ছোটবেলায় কামারের মতো মুখচোরা গোছের "বড় ভালো লোক" ছিলাম। দুষ্টুমিতে যদি মা, বাবা ধরে পেটাত বা বকা দিত, মনে মনে খুঁজতাম "কেন ধরা খেলাম? ভালো কাজ (মা'র মতে তা বাঁদরামি) থামানোর তো প্রশ্নই ওঠে না! কিন্তু যে করেই হোক ধরা আর খাওয়া যাবে না!"
সারাদিন মাঠে খালে দাঁপিয়ে বেড়ানো,
দল বেঁধে পুরো পাড়া মাথায় তোলা__এসবে একটা জিনিসে বিরত রাখতে পারত; বই। মা'র মতে__ "ওই বয়সের নভেল নাটক।"
ছোট কাকার বই ছিল তাক ভরা। বইয়ের মাঝে লুকিয়ে সেই সব হাফ নিষিদ্ধ পড়তে গিয়ে একদিন পরিচয় হলো... আমারই মতো আরেক ছন্নছাড়া; 'ইন্দ্রনাথের' সাথে। খুঁতখুঁতে মনে খুঁজে বের করল ইন্দ্রনাথের মতো অনেককেই গড়েছেন আমারই মতো আরেক ছন্নছাড়া। সন্ন্যাসে যার বাতিক ছিল সেই ছোট্টকাল থেকেই।
দেবলীনা ব্যানার্জীর অনুবাদে "ছন্নছাড়া মহাপ্রাণ" পড়তে গিয়ে মনে হল, "আরেহ্! এতো আমারই শৈশবের আগের ভার্সন! কুয়াশা আর মাঝ রাতে আঁধারের চাদরে চুপিচুপি বাড়ি পালানো (বাকিটা বলা ঠিক হবে না)... এ তো আমারই গল্প।"
দুঃখী মানুষের ছবি ফুটেছে তার অধিকাংশ লেখায় হৃদয় বৃত্তিকে পাপড়ি করে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের "দ্বিতীয় বছরের সময়কালের আমি" যেন তার গল্পের যে কোনো চরিত্রে মিলেমিশে যাই একাকার হয়ে। লেখা তখনই সাহিত্য হয়ে ওঠে যখন তা পাঠকের জীবনে, তার চারপাশের জীবনের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।
জড়িয়ে গেলাম সেই ছন্নছাড়ার সৃষ্টি কর্মে।
একে একে গিলেছি "দত্তা, চরিত্রহীন, দেনা-পাওনা, পথের দাবী, গৃহদাহ (দেবদাস, পরিণীতা স্কুল জীবনেই সাবাড়)"...এমনি করে সব ক'টা উপন্যাস, গল্প, নাটক। (আর কারো লেখা সবটা এমন খুঁটে পড়িনি)
আরেকটা জিনিস তার টানে বেশি...ভাষার ব্যবহার। বর্ণনার ব্যঞ্জনায় বাঁধে। ছোটবেলা থেকে কথা গুছিয়ে না বলতে পারাটা অনেক পীড়া দিত। এইটে থাকতে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় উপস্থিত বক্তৃতা দিতে দাঁড়িয়ে পাক্কা মিনিট তিনেকের মতো দাঁড়ায়ে শুধু ঘেমেছিলাম। মাগার মুখ দিয়ে একটাও হরফ বের করি নাইক্যা!
এখন যে কথার থুবড়ি ছোটে, চিন্তার চড়ুই ফুড়ুৎ করে এ-ডাল ও-ডাল ঘুরে যুক্তির ডালপালা গুছায়ে আনে ___তাতে ন্যাড়া ঠাকুরের অবদান বহুলাংশে।
জন্মদিনে তাই অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে প্রণাম জানাই ঠাকুর।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১:৩০