somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিউজিল্যান্ড অধ্যায়ের শুরু। নিউজল্যান্ড টু ইউরোপ। (পর্ব ৫)

১৬ ই জুন, ২০২১ রাত ৩:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক সপ্তাহ আইইএলটিএস মক টেস্ট প্র‍্যাক্টিসের পর আমার পরীক্ষার ডেট দেয়া হলো। স্কাইপ আর এনিডেস্কে পরিক্ষা হবে। যা পুরোপুরি আইইএলটিএস এক্সাম রুলস ফলো করবে এবং রেজাল্টও আইইএলটিএস স্কোরের মতই হবে। সত্যি বলতে অনেক ঘাবড়ে গিয়েছিলাম কিন্তু বরাবরের মতই আমি ম্যাজিকাল কিছুর অপেক্ষায়, এক্সাম ডেটের দিন এজেন্সির অফিসে বসে এক্সাম দিলাম। আমার সামনে একটু অদুরেই বসা ছিলো আব্বু আর অন্বেষা। আমি পরীক্ষার মাঝেই আড়চোখে তাদের দিকে তাকাচ্ছি আর ভাবছি এই বুঝি সব আশা ভরসা শেষ করে দিচ্ছি। মজার ব্যাপার হলো আব্বু আম্মুরো মনে হতে লাগলো হয়ত আমার আর অন্বেষার মধ্যে কিছু চলছে। যাইহোক এবার সত্যিই ম্যাজিকাল কিছু ঘটলো আমার সাথে। আমি পাস করে গেলাম! মিনিমাম রিকুয়ারমেন্ট ৫ আর আমি পেলাম ৫.৫। নিচে সেই ঐতিহাসিক পরিক্ষার রেজাল্ট দিলাম।


ক্লিয়ার ছবি দেখতে এখানে ক্লিক করুন

একটা বিষয় ক্লিয়ার করি, আমি যেই ইন্টার্নাল টেস্টটা দিয়েছিলাম সেটা শুধুমাত্র এক্সেপশনাল ক্ষেত্রে করা হয়। এডমিশন লেটার হাতে নিয়েত মহা আনন্দে ভুলেই গিয়েছিলাম পিকচার আব্যি বাকি হ্যায়। আমেরিকার জন্য যেসব কাগজ পত্র রেডি করেছিলাম সেগুলোই এদিক সেদিক করে ডিএইচএল করে পাঠিয়ে দিলাম ইন্ডিয়া। নিউজিল্যান্ড এম্বাসীর তখনকার প্রোটকল অনুসারে ফোনেই ইন্টারভিউ হতো। বর্তমানে কিভাবে ইন্টারভিউ হয় আমার জানা নেই। পেপার্স পাঠানোর কিছুদিন পর একদিন ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস করছিলাম হঠাৎ এম্বাসি থেকে কল। আমি ক্লাস থেকে কোনমতে বের হয়ে কল রিসিভ করলাম। প্রায় ১৩/১৪ মিনিটের ইন্টারভিউ ছিলো এবং ভিসা অফিসার ছিলো শিব কুমার মিশ্রা। বিস্তারিত ভাবে আমার কোর্স, আমার পড়াশোনা এবং রেজাল্ট খারাপ কেন হয়েছিল এসব জানলেন।

আমি মোটামুটি উদাস হয়ে আমার ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতে ভাবতে সেদিন হেটে বেড়িয়েছি সাভারের ভিবিন্ন রাস্তা। সেদিন আমার হাটার সংগী ছিলো অন্বেষা, আমরা কতক্ষণ হেটেছিলাম আমার মনে নেই। তবে ৫টার দিকে একটি ইমেইল পাই যেটাতে বলা হয় ভিসা অফিসার আমার ভিসা প্রাথমিক ভাবে এপ্রোভ করেছে। আমি সেদিন এতটা খুশি ছিলাম যেটা জীবনে আর কখনোই হইনি। মূহুর্তেই আত্মীয় স্বজন সবাই জেনে গেলো, আর সেদিন আমি জিরো থেকে হিরো হয়ে গেলাম। কেউ সত্যিই খুশি হলো আবার কেউ বলতে লাগলো এই ছেলে জীবনে দেশে কোন কাজ করে নাই, সে বিদেশে গিয়ে কি করবে!! সে যাই হোক আব্বু আম্মু ব্যাপক খুশি হলো। ভিসা অফিসার আমাকে টিউশন ফী পে করে রিসিট পাঠাতে বললো। ইমিগ্রেশন রেকর্ড থেকে পরে আমি আমার ডকুমেন্ট বের করে আনি এবং ভিসা অফিসারের আমার সম্পর্কে দেয়া মতামত জানতে পারি। নিচে সেই কমেন্ট টুকুর ছবি দিলাম।


ক্লিয়ার ছবি দেখতে এখানে ক্লিক করুন
পরদিন আমি বাড়ি চলে গেলাম এবং সকল কাগজপত্র রেডি করা শুরু করলাম। বাড়িতে গিয়ে বুঝতে পারলাম সবাই উপরে উপরে খুশি হলেও কেউ কেউ ভালোই ঈর্ষান্বিত। বাঙালী কারো ভালো দেখতে পারেনা! দুই একদিন "টক অব দ্যা টি স্টল" ছিলো আমার সফলতা। তখন পর্যন্ত আমার এলাকার অনেকেই ইউরোপে থাকলেও অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে কিংবা নিউজিল্যান্ডে আমার পরিচিত কেউ ছিলোনা। আমার জন্য একা একা সম্পুর্ন নতুন একটা জায়গায় যাওয়া তার উপর কাউকেই চিনিনা সে দেশে গিয়ে নামাটাই চ্যালেঞ্জিং ছিলো।যাইহোক মানুষ খুজতে লাগলাম যে অন্তত আমাকে এয়ারপোর্টে রিসিভ করবে। কাছের কাউকে না পেয়ে দুরের মানুষকেই ভরসা করতে শুরু করলাম। ফেসবুকে অনেককেই নক করলাম কেউ রিপ্লাই দিলো আবার কেউ দিলোনা। সবাই বড্ড ব্যাস্ত! এদিকে আমার ক্লাস শুরু কয়ে গেছে, ১৫ দিন পরে গিয়ে জয়েন করতে হবে ভিসা প্রিন্ট হতে দেরি হওয়ায়। ২৩ মার্চ ২০১৫ তে ভিসা হাতে পেলাম সাথে সাথেই ২৬ মার্চের টিকিট কাটলাম! সিংগাপুর এয়ারলাইন্স এবং এয়ার নিউজিল্যান্ডের ফ্লাইটে আমি নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড বিমানবন্দরে গিয়ে অবতরণ করলাম।

কলেজের মার্কেটিং এ কাজ করা তুষার ভাইকে রিকোয়েস্ট করায় কয়েকজন বড় ভাই এলেন রিসিভ করতে। তার বিনিময়ে উনারা নিলেন এক কার্টন বেনসন সিগারেট। সিগারেট খোররা সেখানে খুব বিপদেই আছে! কারন ১ প্যাকেট সিগারেট ২৫ ডলার। তার মানে প্রায় ১৫শ টাকা! আমি ২০ প্যাকেট নিয়ে গিয়েছিলাম তার মানে ৫০০ ডলার, প্রায় ৩০ হাজার টাকা। এটা শুধু আমার কেউ পরিচিত ছিলোনা বলেই আমাকে বাধ্য করা হয়েছিলো। পরে জানতে পারি, যদি আমি ইমিগ্রেশনে সিগারেট সহ ধরা পড়তাম তাহলে আমার ৪০০ ডলার জরিমানা হতো। যাদের জন্য এত রিস্ক নিবেন তারা কিন্তু শুধু মাত্র সিগারেটের জন্যই এয়ারপোর্টে এসেছিলো। সিগারেট নিয়ে আমাকে হোস্টেলে উঠিয়ে দিয়েই উনারা হাওয়া। আর বহুদিন এদের খোজ পাইনি, অত বড় শিক্ষা সম্ভবত এত তাড়াতাড়ি আশা করিনি।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০২১ সকাল ৭:০৪
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×