মহা-অতৃপ্তির এক জীবনের গল্প =
অন্যের সহায়তা নিয়ে আমাদের পাশের গ্রামের একজন আজ আমাকে ফোন দিলেন। এই লোকটি বয়সে আমার বছর দশেকের বড়ো হবেন। আমরা মামা বলে ডাকতাম। তিনি ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়েছেন। প্রায় পঁচিশ বছর আগে যখন শেষ দেখেছি তখন তাঁকে ভালো কাপড় চোপড় পরে মোটরসাইকেলে চড়তে দেখতাম। পড়ালেখা জানা মানুষ; দেখতেও সুদর্শন।
স্ত্রী বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন বছর পাঁচেক আগে। হাঁড়ের সমস্যার কারণে তিনি এখন লাঠিতে বড় করে হাঁটেন। তিন মেয়ের দুজনকে পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে বিয়ে দিয়েছেন। তৃতীয়জনকে নিয়ে ছোট্ট একটি বেড়ার ঘরে দিনাতিপাত করছেন। মেয়েটা দোকানের মরিচ হলুদ পিষে কিছু আয় করে, আর, উনি একটা গরু (গাভী) পালেন। গাভীর দুধ আর মেয়ের সামান্য আয় দিয়ে চলছে সংসার। মেয়ের বিয়েতে সাহায্য দরকার। সেকারণেই যোগাযোগ।
এই মামার কথা শুনে চোখ ভিজে গেলো। তাঁকে ঘিরে খুব ছোটবেলার কিছু স্মৃতি জড়িয়ে আছে যা একদমই ভুলতে পারিনা। তাঁর সাথে কথা বলতে বলতে 'পি কে হালদার'এর কথাও মনে উঁকি দিয়ে গেলো। ভাবতে অবাক লাগে কি এক অদ্ভুত দেশে আমার জন্ম এবং বেড়ে উঠা। যে দেশে পি কে হালদারের মতো হাজারো দুর্বৃত্ত কোটি কোটি টাকা লোপাট করে মহাতৃপ্তির জীবন উপভোগ করে সেই একই দেশে আমার এই প্রতিবেশী মামার মতো হতদরিদ্র মানুষগুলোও খেয়ে না খেয়ে এক মহা অতৃপ্তির দুঃসহ জীবন কাটাতে বাধ্য হন।
এ ধরণের হতদরিদ্র ও দুঃসহ জীবনযাপনকারীদের খুঁজে বের করে কিছু মাসিক ভাতা দেবার ব্যবস্থা করা যায় কি?
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০২২ রাত ৮:৪৯