ঘটনাটি অনেক আগের। দেশে আমি তখন একটা সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করি। চট্টগ্রাম শহরের আগ্রাবাদ এলাকায় 'বনফুল' নামের মিষ্টির দোকানের সামনে দিয়ে কোথায় যেন যাচ্ছিলাম। ড্রাইভার অফিসের গাড়ি চালাচ্ছেন। আমি তাঁর পাশের সীটে বসা।
'বনফুল'-এর বেশ বড়ো শো রুম খোলা হয়েছে। চট্টগ্রাম শহরে সম্ভবত ওটাই সবচেয়ে বড়ো মিষ্টির দোকান সে সময়। দোকানটির সামনে গাড়িটি দাঁড় করিয়ে ড্রাইভার সাহেব আমাকে বললেন, 'স্যার, একটু বাথরুম করে আসি।'
মিনিট দশেক পর সুদৃশ্য এক প্যাকেট মিষ্টি নিয়ে ড্রাইভার ফিরলেন। আমার দিকে প্যাকেটটি এগিয়ে দিয়ে বললেন, 'স্যার, আপনার জন্য।'
ঘটনার আকস্মিকতায় আমি তো অবাক! ড্রাইভারকে বললাম, 'আমার জন্য আবার মিষ্টি কিনতে গেলেন কেন? লাগবে না, এটা ফেরত দিয়ে আসুন।'
- 'স্যার, আপনার কথা বলায় ওরাই আমাকে দিয়েছে।'
- 'সর্বনাশ, আমার কথা ওদের বলতে গেলেন কেন?'
একটু পটভূমি দিলে কাহিনী বুঝতে সুবিধা হবে পাঠকের। আমি তখন সরকারের 'ইমারত নির্মাণ বিধিমালা' বাস্তবায়ন কমিটির (অথোরাইজেশন কমিটি বলেই দেশে পরিচিত) অন্যতম সদস্য। তারমানে, বনফুলের এ নতুন ভবনটি বিধি মেনে নির্মাণ করা হয়েছে কিনা তা দেখার এখতিয়ারও আমার ছিল। বাকিটা আপনারাই বুঝে নিন।
যাক, মিষ্টির বাক্স খুলে আমি কেবল একটি মিষ্টি সেদিন খেয়েছিলাম। নইলে, ড্রাইভার সাহেব মন খারাপ করতেন। বাকি মিষ্টিগুলো ড্রাইভার সাহেবকে তাঁর বাসায় নিয়ে যেতে বলেছি।
বলা বাহুল্য, সরকারি অফিসারদের গাড়ির ড্রাইভার সাহেবরা সংশ্লিষ্ট অফিসারদের আশ্রয়-প্রশ্রয়েই একসময় মহীরুহ হয়ে উঠেন। ছাগল নাচে খুঁটির জোরে অবস্থা আরকি!
চাকুরীতে এ ধরণের কিছু বিষয় মাঝেমাঝেই বিব্রত করতো আমাকে। অবশেষে এক শুভক্ষণে চাকুরীতে ইস্তফা দিলাম।
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০২০ ভোর ৪:১৫