স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার-এর কাজ ভবন, ব্রিজ ইত্যাদির ফাউন্ডেশন ও কাঠামোর ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন করা। কানাডায় আমি বেশ কয়েকবছর প্রফেশনাল স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেছি। আমার ডিজাইন করা ভবনের মধ্যে আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনও আছে।
প্রায় দেড়যুগ আগের কথা বলছি। কানাডার বিভিন্ন শহরে আমাদের কোম্পানির বেশ কয়েকটা অফিস ছিল তখন। আমি চাকুরীতে যোগ দেবার কিছুদিনের মধ্যে জানতে পারি কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তা আমাদের এডমন্টন অফিসে আসছেন।
বিভিন্ন পর্যায়ে কয়েকদফা মিটিং সেরে তিনি আমরা যাঁরা তুলনামূলকভাবে নতুন তাঁদের অফিসকক্ষে গিয়ে কুশল বিনিময় করতে শুরু করলেন।
ভদ্রলোক আমার অফিসে ঢুকতেই আমি দেশি ভঙ্গিতে চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে নিরাপরাধ হয়েও কিছুটা অপরাধীর মতো চেহারা করলাম। ইচ্ছে করে করেছি তা নয়; যা ঘটার নিজের অজান্তেই ঘটেছে। ক্ষনিকের জন্য ভুলে গেলাম আমি আসলে কানাডায়, এটা বাংলাদেশ নয়।
মুরুব্বির নামটা মনে নেই। তবে আমার দাঁড়িয়ে যাওয়া দেখে তিনি যে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছিলেন তা বেশ মনে আছে। উন্নত দেশগুলোতে বস অফিসে প্রবেশ করলে বা বসের সাথে কোথাও দেখা হলে জুনিয়ররা এভাবে সালাম টুকে দাঁড়িয়ে যায় না। তাই বলে বলছি না ওসব দেশে বস-এর সাথে অধস্তনরা বেয়াদবি করে। যা বলতে চাইছি তা হলো, মুখাবয়বের পরিবর্তন বা শারীরিক কসরত দেখিয়ে দৃশ্যমান 'সম্মান' প্রদর্শনের কালচারটা উন্নত দেশগুলোতে নেই।
তিনি আমার মানসিক অবস্থা ধরতে পেরেছেন মনে হলো। তাই, দেরি না করে আমার কাঁধে দুহাত রেখে হালকা চাপ দিয়ে আমাকে চেয়ারে বসিয়ে দিলেন, আর হাসি মুখে বললেন, 'ইউ ডোন্ট হ্যাভ টু স্ট্যান্ড আপ ইয়ং ম্যান।' ...
কোয়াইট এ লার্নিং, তাই না? সেই থেকে আজ অব্দি বস দেখে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াইনি।
কেবল আমি নই, কানাডা, আমেরিকার মতো দেশে আমাদের দক্ষিণ এশিয়া হতে যাঁরাই প্রথম আসেন তাঁরাই এমন অসংখ্য অপরিচিত আচার-আচরণের মুখোমুখি হন প্রতিদিন। একে বলে কালচারাল শক।
কালচারাল শক অনেকভাবে হতে পারে। এই শক যতদ্রুত কাটিয়ে নতুন পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেয়া যায় একজন নতুন অভিবাসীর জন্য ততই মঙ্গল।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


