চলে যেতে হবে.......
এই পৃথিবীটা খুব সুন্দর।
খেয়াল করে দেখুন আপনার মায়ের মুখের হাসিটা সুন্দর। আপনার ছোট বোনের সাথে করা খুঁনসুটিগুলো সুন্দর। আপনার বড় বোনের চোখ রাঙানো ভয়ের পিছনের ভালোবাসাটা সুন্দর। আপনার প্রিয় মানুষটির হাতের এক কাপ কম চিনির 'চা' টা সুন্দর।
বিছানার উপর পাকোড়া খেতে খেতে পরিবারের সবাই মিলে মায়ের বিয়ের ঘটনা জানতে চাওয়ার মুহূর্তটা সুন্দর। অতীত স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে মায়ের লজ্জার আভাযুক্ত হাসিটা সুন্দর।
চিত্রঃ গুগল হতে সংগৃহীত
এত এত এত সুন্দরে ঘিরে দিয়েছেন আপনাকে আপনার রব। এত এত এত সুন্দর নিয়ে আপনি ঘুমাতে গেলেন। মাঝরাতে আজরাইল (আঃ) আসলেন। আপনার জান কবজ করা হোল। এতটুকু পড়েছেন?
এবার চোখটা বন্ধ করুন ৩-৪ সেকেন্ডের জন্য নিজেকে খাটিয়ায় শোয়া অবস্থায় চিন্তা করুন। চোখটা খুলুন আবার পড়তে শুরু করুন। আপনার মা কেঁদে উঠল আপনার মৃত শরীর দেখে। আপনার বড় বোন, ছোট বোন মায়ের পিছনে দাঁড়িয়ে কাঁদছে ভাইয়ার কি হোল কি হোল বলতে বলতে। আপনার অর্ধাঙ্গিনী যাকে নিয়ে জান্নাতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি হয়তো মায়ের বেহুশ হওয়ার আগেই বেহুশ হয়ে গেছেন। আপনি সবার কষ্ট দেখতে পাচ্ছেন। খুব ইচ্ছা করছে একবার মাকে জড়িয়ে ধরে বলতে, "মা দেখো আমার কিছু হয়নি। আমি একদম ভাল আছি।" খুব ইচ্ছা করছে প্রিয়তমাকে বলতে, "আরে আমি একেবারে সুস্থ্য। চল আজ দৌড় প্রতিযোগিতা করি।"
সব বিলীন হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। চোখের সামনে নিজের কবর খোড়া দেখতে পাচ্ছেন। ধীরে ধীরে আঁধার হয়ে আসছে চারিদিক। একেএকে সবাই যে যার গন্তব্যে চলে গেছে আপনাকে একা একেবারে একা রেখে। শেষবারের মত আপনার জীবনের সুন্দর মুহূর্ত সৃষ্টি করা মানুষগুলোও চলে গেছে। তারা কি আপনার শোকে সব বন্ধ করে দিবে? তারা কি আপনাকে আজীবন মনে রেখে চোখের জল ফেলবে? হয়তো দুই একজন। কিংবা কেউ না। রব্বে কারীমের অনন্তকালের দুনিয়ায় প্রবেশ করছেন আপনি। সেই অনন্তকালের দুনিয়াটা কি আপনার জন্য আরামদায়ক করেছেন? নাকি আগুনের লেলিহান শিখা জ্বালিয়ে রেখেছেন নিজের জন্য। আপনি কি আল্লাহর কাছে আবদার করার যোগ্যতা নিয়ে যেতে পেরেছেন? আপনি কি আপনার রবের কাছে বলতে পারবেন, "হে আল্লাহ! তোমারই অনুগত দাস হিসাবে আমার দুনিয়া থেকে বিদায় হয়েছে, আমি কি আমার দুনিয়ার ভালোবাসাগুলো এখানে পাব না?"
আমিও নিজের বুকে হাত দিয়ে বলছি হয়তো দুনিয়ার এই ভালোবাসাগুলো আল্লাহর কাছে চেয়ে নেওয়ার মত যোগ্যতা আমি অর্জন করতে পারিনি। তবুও তিঁনিতো রহমানুর রহীম। এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কীটের চেয়ে অধম বান্দাহকে কি আল্লাহ তাঁর আরশের ছায়াতলে দাঁড়ানোর সুযোগ দিবেন না?
.
বিঃদ্রঃ- দীর্ঘ সাত মাস পর হয়তো আবার হাতে কলম উঠল। দো' আ করবেন যেন হাত আবার মন্থর না হয়ে যায়।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:১০