার কাছে মোবাইল পেলো তাকে ,মারা শুরু করলো ! একটা সময় সোহেল লোকটার মাথায় আঘাত করলো, লোকটা শুয়ে পড়লো রাস্তায়, আর ওমনি রাস্তায় রক্তে ভেসে যেতে লাগলো ।
আমি অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছি ।কয়েক মিনিটে কতো কিছুই না হয়ে গেলো ।সোহেল আর সুমিত মেরেই চলেছে তাদের ।এরমধ্যে তিনজনের একজন পালিয়ে গেলো ।সুমিত আর সোহেলও কিছুক্ষণ পর মোবাইল নিয়ে সরে পড়লো ।আমাকেও বললো, এখান থেকে সরে পড়তে ।
কিন্তু কিছু বুঝে উঠার আগেই মোড়ের এক পুলিশ আমাকে আটকে রাখলো ।তখন কেনো জানি না সেদিন, মোড়ে মোড়ে মোবাইল কোর্ট বসিয়েছে পুলিশ ।এটা হয়তো ছাএদের নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের পর রাস্তায় রাস্তায় ভূয়া লাইসেন্স ধারীদের ধরে মামলা দেওয়ার জন্যই করা হয়েছে ।আমাকে সেখানে সোপর্দ করলো পুলিশ ।
কিন্তু বিপদ ঘটলো অন্য জায়গায় ।পুলিশ আমাকে ভালো হেফাজতেই রেখেছিলো ।যে পালিয়ে গেলো, সে দলবল নিয়ে আসতে লাগলো ।
তখন পুলিশ হেফাজতে আমরা ছয় জন ।তাদের এক উত্তেজিত পাবলিক এসেই, অন্য একজনকে মারতে শুরু করলো ।ভাবলো, সে হচ্ছে সুমিত , সোহেল কিংবা আমি ! কারণ ,যে পালিয়ে গিয়েছিলো, সে উত্তেজিত পাবলিকদের থেকে একটু পিছিয়েই পড়েছিলো ।
একজন পুলিশ আমাকে চোখের ইশারা দিলো, যেনো এক মুহূর্ত দেরী না করে সেখান থেকে সরে পড়ি ।পুলিশও বুঝে গিয়েছিলো,উটকো ঝামেলায় জড়িয়ে লাভ নেই। আমি এমন একটা ভাব করলাম, যেনো কিছুই হয় নি ।আমি কেটে পড়ি সেখান থেকে ।কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস,একটা গাড়িও পাচ্ছিলাম না ।
একটা গলি দিয়ে ঢুকে দিলাম দৌড় ।একটা সিএনজি পেলাম ।বললাম ড্রাইবার ভাই আমাকে যে করেই হোক, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যেকোন একটা জায়গায় নামিয়ে দিতে হবে ।
সিএনজি ড্রাইবারও বুঝলো আমার দুর্বলতার সুযোগ ।ভাড়া দিলো বাড়িয়ে ।আমি বললাম চলবে ভাই, তাড়াতাড়ি করেন ।তবে সিএনজি ড্রাইবার তার বাসার জন্য চাউলের বস্তা নিয়ে যাবে, চালের বস্তার সাথে আমাকেও যেতে হবে ।
এদিকে পিছন ফিরে দেখি, হন্য হয়ে খুঁজছে আমাদের ।দ্রুত উঠে পড়লাম সিএনজিতে ।সিএনজি ছাড়ার ঠিক সময়ে লুকিং গ্লাস দিয়ে দেখি, যে লোকটা পালিয়ে গিয়েছিলো সে মানুষকে জিগাস করতে করতে এদিকেই এগিয়ে আসছে ।
সিএনজি ছেড়ে দিলো ।কিন্তু বিপত্তি ঘটলো অন্য জায়গায় ।কিছুদূর সিএনজি গিয়ে কাঁদার মধ্যে চাকা আটকে গেলো ।কোনভাবেই ড্রাইবার ভাই সিএনজির চাকা কাঁদা থেকে উঠাতে পারলেন না ।
ড্রাইবারের সাথে আমিও নেমে পড়লাম গাড়ি থেকে ।দুজনে মিলে পাঁচ মিনিট ধরে ঠেলে উঠানোর চেষ্ঠা করলাম ।কিন্তু পারলাম না ।
ভয়ে পিছনে ফিরে দেখি, ভয়টা আরো বেড়ে গেলো ।সাথে সাথে গায়ের জ্যাকেট খুলে ফেলে দিলাম ।শীত লাগছে, কিন্তু তাতে কি বাঁচতে তো হবে ! আমি গিয়ে সিএনজিতে বসলাম, ডান দিকে তাকিয়ে আছি সিএনজি থেকে ।ভাবলাম জ্যাকেট ফেলে দিয়ে যদি নিজেকে বদলানো যায় !
বাম দিক দিয়ে, তখন যে লোকটা পালিয়ে গিয়েছিলো, সে বললো ,ভাই আমি এদিকে ।ধরা পড়ে গেলাম ।
দুদিন কেটে গেলো, আমি হাসপাতালে ।পরে জানতে পারলাম ভুলটা আমারই ছিলো ।মোবাইল নিয়ে ঝামেলার সময় যে লোকটা মাঝখানে ছিলো, মোবাইলটা তারই ছিলো ।আর লোকটা ছিলো ওই এলাকার রাজনৈতিক নেতা ।লোকটা ফোন চার্জ দিতে গিয়েছিলো ।যখন চার্জ দিতে যাচ্ছিলো তখন অন্য ফোন দিয়ে কথা বলছিলো ।সোহেলের ফোনটা তখন লোকটা মোবাইল নেওয়ার সময় একপাশে সরিয়ে রেখেছিলো বলেই, তখন আমার চোখে পড়ে নি ।সে সুযোগ কাজে লাগালো, সোহেল আর সুমিত ।দুইটা মোবাইল একই মডেলের হওয়াতে কুবুদ্ধি খেলে গেলা তাদের মাথায় ।
IMEI কোড দিয়ে প্রথমে সোহেলকে ধরলো পুলিশ ।আর পরে সোহেলকে নিয়ে সুমিতকে ধরলো ।
এই এক ভুলের কারণে আমাকে একে মাস জেল খাটতে হলো ,সাথে হালকা উত্তম-মধ্যমও ।সোহেল আর সুমিতের হলো ছয় মাস জেল, সাথে তাদের খোঁয়া গেলো এইচ.এস.সি ফাইনাল পরীক্ষা ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১:২৬
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×