somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যৌন নিপীড়কদের চলাফেরায় নিয়ন্ত্রণ আরোপ সময়ের দাবি

০৯ ই অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যৌন নিপীড়কদের চলাফেরায় নিয়ন্ত্রণ আরোপ সময়ের দাবি

শুরুতেই বলি, কানাডায় ‘সেক্স অফেন্ডারস রেজিট্রি’ বলে পুলিশের কাছে একটা রেকর্ড আছে, যা সাধারণ মানুষও চেক করতে পারেন। যাদের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাদের এ তালিকায় স্থান দেওয়া হয়। রেজিস্ট্রিতে অন্যান্য তথ্যের মধ্যে থাকে, এসব যৌন অপরাধীর হালনাগাদ আবাস্থলের ঠিকানা, বা প্রেজেন্ট অ্যাড্রেস। যেমন ধরুন, এ ধরনের অপরাধীরা এক শহর হতে অন্য শহর, বা এক প্রদেশ হতে অন্য প্রদেশে গেলে নিজ উদ্যোগে পুলিশের ডাটাবেইজে এ তথ্য আপডেইট করতে হয়, যাতে পুলিশ এবং সেই সাথে সাধারণ মানুষ তাদের উপস্থিতি সম্পর্কে আগে থেকেই সজাগ হয়ে সন্তান-সন্ততি বা অন্যদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারেন।

যৌন নিপীড়কদের সাময়িক বা স্থায়ীভাবে (অপরাধের ধরনভেদে) অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশু বা নারীদের একটা নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে যাওয়ারও বারণ থাকে। ডে-কেয়ার বা স্কুলের মতো চাকুরিতেও তাদের নিয়োগ দেওয়া হয় না। বাংলাদেশে প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা সনদ দিলে একটা পকেটমার বা লম্পটও কাগজে কলমে চরিত্রবান হয়ে উঠতে পারেন। কানাডা বা উন্নত দেশগুলোতে তা নেই। এখানে দেখা হয় ওই ব্যক্তির পুলিশ রেকর্ড। এসব দেশের পুলিশ রেকর্ডের গ্রহণযোগ্যতা সেই মাপের।

আমার পরিচিত এক ভদ্রলোক অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে এখানে (কানাডায়) স্কুল শিক্ষক হতে পেরেছিলেন। কিন্তু, তার মাথায় শয়তান সওয়ার হওয়ায় একদিন ‘না বুঝে’ তিনি তার এক নবম শ্রেণির ছাত্রীর বুকে পিঠে হাত বুলিয়ে দেন। ছাত্রী বয়সে ছোট বলে তা আঁচ করতে পারেনি; ভেবেছিল শিক্ষক মহোদয় স্রেফ আদর করেছেন। কিন্তু, বিষয়টি ভিডিওতে রেকর্ড হয়ে যাওয়ায় বিদ্যালয়ের আইটি বিভাগের নজরে এলে পরে তদন্ত হয়। অবশেষে ওই শিক্ষক স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলেন তখন তার মাথায় ‘খারাপ চিন্তা’ কাজ করেছিল। তবে দোষটা চাপাতে চেয়েছিলেন শয়তানের উপর।

কিন্তু, কানাডীয়রা কি আর অতসব বোঝে? এরা খুব মাথামোটা মানুষ! জ্বিন বা শয়তানের আছরের মতো অন্তর্ভেদী ও উচ্চমার্গের বিষয় বোঝার মতো ‘প্রজ্ঞা’ এদের নেই। আদালত বিচার-বিবেচনার পর এই শিক্ষককে ‘যৌন নিপীড়ক’ সাব্যস্ত করে ছয় মাসের জেল আর শিশুদের কাছাকাছি হতে ১০ বছরের নিষেধাজ্ঞা জারি করলেন তার উপর। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি বাচ্চাদের কাছাকাছি যেতে পারবেন অন্য একজন প্রাপ্তবয়স্কের উপস্থিতিতেই কেবল। বলার অপেক্ষা রাখে না, সে শিক্ষকের টিচিং লাইসেন্সও স্থায়ীভাবে বাতিল করা হয়েছে। লাইসেন্স বাতিল হয়ে গেলে আপনার পিএইচডি ডিগ্রি থেকেও লাভ নেই। কেউ আপনাকে চাকরি দিতে পারবে না।

সম্প্রতি পত্রিকায় একটা সংবাদ দেখে কানাডার ‘সেক্স রেজিস্ট্রি’র কথা মনে এলো। সে চিন্তা থেকেই উপরের কথাগুলো বলা। একটি বহুল প্রচারিত অনলাইন পত্রিকায় সংবাদ শিরোনাম হয়েছে এভাবে: ‘যৌন নিপীড়নের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরও আব্দুল হালিম প্রামাণিক শিক্ষক হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বহাল থেকে যাবেন, তা মানতে চাইছেন না অভিযোগকারী দুই শিক্ষার্থী।’ ২০১৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি উপাচার্যের কাছে নাট্যকলা বিভাগের তৎকালীন চেয়ারম্যান হালিম প্রামাণিক সম্রাটের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন তার বিভাগের এক ছাত্রী। পরবর্তীতে প্রশাসনের কাছে হালিম প্রামাণিকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন তার বিভাগের আরেক ছাত্রী।

আমাদের দেশে একটা ‘নিয়ম’ হলো, এ ধরনের স্পর্শকাতর ঘটনায় তদন্ত কমিটি অপরাধের প্রমাণ পান বা না পান, তাদের সে প্রাপ্তি কিন্তু বিশেষ মহলের প্রত্যাশার সাথে মিলে যেতে হয়। নইলে পাল্টা তদন্ত কমিটি গঠন হয়ে থাকে যতক্ষণ না বিশেষ মহলের কাঙ্ক্ষিত ‘সত্যটি’ তদন্তে বেরিয়ে না আসে।

সম্প্রতি এমন উদাহরণ দেখা গেছে, ভিআইপি কালচারে অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ডের শিকার কিশোর তিতাস ঘোষের ক্ষেত্রে। উপরের ঘটনায়ও তাই হয়েছে। প্রথম তদন্ত কমিটি অপরাধের প্রমাণ পেয়েছিলেন। ফলে, আরো তিন-তিনটা তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো অনিবার্যভাবেই। সর্বশেষ কমিটি অকাট্য প্রমাণ পাননি জানিয়ে বিষয়টা লঘু করে দিলেন। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেই লঘু অপরাধের উপর ভিত্তি করে নমনীয় সাজা আরোপ করলেন যৌন নিপীড়নকারী ওই শিক্ষকের উপর। অভিযোগকারী দুই ছাত্রী বিচারের ফলাফল মেনে নিতে না পেরে শোরগোল তুলেছেন, যা দেশবাসীর নজরে এসেছে।

যেহেতু হালিম প্রামানিক সাহেবের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয়নি, তাই এ নিয়ে তার আদালতে যাবার সুযোগ রয়েছে। তিনি হয়তো সে পদক্ষেপই গ্রহণ করবেন। কারণ, বিচার ব্যবস্থায় ‘বেনিফিট অব ডাউট’ বলে একটা কথা আছে। তার সুযোগ থেকে তিনি নিজেকে বঞ্চিত করবেন কেন? বিচারের শেষ ফল আপনি নিজেই বুঝে নিন এবার!

যৌন নিপীড়নমূলক ঘটনাগুলো উন্নতদেশের আদলে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে বিচার বিবেচনা না করলে নারী ও শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাবে না। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটা নামী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও যদি আমাদের মেয়েরা স্বচ্ছন্দে পড়াশোনা করতে না পারে তাহলে দেশের আনাচেকানাচে ছড়িয়ে থাকা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় বা স্কুল কলেজ বা মাদ্রাসাগুলোর কথা একবার ভাবুন তো! সেখানে নারী ও শিশুদের বিদ্যার্জনে পাঠানো কতটা নিরাপদ, এ প্রশ্ন যে কারো মাথায় আসবে? পত্রিকার রিপোর্টে যৌন নিপীড়নকারী এ শিক্ষকের বিরুদ্ধে যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা অস্পষ্ট ও অপর্যাপ্ত, এবং, আমার ধারণা তা আদালতেও টিকবে না।

উন্নতদেশগুলোতে যেখানে যৌন নিপীড়নকারী শিক্ষকদের চাকুরিচ্যুত করাসহ তাদের চলাফেরায় দীর্ঘমেয়াদী নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়, সেখানে একই ধরনের অভিযোগে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে একপ্রকার বিনা বিচারে ছেড়ে দেওয়া সারা দেশে নারী ও শিশুদের উপর যৌন নিপীড়ন উসকে দিতে পারে। তাই, সংশ্লিষ্ট মহলকে অনুরোধ জানাই, আমাদের নিজেদের স্বার্থেই যৌন নিপীড়নের ঘটনাগুলোর ন্যায় বিচার নিশ্চিত করুন। তা না হলে সাধারণ মানুষ মেয়েদের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে দ্বিধা করবেন। সমাজের মূলধারায় মিশে পুরুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে নারীরা নিরুৎসাহিত হবেন। ফলে, নারীর ক্ষমতায়ন পিছিয়ে পড়বে, ব্যাহত হবে দেশের উন্নয়ন। [email protected]
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১১:০১
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×