somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলাম

২৬ শে আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৪:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলাম
।। মোঃ মিজানুর রহমান ।।
বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় ও অবিস্মরণীয় নাম কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি মানবতার কবি,সাম্যের কবি, বিদ্রোহী কবি, তথাপি বাংলাদেশের জাতীয় কবি। তিনি ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, দার্শনিক, সাংবাদিকতার পাশাপাশি প্রগতিশীল প্রণোদনার জন্য সর্বাধিক পরিচিত। তিনি তার লেখায় সাম্রাজ্যবাদ, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ছিলেন সবসময় সোচ্চার। তিনি সারাজীবন সমাজের গরীব-শোষীত মানুষের জন্য লিখে গেছেন।তার কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের উপর মানুষের অত্যাচার এবং সামাজিক অনাচার ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরোদ্ধে লিখছেন "বিদ্রোহী " কিংবা ভাঙ্গারগানের মত কবিতা, প্রকাশ করেন ধুমকেতুর মত সমসাময়িকী, জেলে বন্দী হয়ে লিখেন "রাজবন্দীর জবানবন্দি "। অগ্নিবীণার মত প্রবেশ এবং ধুমকেতুর মত প্রকাশ হয়েছিল নজরুলের। তিনি সারাজীবন তার লেখনীর মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী, শোষিত মানুষের প্রতি ভালোবাসা,মুক্তি এবং সাম্প্রদায়িকতার প্রতি বিদ্রোহ প্রকাশ করে গেছেন সবসময় । বিদ্রোহ প্রকাশ করতে গিয়ে কবি তার কবিতায় লিখেছেন-
"আমি চির বিদ্রোহ বীর
বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা
চির উন্নত শির।"
নজরুল ছিলেন বাংলা সাহিত্যের তুঙ্গীয় নিদর্শন। তিনি শুধু একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর কবি ছিলেন না। বরং মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, নারী,পরুষ, ধনী,গরীব,বড়,ছোট সকলের কবি। তিনি সবাইকে এক কাতারে এনে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করার যে প্রচেষ্টা সেটা নজরুল করেছেন বারবার। লেটোর দল, মসজিদের মুয়াজ্জিন, কিংবা হোটেলের রুটি তৈরির কাজ করেছেন আনন্দের সাথে। সারাজীবন সাধারণ শোষিত নিপীড়িত মানুষকে ভালোবেসেছেন মানুষ হিসেবে। সাধারণ মানুষের পক্ষে লিখছেন, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লিখতে গিয়ে জেল খেটেছেন নির্দিধায়। পিছিয়ে পড়া সাধারণ গ্রামের শোষিত মানুষের মুক্তির জন্য আকুতি করেছেন বারবার। তাদের জন্য লিখেছেন জনসাহিত্য, গনসাহিত্য।
কবি কাজী নজরুল ইসলাম সমাজের নারীদের অধীকার প্রতিষ্ঠায় ছিলেন অগ্রগামী। তিনি নারীদের মর্যাদা দিয়ে লিখেছেন-
বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী-
অর্ধেক তার নর।"
কবি সাম্যের গান গেয়েছেন, ইসলামের মর্যাদা এবং ইসলামকে শান্তির ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কবিতা লিখছেন, গান গজল লিখেছেন, গল্প উপন্যাস প্রবন্ধ লিখেছেন।।
নজরুল এদেশকে ভালোবেসেছেন, এদেশের সাধারণ মানুষকে ভালোবেসেছেন, এদেশের প্রকৃতিকে ভালোবেসেছেন। তিনি ছিলেন বাঙ্গালি জাতির মুক্তি ও এদেশের চেতনাগত সংকটউত্তরনের ও উজ্জীবনের এক সাহসী অনুপ্রেরণা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীন বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশেষ চেষ্ঠার ফলশ্রুতিতে ১৯৭২ সালের ২৪ মে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা প্রতিভা কবি কাজী নজরুল ইসলামকে কোলকাতা থেকে ঢাকা আনা হয়। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে স্বীকৃত পান । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডিলিট এবং বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করেন। সদ্য স্বাধীন দেশের জন্য যা ছিল সামনে এগিয়ে যাওয়া অনুপ্রেরণা।
আজ স্বাধীনতার চার দশক পর যখন জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, দেশীয় ও বাইরের বিভিন্ন ষড়যন্ত্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে তখন কবি কাজী নজরুল ইসলামের মানবতা ও রাজনৈতিক দর্শন আমাদের পথ দেখাতে পারে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যেমন কবির গান কবিতার আমাদের অনুপ্রাণিত করেছিল তেমনি বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলার ক্ষেত্রেও তিনি হতে পারে আমাদের অন্যতম অনুপ্রেরণার উৎস। সাধারণ জনগণকে কিভাবে আমরা দেশের কল্যাণে ব্যবহার করতে পারি তা নজরুল স্পষ্টভাবেই উচ্চারণ করে গেছেন। নজরুলের জীবনি- সাহিত্যে কর্ম গ্রহণ এবং বাংলাদেশের সামনে এগিয়ে যাওয়া পথ অচ্ছেদ্য ও অনিবার্য। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেমন সদ্য স্বাধীন দেশে কবিকে এনে সম্মানিত করে অনুপ্রেরণা জাগিয়েছিলের দেশের জন্য তেমনি আমাদের বর্তমান তরুন সমাজের উচিত কবির রাজনৈতিক ও মানবতার দর্শন, সাম্রাজ্যবাদ - সাম্প্রদায়িকতা, অনাচার শোষণের প্রতি বিদ্রোহী মনোভাবের শিক্ষা দেশের উন্নয়ন ও কল্যানের অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে গ্রহণ করা।

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৪:৪১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইরান ইসরাইলের আক্রমণ-প্রতি আক্রমণ আর আমাদের সুন্নী-শিয়া মুমিন, অ-মুমিন কড়চা।

লিখেছেন আফলাতুন হায়দার চৌধুরী, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩০

(ছবি: © আল জাযীরা মিডিয়া নেটওয়ার্ক)

শ্রদ্ধেয় ব্লগার সামিউল ইসলাম বাবু'র স্বাগতম ইরান পোষ্টটিতে কয়েকটি কমেন্ট দেখে এই পোষ্ট টি লিখতে বাধ্য হলাম।
আমি গরীব মানুষ, লেখতে পারিনা। তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৯




আমরা পৃথিবীর একমাত্র জাতী যারা নিজেদের স্বাধীনতার জন্য, নিজস্ব ভাষায় কথা বলার জন্য প্রাণ দিয়েছি। এখানে মুসলিম হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান চাকমা মারমা তথা উপজাতীরা সুখে শান্তিতে বসবাস করে। উপমহাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্যা লাস্ট ডিফেন্ডারস অফ পলিগ্যামি

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০


পুরুষদের ক্ষেত্রে পলিগ্যামি স্বাভাবিক এবং পুরুষরা একাধিক যৌনসঙ্গী ডিজার্ভ করে, এই মতবাদের পক্ষে ইদানিং বেশ শোর উঠেছে। খুবই ভালো একটা প্রস্তাব। পুরুষের না কি ৫০ এও ভরা যৌবন থাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রিয় কাকুর দেশে (ছবি ব্লগ) :#gt

লিখেছেন জুন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৩



অনেক অনেক দিন পর ব্লগ লিখতে বসলাম। গতকাল আমার প্রিয় কাকুর দেশে এসে পৌছালাম। এখন আছি নিউইয়র্কে। এরপরের গন্তব্য ন্যাশভিল তারপর টরেন্টো তারপর সাস্কাচুয়ান, তারপর ইনশাআল্লাহ ঢাকা। এত লম্বা... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেরত

লিখেছেন রাসেল রুশো, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:০৬

এবারও তো হবে ইদ তোমাদের ছাড়া
অথচ আমার কানে বাজছে না নসিহত
কীভাবে কোন পথে গেলে নমাজ হবে পরিপাটি
কোন পায়ে বের হলে ফেরেশতা করবে সালাম
আমার নামতার খাতায় লিখে রেখেছি পুরোনো তালিম
দেখে দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×