
শিক্ষকের মর্যাদার জায়গাটিতে খোঁচা মেরে প্রশাসনের আমলারা খুব সুখ পায়। কারণ ক্ষমতাহীন, জৌলুশহীন, ছাপোষা শিক্ষক যে সামাজিক সম্মান আর মানুষের আন্তরিক শ্রদ্ধা-ভালোবাসা যুগযুগ ধরে পেয়ে আসছে তাকে ক্ষমতার দাপটে অসম্মনিত করে বিকৃত সুখ উপভোগ করা । আমলার এই সুখানুভূতি এক ধরনের ধর্ষকাম। এত দাপট আর ক্ষমতা থাকার পরও আমলার সেই সম্মান জোটে না। যা জোটে তা মানুষের আন্তর তাগিদে নয়- ভীতিপ্রসূত। সরকারের ২৯ টি ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে দাপুটে অথচ দীন, ক্ষমতাবান অথচ সঙ্কীর্ণ , অদক্ষ অথচ সুবিধাভোগী, আত্মম্ভরী ও অসাধু এই কর্মকর্তাদের কোটারি স্বার্থের কাছে সরকারের সকল বিভাগ জিম্মি। জন্মগতভাবে হামবড়া স্বভাবের এই ক্যাডারের সদস্যরা চাকুরিতে যোগ দিয়েই ধরাকে সরা জ্ঞান করা শুরু করে। সচরাচর অধ্যাপক পদের একজন প্রিনসিপালের চেয়ারে গিয়ে বসে পড়ে দুই দিন আগে যোগ দেয়া কর্মকতা, সম্বোধন করে "প্রিন্সিপাল সাহেব"। যুগ যুগ ধরে পাবলিক পরীক্ষার নামে প্রশাসনের জুনিয়র, মাঠ-পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এই অত্যাচার সহ্য করছে শিক্ষক, ছাত্রছাত্রীরা দেখে তাদের শিক্ষকের চেয়ে একজন পুচকে "ম্যাজিস্ট্রেট"(?) কত ক্ষমতা ধরে !! একদিন যে হয়ত তার প্রিয় শিক্ষককে মডেল হিসেবে দাঁড় করিয়েছিল, সে হতে চায় "ম্যাজিস্ট্রেট"। অথচ পরীক্ষা চলাকালে "পাবলিক পরীক্ষা অধ্যাদেশ" প্রয়োগের ক্ষমতা কেন্দ্র প্রধানের হাতে দিলে এই গুরুতর অন্যায়ের সমাধান খুব সহজে হয়ে যায়। কিন্তু আমরা জানি নির্লজ্জের মত হাতে-পায়ে ধরে যেভাবে তারা "মোবাইল কোর্ট অধ্যাদেশ" কব্জা করে রেখেছে শুধু যত্র-তত্র বিচারিক ক্ষমতা দেখানোর জন্য সেই একই কারণে "পাবলিক পরীক্ষা অধ্যাদেশ" প্রয়োগের ক্ষমতাও তারা আঁকড়ে ধরে রাখবে। পরীক্ষার হলে নকল ধরার নামে বিড়ম্বনা সৃষ্টি করবে, কিন্তু সরকারি মাস্তানদের রুমে ঢুকবেই না এমন সাবধানী মাতব্বর এরা। ছাগল পালন থেকে বালু উত্তোলন, দোয়া মাহফিল থেকে বৃক্ষরোপণ মিলিয়ে উপজেলার অন্তত ৫০ টা ( এখন কতগুলো জানি না) কমিটির সভাপতি হবে শুধু সবার কাজের ভুল ধরা আর খবরদারির জন্য নিজে কিন্তু কাজ করবে না। উপজেলার জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা নিশ্চিতভাবেই সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অথচ তাকে সবকমিটিতে পাদটীকার মত বসিয়ে রাখা হয়। যদিও অধ্যক্ষ মহোদয়ের এমন হাতপেতে চেয়ে নেয়া সম্মান দরকার নেই। আর এখানটাতেই আমলাদের যত গাত্রদাহ। কাগজে কলমে অপমানের চূড়ান্ত করার পরও যে কোন সমাবেশে শিক্ষকের সম্মান আপনাতেই নির্দিষ্ট হয়ে থাকে সমাজের মানুষের আন্তরিকতায়। এটাকে আমলাদের বড় অপছন্দ। তাই সর্বসমক্ষে শিক্ষককে হেয় করার সুযোগ আমলারা কখনো ছাড়ে না। অথচ শিক্ষক প্রশাসনের জুনিয়র কর্মকর্তার জন্য তাঁর চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে যায়। ”স্যার স্যার” সম্বোধনে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে। আত্মসম্মান অক্ষুন্ন রাখতে হলে আত্মসচেতন হতে হবে, চাকুরির পদমর্যাদা কড়ায় গণ্ডায় বুঝে নিতে হবে। আর শিক্ষকের সামাজিক সম্মানের ওপর যে কোন আঘাত কঠোর প্রত্যাঘাতে গুড়িয়ে দিতে হবে, তবেই হবে ঐসব অশিক্ষিতদের উচিত শিক্ষা।
মোনতাজ উদ্দীনের অপমানকে যদি প্রতিটি শিক্ষক নিজের অপমান মনে না করে তাহলে এই ঘোর অন্যায় তারা চালাতেই থাকবে আর দেশের সবচেয়ে বড় ক্যাডার বা পেশাজীবী সমাজ হয়েও শিক্ষক এভাবে পায়ে ধরে মাফ চাইবে। এই " গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল " আমলাদেরকে প্রতিহত করার জন্য ঐক্যবদ্ধ না হয়ে উপায় নেই।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৮:১৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




