somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন মোনতাজ উদ্দীনের অপমান থেকে কী শিখলাম

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভান্ডারিয়া সরকারি কলেজে পরীক্ষার হলে বাকবিতণ্ডার জের ধরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুলের পায়ে ধরে মাফ চাইতে বাধ্য হয় সহকারি অধ্যাপক মোনতাজ উদ্দীন। এই অপমানে তিনি গিয়েছিলেন আত্মহত্যা করতে, শিশু মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে পারেননি। সরকারি চাকুরিতে ঐ ম্যাজিস্ট্রেট মোনতাজের চার বছরের জুনিয়র কর্মকর্তা । গত ৯ই এপ্রিলের এই ঘটনায় এতদিনে টনক নড়েছে সারাদেশের সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতির। তারা আগামী ২৬ এপ্রিল ঢাকা কলেজে সমাবেশ ডেকেছে। প্রতিবাদ হবে। প্রশ্ন হল, সারাদেশের শিক্ষক মানসিকতা এই প্রতিবাদের জন্য কতটা প্রস্তুত ? তাঁদের আত্মসম্মান কতটা আঘাত পেলে প্রতিবাদমুখর হয় ? আমার মনে হয় নিছক প্রতিবাদ না করে, একটা হেস্তনেস্ত করার সময় এসেছে।আমি নিশ্চিত সরকারের সকল ক্যাডার কর্মকর্তাদের সমর্থন শিক্ষকরা পাবে। এই বাগদাশের অত্যাচারে সবাইতো অতিষ্ঠ !! আর কত ? (দেখুন লিঙ্ক http://www.esamakal.net/# )

শিক্ষকের মর্যাদার জায়গাটিতে খোঁচা মেরে প্রশাসনের আমলারা খুব সুখ পায়। কারণ ক্ষমতাহীন, জৌলুশহীন, ছাপোষা শিক্ষক যে সামাজিক সম্মান আর মানুষের আন্তরিক শ্রদ্ধা-ভালোবাসা যুগযুগ ধরে পেয়ে আসছে তাকে ক্ষমতার দাপটে অসম্মনিত করে বিকৃত সুখ উপভোগ করা । আমলার এই সুখানুভূতি এক ধরনের ধর্ষকাম। এত দাপট আর ক্ষমতা থাকার পরও আমলার সেই সম্মান জোটে না। যা জোটে তা মানুষের আন্তর তাগিদে নয়- ভীতিপ্রসূত। সরকারের ২৯ টি ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে দাপুটে অথচ দীন, ক্ষমতাবান অথচ সঙ্কীর্ণ , অদক্ষ অথচ সুবিধাভোগী, আত্মম্ভরী ও অসাধু এই কর্মকর্তাদের কোটারি স্বার্থের কাছে সরকারের সকল বিভাগ জিম্মি। জন্মগতভাবে হামবড়া স্বভাবের এই ক্যাডারের সদস্যরা চাকুরিতে যোগ দিয়েই ধরাকে সরা জ্ঞান করা শুরু করে। সচরাচর অধ্যাপক পদের একজন প্রিনসিপালের চেয়ারে গিয়ে বসে পড়ে দুই দিন আগে যোগ দেয়া কর্মকতা, সম্বোধন করে "প্রিন্সিপাল সাহেব"। যুগ যুগ ধরে পাবলিক পরীক্ষার নামে প্রশাসনের জুনিয়র, মাঠ-পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এই অত্যাচার সহ্য করছে শিক্ষক, ছাত্রছাত্রীরা দেখে তাদের শিক্ষকের চেয়ে একজন পুচকে "ম্যাজিস্ট্রেট"(?) কত ক্ষমতা ধরে !! একদিন যে হয়ত তার প্রিয় শিক্ষককে মডেল হিসেবে দাঁড় করিয়েছিল, সে হতে চায় "ম্যাজিস্ট্রেট"। অথচ পরীক্ষা চলাকালে "পাবলিক পরীক্ষা অধ্যাদেশ" প্রয়োগের ক্ষমতা কেন্দ্র প্রধানের হাতে দিলে এই গুরুতর অন্যায়ের সমাধান খুব সহজে হয়ে যায়। কিন্তু আমরা জানি নির্লজ্জের মত হাতে-পায়ে ধরে যেভাবে তারা "মোবাইল কোর্ট অধ্যাদেশ" কব্জা করে রেখেছে শুধু যত্র-তত্র বিচারিক ক্ষমতা দেখানোর জন্য সেই একই কারণে "পাবলিক পরীক্ষা অধ্যাদেশ" প্রয়োগের ক্ষমতাও তারা আঁকড়ে ধরে রাখবে। পরীক্ষার হলে নকল ধরার নামে বিড়ম্বনা সৃষ্টি করবে, কিন্তু সরকারি মাস্তানদের রুমে ঢুকবেই না এমন সাবধানী মাতব্বর এরা। ছাগল পালন থেকে বালু উত্তোলন, দোয়া মাহফিল থেকে বৃক্ষরোপণ মিলিয়ে উপজেলার অন্তত ৫০ টা ( এখন কতগুলো জানি না) কমিটির সভাপতি হবে শুধু সবার কাজের ভুল ধরা আর খবরদারির জন্য নিজে কিন্তু কাজ করবে না। উপজেলার জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা নিশ্চিতভাবেই সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অথচ তাকে সবকমিটিতে পাদটীকার মত বসিয়ে রাখা হয়। যদিও অধ্যক্ষ মহোদয়ের এমন হাতপেতে চেয়ে নেয়া সম্মান দরকার নেই। আর এখানটাতেই আমলাদের যত গাত্রদাহ। কাগজে কলমে অপমানের চূড়ান্ত করার পরও যে কোন সমাবেশে শিক্ষকের সম্মান আপনাতেই নির্দিষ্ট হয়ে থাকে সমাজের মানুষের আন্তরিকতায়। এটাকে আমলাদের বড় অপছন্দ। তাই সর্বসমক্ষে শিক্ষককে হেয় করার সুযোগ আমলারা কখনো ছাড়ে না। অথচ শিক্ষক প্রশাসনের জুনিয়র কর্মকর্তার জন্য তাঁর চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে যায়। ”স্যার স্যার” সম্বোধনে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে। আত্মসম্মান অক্ষুন্ন রাখতে হলে আত্মসচেতন হতে হবে, চাকুরির পদমর্যাদা কড়ায় গণ্ডায় বুঝে নিতে হবে। আর শিক্ষকের সামাজিক সম্মানের ওপর যে কোন আঘাত কঠোর প্রত্যাঘাতে গুড়িয়ে দিতে হবে, তবেই হবে ঐসব অশিক্ষিতদের উচিত শিক্ষা।

মোনতাজ উদ্দীনের অপমানকে যদি প্রতিটি শিক্ষক নিজের অপমান মনে না করে তাহলে এই ঘোর অন্যায় তারা চালাতেই থাকবে আর দেশের সবচেয়ে বড় ক্যাডার বা পেশাজীবী সমাজ হয়েও শিক্ষক এভাবে পায়ে ধরে মাফ চাইবে। এই " গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল " আমলাদেরকে প্রতিহত করার জন্য ঐক্যবদ্ধ না হয়ে উপায় নেই।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৮:১৮
৭টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×