পরীক্ষা পতঙ্গের কারণে অনেকদিন সামুতে আসা হয়নি। কেমন আছেন সবাই? অনেকদিন পরে এলে বাঙালির ঐতিহ্য খালি হাতে না আসা। আজ নিয়ে এলেম মুভির মিঠাই।
তা আর দেরি না করে মিঠাইয়ের ঠোঙা তাহলে খোলা যাক। কী বলেন?
উনিশের গোড়ার দিকের স্পেন। গাছে গাছে লেগেছে সবে আটলান্টিকের হালকা মেদুর হাওয়া। সেই সাথে দল বেঁধে এসে হুড়মুড়িয়ে পড়া উষ্ণ রবিকরে যেন নড়েচড়ে ঘুম ছুটেছে শীতের চাদর চাপা লম্বা লম্বাওক-পাইনের। তেমনি এক গা ঝাড়া সকালে আর্কিওলোজিস্ট মার্সিলিনো সানয্ ডি সেটুটোলাকে বাসার কাজের লোক এসে খবর দিলে, পুরনো ক্ষেতের টিলাটায় এক পুরনো গুহার মুখ বেরিয়েছে। মনে হচ্ছে ভেতরে কিছু থাকতে পারে।
খোড়া-খুড়ির দক্ষ-যজ্ঞের পর মস্ত গুহার পরিবেশ নিয়ে ব্যস্ত মার্সিলিনোর চোখে মেঝেতে ভাঙা কিছু মাটির ভাঙা পাত্র ছাড়া আর তেমন কিছুই পড়েনি। এই সময়ে হাজির আমাদের গল্প কথক মারিয়া। পুরো মুভিতে মন্ত্র-মুগ্ধ অভিনয়ে "মুভি দেখছি" ভুলিয়ে রাখা মারিয়া ডি সেটুটোলা!মার্সিলিনোর ন বছরের মেয়ে। আর্কিওলজি-সাইন্স-মিউজিকে অতটুকু মেয়ের কী আগ্রহ! মুভির খাতিরে না, ইউরোপে এটাই ছিল শিক্ষিত পরিবারের চল।
যাইহোক, মারিয়া একটা লাইট নিয়ে ধীরে ধীরে গুহার আরো গভীরে প্রবেশ করে। তারপর আবিষ্কার করে গুহার ভেতরের ছাঁদে আঁকা বড় বড় বাইসনের ছবি! মার্সিলিনো ভেবেছিলেন এই সব হাজার দশেক পুরনো মানুষের কাজ হবে।
মার্সিলিনোর এই আবিষ্কারে কিন্তু অল্পতেই তার প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিল সেই পুরনো কাসুন্দি; চার্চ। সাথে জুটে গেল "নাইয়ের শত্রু নাইয়ে" হিসেবে নামে-খ্যাতিতে পূর্ব প্রতিষ্ঠিত অধ্যাপকেরা। মার্সিলিনোর আবিষ্কারকে স্বীকৃতি দিলে তাদের আবিষ্কার যে নগণ্য হয়ে পড়ে! সবাই মিলে তাই করলে ষড়যন্ত্র।
সেকালে বিজ্ঞানের প্রতিপক্ষ ছিল ধর্ম। এখনো আছে কিনা করোনা থেকে বাঁচতে গো-মূত্র সেবন আর করোনার ইন্টারভিউ দেখে থাকলে বুঝতে সুবিধা হবে।
যাগকে ওদিকে আর না যাই। ধর্মের এই এতটুকুতেই ধর্ম তখন হেরেসির গন্ধ খুঁজে নিত। এখনও যে নেয় না, তা নয়। আর তার পেছনের কারণ সব একই; ক্ষমতা। সব ধর্ম পণ্ডিতেরা মক্কার কর্তাব্যক্তিদের "সত্য মেনে না নেয়া"র পেছনে গোত্রপতিদের ক্ষমতা চলে যাওয়াকে যুক্তি করেন। আদতেই এটা উপযুক্ত যুক্তি। কিন্তু সেই গোত্রপতিদের কাজ যে তারা নিজেরাই এখন করছেন সেটা তারা অনুধাবন করে কিনা সন্দেহ।
যাইহোক, চার্চ আর পরশ্রীকাতর অধ্যাপকেরা মিলে অপমান, অপদস্ত, অপবাদ দিয়ে মার্সিলিনোকে অনেকেটা একঘরে করে রাখলো। শুধু তাই না, "বাপ হবার অনুপযুক্ত" শিরোনামে মার্সিলিনোর দুর্নামে পত্রিকায় খবর পর্যন্ত ছাপালো! রাগে, দুঃখে,অভিমানে সে নিজের যাবতীয় থিসিস পেপার পুড়িয়ে দিল। সব কাজ বন্ধ করে দিল।
কিন্তু আমরা আজ জানি মার্সিলিনোর সেই আবিষ্কারের কথা। মানুষের অমর কীর্তির কথা। পরিবর্তনের কথা। আপনার আমার পূর্ব পুরুষের চিন্তা-চেতনার কথা। ভাবনা কথা। কিন্তু ওটাই যে সে পূর্ব পুরুষের প্রমাণ তার স্বীকৃতি কিভাবে পেল?
তাছাড়া বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তিতে প্রমাণ হয়েছে আলতামিরায় মার্সিলিনো-মারিয়ার আবিষ্কৃত ওই চিত্র ১০ হাজার নয় ৩৫ হাজার বছর আগের! ভাবা যায়, যেখানে আমাদের জানা সভ্যতার বয়স আজ থেকে ৫/সাড়ে ৫ হাজারের বেশি পুরনো নয়! সেখানে ৩৫,০০০ বছর আগে মানুষ এঁকেছে ছবি! সেই সময়ের কোনো আরেক ভিঞ্চির রঙ তুলিতে নড়েচড়ে উঠেছে ভেতরের আত্মা!
সেই গল্প ফ্রেমবন্দি করেছেন পরিচালক হগ হডসন।
গোলশিফতেহ ফারাহানি অভিনয়ে ইরানী গোলাপের খুশবাই একটুও মলিন হতে দেননি। আর যারা ইন্ডিয়ানা জোন্স, ফিলাডেলফিয়া, পেইন অ্যান্ড গ্লোরি দেখেছেন তাদের কাছে অ্যান্টোনিও বান্ডারাস নিয়ে নতুন কিছু বলার নাই। তবে মনে দাগ কেটেছে আমার মারিয়া চরিত্রে অ্যালেগ্রা আলেন।
হ্যাপি ওয়াচিং।
সব শেষে Kabir Chand স্যারকে ধন্যবাদ না দিলে অপরাধ হবে। এত সুন্দর একটা মুভিটার খোঁজ যে উনার থেকেই পাওয়া।