
কোভিড মহামারীর প্রথম দিকে যখন আমি পুরোপুরি লেখালেখি করছিলাম, কেউ একজন বলল- মানুষ কখনোই অন্যের কথা শুনতে চায় না। সে সবসময় চায় নিজের কথা শুনতে। তাই পাঠক কী চায় তা বুঝতে হবে। পাঠকের চাওয়া অনুযায়ী লিখলে তবেই লেখাকে তাদের দ্বারে পৌঁছানো সম্ভব।
আমি মুশকিলে পড়ে গেলাম। আমি নিজের কথা জানি, আমার দেখা জীবনগুলোর কথা জানি, আমার বোধগম্য বিষয়গুলো নিয়েই লিখতে পারি। আমার অজানা পাঠকের কী কথা আছে তা তো আমি জানি না! এরপর যতবারই লিখতে বসেছি আমার ভিতর থেকে এক বাধা এসেছে বারবার। মনে হয়েছে, আমার কথা বলে কী লাভ! আমার কথা কে পড়বে? কেন পড়বে? আর কেউ না পড়লে কেন লিখব আমি? আমি লেখালেখির শুরুটা করেছিলাম নিজের ভিতরের কথাগুলো গল্পচ্ছলে বলার জন্যই। এতে আমি আত্মতৃপ্তি পেতাম। একটা অদ্ভুত শান্তি কাজ করত ভিতরে। সেই আমি যুক্তিহীনভাবে মেনে নিলাম যে আমার লেখার কোনো মূল্য নেই। তাই আমার লেখালেখি করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ না। এই চিন্তা আমার গল্প বলার ক্ষমতা কেড়ে নিল।
অথচ কার্ল ইয়ুঙের সাইকোঅ্যানালিটিকাল থিওরি অনুযায়ী, কালেক্টিভ আনকনশাসের মাধ্যমে সব মানুষের আচরণ ও আবেগ সার্বজনীন আর্কেটাইপাল। লেখক তার অচেতনে যে কালেকটিভ আনকনশাস বহন করেন, তা অন্যান্য সকল মানুষের অচেতনেও আছে। আর একজন লেখক যখন নিজের চেনা-জানা গল্পগুলো বলেন, তখন তার লেখায় স্বাভাবিকভাবেই তার অচেতন উঠে আসে। এই অচেতনের সাথে পাঠকের অচেতনের সাদৃশ্য থাকায় পাঠক সেই লেখা পড়তে চান।
অর্থাৎ আপনি যদি শুধুমাত্র আপনার নিজের কথাগুলো বলেন, তাহলেই পাঠকের কথাগুলোও বলা হয়। এজন্য আপনার কথাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলোও আপনার মাধ্যমে নিজেদের প্রকাশের দাবি রাখে, যদি আপনি সে কাজ করার জন্য আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে থাকেন।
শুক্রবার
১৩ জুন, ২০২৫
Photo Credit

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


