
অনুকম্পা হলে ডেকে নিও আমায় যে-কোনো সময়ে;
আমি তো অতীতকাল নই যে ফিরে আসতেই পারবো না।
- গালিবের গজল থেকে
আসাদুল্লাহ খাঁ গালিব ওরফে মির্জা গালিবের শেষ জীবন ছিল দুঃখজর্জরিত। অবশ্য এর পূর্বে যে খুব সুখকর জীবন তিনি যাপন করেছেন, তাও ঠিক নয়। অসংখ্য অপূর্ণ আশা তাঁকে নিরাশার পথে বরাবরই ঠেলে দিয়েছে। তাই “নৈরাশ্যবাদ” গালিব-সৃষ্ট রচনার একমাত্র বিষয় না হলেও অন্যতম বিষয়।
দুঃখ প্রাণক্ষয়ী কিন্তু কেমন ক’রে রক্ষা পাবে আমার হৃদয়;
প্রেমের জ্বালা না-ও যদি থাকতো, জীবিকার গ্লানি তো থাকতোই।।
অথবা,
মৃত্যু ছাড়া জীবনযন্ত্রণার আর কী ওষুধ আছে, আসাদ;
প্রদীপকে তো সবরকমের জ্বলা জ্বলতেই হবে ভোর হওয়া পর্যন্ত।।
উদ্বৃত শেরদ্বয়ের মতো আরও অসংখ্য শেরে জীবনের প্রতি গালিবের নিরাশা ও অতৃপ্ত বাসনার বিষণ্ণ চিত্র ফুটে ওঠে।
নিরাশা ছাড়াও গালিবের শেরে প্রেমকেও পাওয়া যায়। কোনো কোনো শেরে নিবেদিত প্রেমার্ঘ্যের প্রেমাস্পদকে চিহ্ণিত করা গেলেও, কোথাও বা তা দ্ব্যর্থবোধক। সেগুলোকে ভক্তিমূলক, কিংবা চাইলে ‘রোমান্টিক’ শের হিসেবেও বিশ্লেষণ করা যেতে পারে-
আবার হৃদয় আমার অস্থির হয়ে উঠছে,
খুঁজতে বেরিয়েছে তাকে যার আঘাতে সে আবারও বিক্ষত হবে।।
একজন বিশ্লেষক হিসেবে মনে করি, দ্ব্যর্থবোধকতাই গালিবের রচনাকে একই সাথে করেছে কালোত্তীর্ণ এবং মানোত্তীর্ণ। কেননা, যে সৃষ্টিকর্ম দেশ-কাল-প্রেক্ষাপট নির্বিশেষে নিজের আবেদন অক্ষুণ্ণ রাখতে পারে তাই-তো সেরা সাহিত্য!

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


