somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিয়ের শাড়ি

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বেলা প্রায় এগারোটায় মাহমুদা বেগমের ফোনে মেয়ে মিহি ভেউ ভেউ করে কাঁদছে। মাহমুদা বেগম মেয়েকে শান্ত্বনা দিচ্ছে আর বলছে বিকেলে বাসায় আসবি , তোর রাখি ভাবীও আসবে। মিহি কান্না থামিয়ে বললো সাদকে জিজ্ঞাসা করে জানাবো মা। মাহমুদা বেগম জানেন মেয়ে অনেক ভাবুক, অল্পতেই কষ্ট পায়, সামান্য একটা বিষয়ে কিভাবে কাঁদছে তাই মেয়েকে বাসায় আসতে বললেন।
মিহি সাদের সাথে কথা বলে ঘরের কাজ শেষ করে বাসায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলো এবং মা কে সকালেই ফোনে বলে রেখেছিলো আজ দুপুরে সে মায়ের সাথে খাবে। বাসায় গিয়ে দেখে রাখি চলে এসেছে। রাখি মিহির খালাতো ভাইয়ের বউ।
মিহির বাবা দেশের বাইরে থাকে, ওর ভাই-ভাবীও সেখানে থাকে মানি সিডনিতে থাকে। মিহির মা বাড়িতে মোটামুটি একা, কাজের লোক আছে এই আর কি। তিনজন একসাথে বসেছে, মাহমুদা বেগম সামান্য নাস্তা আর শরবতের কথা বলতেই মিহি ভেউভেউ করে কেঁদে উঠলো। রাখি বললো একি ননদিনী কি হয়েছে এত কষ্ট কেন? মাহমুদা বেগম বললেন উনার বিয়ের শাড়িতে বিষ পিঁপড়া উঠেছে, শাড়ির বাক্স পুরো ছিদ্রে করে ফুটো ফুটো করে ফেলেছে বাক্সটাকে। রাখি জিজ্ঞাসা করলো শাড়ির কি অবস্থা ? মিহি কান্নার সুরে বললো আল্লাহর রহমতে শাড়িটা ঠিক আছে ভাবী।
আবারো মিহি চোখ মুছতে মুছতে কেঁদে দিয়ে বলো, ভাবী জানো আমার শাড়িটা দেখতে খুব সুন্দর। কিছুটা লাল-খয়েরী বেশ ভারী পুরোটা পাথরের কাঁচ করা, আচলটা একটু সবুজ-সবুজ আর শাড়িটাতে গোল্ডেন কাজ পুরো, অপরূপ সুন্দর আমার বেনারসি টা, আমার বিয়ের শাড়িটা।
রাখি বিয়েতে থাকতে পারেনি, অফিসের কাজে দেশের বাইরে ছিলো। রাখি খিক খিক করে হেসে দিয়ে বললো মিহি একটা গল্প বলি শুনবে? মিহির মা মেয়েকে বললেন কিছু হয়নি অযথাই তুমি চোখের পানি ফেলছো চুপ করো এবার। আগে দুপুরের খাবার সেরে নাও এসো সবাই, তারপর অনেক গল্প করা যাবে।
দুপুরের খাবার শেষ করে তিনজন একসাথে মাহমুদা বেগমের বিছানায় বসলো এবং তাদের আড্ডা শুরু হলো। ভাবী কি যেনো গল্প বলবে মিহি মনে করিয়ে দিলো। রাখি বললো হ্যাঁ বলবো শুনো তাহলে।
আমি তো একসময়ে হোস্টেলে ছিলাম এবং বিয়ের পর তোমার ভাই আমাকে একটা বাসা ভাড়া করে দেয়। সেই বাসায় তো তুমি গিয়েছো বহুবার। সেই বাসার তিনতলায় রিমি নামে একটা মেয়ে ছিলো, চার ভাইয়ের এক বোন, সবার খুবই আদরের। যখন যেটা চাইতো সেটাই হাজির করতো বাবা-মা-ভাই-ভাবীরা। এক ভাই বিদেশে থাকতো আর বোনের জন্য ছোট ছোট স্বর্নের গহনা পাঠাতো। মিহি বলে উঠলো ভাবি কিছু মনে করো না গল্পের কোন আগা মাথা পাচ্ছি না। কি নিয়ে গল্প সেটাও বুঝতে পারছি না। মিহির মা বললেন উফ! আগে কথা শেষ করতে দাও। মিহি মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো তুমি আমাকে বকা দিলে, ঠিক আছে আর কিছু বলবো না, ভাবি তুমি এবার বলো। রাখি হেসে দিয়ে বললো ননদিনী গল্পটা শুনো তুমিও একটু পর হাসবে।
রিমি স্কুলে পড়ে সবেমাত্র ক্লাস টেন, ওর বাবা মায়ের ইচ্ছা মেয়েকে অনেক পড়াশুনা করাবে, মেয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াবে, চাকরী করবে, অনেক বড় হবে। হঠাৎ একদিন রিমির মা দেখলেন স্কুল থেকে একটা ছেলের সাথে মেয়েকে বাসায় ফিরতে। ছেলে ওকে বাড়ির গেটে দিয়ে চলে গেলো। রিমির মা রিমিকে ছেলেটির কথা জিজ্ঞেস করতেই মেয়ে উত্তর দিলো ওর বান্ধবীর ভাই ওকে নোটস দিতে এসেছে।
কিছুদিন পর রিমির মা আমার রুমে এসে কি যে কান্না কি বলবো তোমাকে। মিহি বললো কেন ভাবী কি হয়েছিলো যে উনি কান্না করছিলেন। রাখি এবার হাসতে হাসতে বিছানায় শুয়ে পড়লো, হাসি থামিয়ে রাখি আবার বলা শুরু করলো। রিমির মা কাঁদতে কাঁদতে বললেন মাগো জানো মেয়েটাকে এত ভালোবাসা দিলাম কিন্তু ও কিভাবে পারলো এমনটা করতে আমাদের সাথে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম আন্টি কি হয়েছে। রিমির মা কাঁদতে থাকলেন এবং বললেন সেদিন তুমি ওকে এত করে বুঝালে এতবার জিজ্ঞেস করলে ছেলেটার কথা কিন্তু সে তোমাকে কিছুই বললো না। রিমি ঐ ছেলেটার সাথে পালিয়ে গিয়েছে এবং বান্ধবীদের দিয়ে বাড়িতে মিষ্টিও পাঠিয়েছে। ওর এক বান্ধবী এসে বললো যে ওদের এক বন্ধুর বিয়ের মিষ্টি সবাইকে খেতে এবং আমরাও মজা করে খেলাম। কিছু সময় পরে আমার বড় ছেলের শ্বশুর আসলো বাসায় কিছু না বলে কয়েই, কিছুই বুঝলাম না যে উনি হুট করে এই দুপুরে কিছু না জানিয়ে কোথা থেকে আসলেন। বড় ছেলের শ্বশুর বাড়ি ঢুকেই বিয়াই-বিয়াইন বলে ডাকতে শুরু করলেন। ততক্ষনে রিমির বান্ধবীরা চলে গিয়েছে চমচম আর কালোজাম খাইয়ে। রাখি আবারো হেসে উঠলো, মিহি চুপ করে আছে কারণ ও এখনো গল্পের সারমর্ম ও বুঝতে পারছে না।
রিমির বাবা ঘর থেকে বের হয়ে বেয়াইকে সালাম দিতেই বড় ছেলের শ্বশুর গরম গরম কণ্ঠে বলে উঠলেন রিমিকে বিয়ে দিলেন অথচ আমাদের একটু জানানো প্রয়োজন ও মনে করলেন না। রিমির বাবা-মায়ের মাথায় যেন বাজ পড়লো। তারা দুজনেই একসাথে বললো কি বলছেন বেয়াই এসব আপনি, ওর তো পরীক্ষা আজ, এখনো মেয়ে আমাদের বাড়ি ফিরে নি। পরে রিমির বাবাকে তার বেয়াই ফেইসবুক থেকে ছবি বের করে দেখায়। মেয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছে "লাল বেনারসি পড়ে, আলহামদুলিল্লাহ বিয়ে করে ফেলেছি এবং বাসায় মিষ্টিও পাঠিয়েছি"। রিমির মা কাঁদতে লাগলেন আর বললেন, ওগো রিমির বাপ ঐ মিষ্টি তোমার মেয়েরই বিয়ের মিষ্টি ছিলো, আমরা মিষ্টি খেয়ে যে দোয়া করলাম ওটা রিমির জন্যই। আমার মেয়েকে এনে দাও তুমি।
মিহি বললো ওরে বাপ রে ! ভাবী ও তো স্কুলে পড়তো, শাড়ি! তাও আবার বেনারসি কোথা থেকে পেলো ? চোখগুলো বড় বড় করে জিজ্ঞাসা করলো মিহি। রাখি বললো সে স্ট্যাটাসে এও লিখেছিলো যে মায়ের বিয়ের শাড়ি পরে বিয়ে করলাম! মিহি হা করে তাকিয়ে রইলো, ওর বিষ পিঁপড়া উঠা বেনারসির কথা ভুলে গিয়েছে রিমির ঘটনা শুনে।
রাখি বললো রিমির মা আমার কাছে এসে বলে বেঈমান মেয়ে দাঁতের ব্রাশ টা পর্যন্ত নিয়ে গেছে কিছু বাদ দেয় নি। "ওরে তোর বাপের বিয়ের পাঞ্জাবি টাও নিয়ে গেলি"। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে আবার কেঁদে উঠলো মহিলাটা। তখনো বুঝিনি আমি উনি কেন এত কষ্ট পাচ্ছেন। আমি বললাম থাক কান্না করে আর কি হবে মেয়েকে না হয় বুঝিয়ে বাড়ি নিয়ে আসেন। ছোট থেকে বড় করেছেন কত স্বপ্ন ছিলো এখন কষ্টতো লাগবেই।
তখনি রিমির মা চেঁচিয়ে বললেন এমন মেয়ের জন্য কষ্ট হয় না। "তুই চলে গেছিস ভালো কথা, কিন্তু আমার বিয়ের শাড়িটা কেন নিলি, তুই তো আলমারী খুলে টাকা ও নিয়েছিস, ওটা দিয়েই না হয় শাড়ি কিনতি, তোর বাপের বিয়ের পাঞ্জাবিটাকেও ছাড় দিলি না। কেমন ছোটলোক কে বিয়ে করলি যে কিনা আবার তোর বয়সে ও ছোট। আল্লাহ সইবে না এসব"। জানো মা রাখি, তোমার আঙ্কেল আর আমি মাঝেমধ্যে আমাদের বিয়ের শাড়ি-পাঞ্জাবি পরে বউ-জামাই সাজতাম আর বাসর রাত ও করতাম!!
কিন্তু এখন আমরা কিভাবে কি করবো, আমার বিয়ের শাড়ি! এই বলে কান্না করতে থাকলেন মহিলা।
মিহি হাসতে হাসতে চিতপটাং, ভাবী এসব কি শুনালে বৃদ্ধ বয়সে এ কেমন জামাই-বউ সাজা! মজা পেলাম কিন্তু খারাপ ও লাগছে কারণ মহিলা টা মনে হয় অনেক সহজ সরল তাই তোমাকে এসব কথা বলেছেন। রাখি বললো এবার ননদিনীর কান্না থামলো আমার। মিহি বললো ভাবী বি কেয়ারফুল, তোমার-আমার মানে আমাদের বিয়ের শাড়ি ব্যাঙ্কের লকারে রাখবো যেন ছেলে মেয়ে বড় হয়ে এসব নিয়ে পালিয়ে না যায়। আমরাও একটু বৃদ্ধ বয়সে এরকম জামাই-বউ সাজতে চাই। উফ! বিয়ের শাড়ি বলে কথা, আমি তো হার্ট অ্যাটাক ই করবো। আমার বিয়ের শাড়ি......

হাফিজা খাতুন নিপা

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১২:৫২
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×