হঠাৎ ফোঁপানির শব্দে আটকে গেল খাওয়া।
চাঁদরাত; বারোটার কাটা ছুঁই ছুঁই
আলু ভর্তা মেখে বসেছি সবে, আলসেমিতে মাছ-মাংস থুই।
বারোটার কাটা ছুঁই ছুঁই!
আতশের বাজিতে বাজিতে আঁতকে ওঠা শহর এখন মোটামুটি শান্তই।
চাঁদরাত; বারোটার কাটা ছুঁই ছুঁই!
দোহাই টেনে নাড়ির টানের নিজেরি বাড়িতে বেড়াতে গেছে অনেকেই
দু'কোটির জ্যামের শহর শান্তিতে খেলিছে আজি থই থই।
আবার! আবার হঠাৎ ফোঁপানির শব্দ; কোই কোই?
মেসের মার্জারে কাঁদে হয়তো, মা ছেড়েছে বোধহয় আগের মতই
চাঁদরাত; বারোটার কাটা ছুঁই ছুঁই!
ফোঁপানির শব্দ আবার, না না__বিড়াল তো নয়, এ আর কো'ই
টবের মরিচ গাছটাই হবে, পানি নেই___ কিন্তু আমি তার কী হই?
মরিচ মজেছে টুইটুম্বুর পানিতে, কিন্তু কাঁদে কে? কে কাঁদে? কোই?
মাঝরাত! একেলা! বারোটার কাটা ছুঁই ছুঁই!
ফোঁপানির ফোকড়ে একেলা না চাপা পড়ে যাই, সই!
... বুঝেছি! রান্না বন্ধ মেসের গত দিন কয়
খাবারের অভাবে ছেলে কাঁদে টিকটিকির__আর কেউ নয়।
দিয়ে দেখি উঁকি। ওরে বাবা! একি!
মা-ছেলে মিলে তাড়াতাড়ি গিলে স্বপনে ঘুরিছে ভেস্ত-স্বর্গ দেখি!
কিন্তু... ফোঁপানির শব্দ!
নাহ্! মুসিবতে জব্দ, শেষ হবে না-নাকি?
দুপুরে দেইনি চড়ুইয়ের চাল খেতে ঠিকি
যাইহোক, রাতে কবে চড়ুইয়ের শুনি ডাকিডাকি?
চুলোয় যাকগে সব, আমি আগে খেয়ে নেই
চাঁদরাত; পেরিয়েছে মাঝরাত, ধাবমান তুরগে সাওয়ার হই।
মুখে পুরে ভাত ভাবি কিয়া বাত, ফোঁপানি ফুসছে যেন কানের গোড়ায়!
চেয়ে দেখি থালে আলু-পেঁয়াজ সকলে গ্রাসে গ্রন্থের বদলে নিশ্চল-ঠায়!
তাহাদেরি অনুসারী আঁখি করি প্রসারি আমারি থালার কোণায়
এক মরিচের কুচি গেয়ে দুখ্ শুচি উথলি ভাসে অশ্রু নোনায়।
সাথি সবে কেবলি ঢালিছে অভয়ের ডালি "তুমিও যাইবে গ্রাসে"
কিন্তু সে কুচি, থমকে রোদন উছাসি অপাঙতেয় হইবার ত্রাসে।
আমি বলি হেসে, ওরে নাদান কিসে, নিজেরে ছোট ভাবায়?
যাহারে ভাবিছো নিচু সেই সব থেকে উঁচু; গেঁথেছিস দেখ কবিতায়।
ঈদ মোবারক।
___২০ বৈশাখ, ১৪২৯।
ছবি: পিন্টারেস্ট।
[দুপুরে খেতে বসে হঠাৎ করে মনে পড়ল পৃথিবীর সব গল্প নাকি লেখা শেষ।
তখনই থালায় মরিচের এক কুচি হেসে উঠে বলল, কবিতা চিরন্তন।
তার সেই হাসির যুক্তিতে।]
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:১৫