somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফেসবুকে কিছু পেজ পর্যবেক্ষণ : ডাল মে কুচ কালা হ্যায়

২৩ শে আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৫:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম ফেসবুকের কিছু পেজ সম্পর্কে খোঁজখবর করা দরকার। প্রায়ই এমন কিছু পোস্ট আসে যার সাথে সেই পাতার নামের মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। অনেকরকম পাতার ভীড়ে কিছু কিছু পাতার শিরোনামেও চোখ আটকে যায় অথচ পাতায় ঘুরে দেখা যায় কনটেন্ট অনেকটাই আলাদা। আমার মনে বিভিন্নরকম সন্দেহ উঁকি দিচ্ছিল- পাতাগুলোর উদ্দেশ্য কী ? নেহাত মজা করা ? শুধুই হাস্যরসিকতা ? শুধুই `প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য' লেবেল ব্যবহার করে তরুণদের আকৃষ্ট করা ? নাকি এর পেছনে কোনো সংগঠিত শক্তি বা সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা আছে ?

তাই সময় নিয়ে এমন বেশকিছু পাতায় হানা দেয়া শুরু করলাম। এমন পাতা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আমি মূলত শিরোনামের ভিন্নতা ও পাস্পরিক লিংক বা শেয়ার আদানপ্রদানকে গুরুত্ব দিয়েছি। লক্ষ্য রেখেছি পোস্টের ধরন, পেজের যাত্রাশুরু ও লাইক বা অনুসারী সংখ্যার দিকে। প্রায় একশ পেজের আদ্যোপান্ত অনুসরণ করে আমি এমনকিছু চাঞ্চল্যকর বিষয় লক্ষ করেছি যা রীতিমত শিহরিত হবার মত। আমার অন্বেষণের প্রায় ৭৫ টি পাতার মধ্যে প্রায় ৩৩টি পেজের কনটেন্টের মধ্যে অদ্ভূত মিল আছে। আমার পরবর্তী আলোচনা এই ৩৩টি পেজ নিয়ে।

অস্থির জোক্স, স্বাস্থ্য টিপস, লুলরে লুল, রসালো,লাইক দিলে হাসি ফ্রি, আমি কষ্ট পেতে ভালবাসি,দুই দিনের দুনিয়া, পুদিনা, আসুন আমরা হাসি, হাসতে হাসতে গড়াগড়ি, সবার জানা উচিত, টিনের চালে কাক, চেনা মডেলদের অচেনা ছবি, অই ছেরি ওড়না গলায় না দিয়া বুকে দে, আমরা মানুষকে ভাল উপদেশ দেই কিন্তু নিজেরা মানি না - এমন সুড়সুড়ি দেয়া নামের পেজগুলোর কোনো কোনোটাতে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য বা ১৮+ মার্কা দেয়া হয়েছে, উদ্দেশ্য নিশ্চয়ই মহৎ নয়। কারণ এসব পেজের কনটেন্টে রয়েছে সম্পূর্ণ বিপরীত বিষয় ইসলাম ধর্মীয় অনুভূতি ব্যবহার করার নজির। একই পাতায় সেলিব্রেটি আর হিজাব পরিহিতা নারীর ছবির বৈপরীত্য পাওয়া যাবে , দেখা যাবে মোনাজাতরত শিশু যার জন্য নামায ফরজই হয়নি তার ছবি, অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারীর ধর্মীয় বাধ্যবাধকতাকে উস্কে দেয় এমন কমেন্ট বা ছবি। আজগুবি, অলৌকিক এবং যুক্তিসিদ্ধ নয় এমন নানা বিষয় বা ধর্মীয় অন্ধত্বকে প্ররোচিত করে এমন ছবি (যেমন- মাংশে ক্যালিগ্রাফি, দুর্যোগে অক্ষত থাকা মসজিদ ইত্যাদি)।

এছাড়া আরো কিছু বৈশিষ্ট্য এসব পাতার ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায়, যেমন-
* অনবরবত লাইক ভিক্ষা করা। লাইক ভিক্ষার আইডিয়াতেও আছে মিল, যেমন- `আপনার এলাকায় বৃষ্টি হলে লাইক দিন।' বা `শচীনের জন্য লাইক' `আফ্রিদির জন্য কমেন্ট' ' সাকিবকে দলে দেখতে চাইলে লাইক দিন', ` এই ছবিটা চিনলে লাইক দিন' ইত্যাদি।
* সাকিব আল হাসান, শাকিব খান, মাশরাফি, সালমান এমন তারকাদের ছবি ব্যবহার করে লাইক চাওয়া।
* রবীন্দ্র বিরোধীতা
* পবিত্র স্থান বা প্রার্থনার ছবি ব্যবহার করে লাইক চাওয়া।
* ভারত বিরোধীতা
* প্রায় একই ধরণের কৌতুক ব্যবহার করা।
* কমেন্টে মাশাল্লাহ্ , সুবহানাল্লাহ এবং আলহামদুলিল্লাহ-এর লক্ষণীয় প্রয়োগ।

পেজগুলোর মধ্যে ১৯টির যাত্রাশুরু হয়েছে ২০১১ এর জুন থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে। বাকীগুলোরও প্রায় কাছাকাছি সময়ে। অথচ এরই মধ্যে একাধিক পাতা অর্ধলক্ষ লাইক বা অনুসারি অতিক্রম করেছে। অন্তত ১০ টি আছে যাদের লাইক ৬ মাসে ১০০০০ অতিক্রম করেছে। মাত্র ১৫ দিনে প্রায় ৫০০০ লাইক অতিক্রম করেছে এমন পেজও আছে। যদিও কনটেন্ট বলতে ওইগুলোই।

এসব পেজের একটা সাধারণ প্রবণতা হল, পেজের নামের ক্ষেত্রে তরুণ-তরুণীদের মুখে সাম্প্রতিক প্রচলিত শব্দ (স্ল্যাং) বা ফ্রেজ ( বাগধারা) ব্যবহার করা। বাংলাদেশের ক্রিকেটীয় গ্ল্যামার এবং খবর ব্যবহার করার প্রবণতাও ব্যাপক। ইসলাম ধর্মীয় বিশেষত নারীর পর্দা তথা হিজাব সংক্রান্ত বিষয়গুলো বাংলাদেশের উদার ধর্মীয় মূল্যবোধ ও চর্চার বিরুদ্ধে কদর্য ও আক্রমণাত্মকভাবে উপস্থাপন করা হয় এসব পেজে। অথচ পেজগুলোতে বোম্বের বা হলিউডের নায়িকাদের অর্ধনগ্ন ছবি শেয়ার করা হয়। এর উদ্দেশ্য বোধহয় বুঝতে কারো অসুবিধা হওয়ার কথা নয় ।

আমার এই লেখার উদ্দেশ্য কেবল তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যারা সহজেই প্রাপ্তবয়স্ক উপাদানের আকর্ষণে বিগলিত হন, মানে মাথাটাথা খারাপ কইরা ফালান আর বিপাশা বসুর খোলা বুক দেখার আশায় পেজে উঁকি দিয়া কয়েকটা আরবি লাইনের নিচে বুইঝা না বুইঝা লাইক মাইরা আসেন বা ধর্মীয় অনুভূতির সুড়সুড়ি দেখলেই লাইক বসিয়ে দেন, মনে করেন সহজেই বেশ একটু পূণ্য কামাই হইল। এসব পেজ যে প্রায় একই ফ্যাক্টরি থেকে পয়দা হচ্ছে তা উপরের তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায়। সুতরাং তাদের উদ্দেশ্যও এক। পেজগুলোর জন্ম তারিখ দেখলেও বোঝা যায় যে, দেশে রাজাকার আলবদর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম শুরু হওয়ার কিছুসময় আগে বা পরে এসব পেজগুলোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং জোরদার হচ্ছে। আপাত দর্শনে ১৮+ জোকস বা নায়িকার নগ্ন ছবি সাটানো পেজগুলো যে কোন সময় জঙ্গীবাদের জিগির তুলতে থাকবে না তা বলা যায় না। কারণ এরা ইসলাম আর জিহাদি জোশ গেলানোর জন্য নিজের মা-বোনকেও বিক্রি করে দিতে পারে । এরাইতো ৭১-এ কোরান-হাদিস ঘেঁটে ফতোয়া দিয়েছিল যুদ্ধকালে যেসব নারী অপহৃত বা বন্দী হয়েছে তাদের ভোগ করা জায়েজ।
আপনি যদি এসব পেজে একবার লাইক দিয়ে যান তো আপনার পেজে ক্রমাগত এইসব কন্টেন্ট আসতে থাকবে। দোষটাতো কন্টেন্টের নয় সেটাতো ক্যামোফ্লেজ মাত্র। যেসব পেজে গুতোটা মারা হচ্ছে তার পেছনের মাস্টারমাইন্ড-এর উদ্দেশ্য সফলে আপনি সহযোগিতা করছেন আর সেই উদ্দেশ্য যে কী তা আশা করি বোঝাতে পেরেছি।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৫:৫৮
১২টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×