দিগন্ত রেখার ওপারে শিউলিফুলের বাসা।
পথে যেতে যেতে মনে হলো, চৈত্র এসো গেলো ;
ণিমা গত বছর বলে ছিল যেতে,
ওদের পুকুরধারে কামরাঙা গাছের ফাঁক দিয়ে রোদ আসে;
এ দেখে যদি দু’লাইন গান লিখতে পারি!
দুপুর হলো আকাশে দু’ একটা চড়ূই পাখি ছাড়া কিছু নেই;
জলপায়রা জলেই ডুবে আছে? যা গরম পড়ছে!
ভাবচ্ছি সন্ধের পর শচীনদার খুপড়ি দোকানে যাব; হপ্তা হয়ে গেল যাওয়া হয় না। ঐদিন তো বললো , বিক্রি কমে গেছে। কয়েকজন বুড়ো ছাড়া কেউ চা খেতে যায় না। ভাবা যায় দৈনিক ১২ টাকা বিক্রি ! তাও কিছু মুখস্ত মানুষের কাছ থেকে! শচীনদাকে বললাম , ১টাকা কাপ যা আর কতদিন? কিছু আনাজ-তরকারী উঠাও; তার এক কথা কে কিনবে এগুলো? পাড়া ,গায়ে তো সবার বাসাতে সবজি গাছ পুতে রাখে ।
রাত্রিরে আজ বৃস্টি হলে ভালো হতো আমার ঘরের জলপাইবনের দিকের জানালা খুলে দিতুম; রাত দুপুরে যদিও জীবন্ত ভূতের উপদ্রব !
সাংসারের খরচ বাঁচাতে শিলার বিয়ে দিল।পাঁচ বছরে তিনটি সন্তান পয়দা করে ওরস্বামী ,সন্তান সহ ওঁকে তাড়িয়ে দিল। খুব রাগ হলো পুরুষটার মন জয় করতে পারলি না? স্বল্পশিক্ষিত ,গরীব মেয়েদের তো শরীরটাই পুজি।
ছন্দার কথা মনে হলো! পাড়ার মেয়ে ।কেউ আর ওঁকে মনে রাখেনি। ওর বাবা মাও ভুলে গেছে ! সাংসারে অনেক ছেলে মেয়ে থাকলে যা হয়। ঐ দিন বনের ভেতর শালিকের ডিম কুড়াতে যেয়ে দেখলাম ওর কবরে কে জানি হাগু করে রেখেছে ! কবরেরও অস্তিত্ব নেই। আমি তখন ছোট ছিলাম , ছন্দা দেখতে ফিল্মি নায়িকাদের মত ছিল। কত জায়গা থেকে বুড়া-জোয়ান আসলো ওর বিয়ের jonno। একদিন ছন্দা উদাও! কয়েকদিন পর ওঁকে তেতুল গাছে ঝুলতে দেখা যায়। মনে আছে আমার ওর জানাজা ছাড়া কবর হয়েছিল! কেউ কেউ বলছিল এই মেয়ের এই হওয়া উচিত। তখন জানতাম না কি হয়েছিল তার সাথে। ওর মৃতু্তে চোখে জল এসেছিল , মসজিদের ইমামের উপর রাগ করে দু’হপ্তা জুমার নামায পড়তে যাইনি।
আমাদের পাড়াতে মুসলমানরাই বসবাস করতো । গ্রাম এর পুব পাশে হিন্দুরা থাকতো । মুসলমানরা ওদেরকে চাড়াল বলতো। কি কারনে বলতোজানিনা।
কোন জুম্মাবার মসজিদে নামাজ না পড়তে গেলে, বা মিতথা কথা বললে মা /বাবা বলতো চাড়াল হয়ে গেছিস! এত ছোটছিলাম যে ধর্ম কি জানতাম না, একবার স্কুলেরদীর্ঘ ছুটি শেষে সুনিলের সাথে দেখা ও মিঠাই ,খই,মিষ্টি কি সব খেতে দিল। সুনিলের সাথে দেখে পাড়ার ফারুক বললো তুই চাড়ালদের হাতে খাবার খাচ্ছিস?হিদু তুই!চাড়াল তুই! তোর বাপ কে বলে দিব।এরপর বাবা চাড়ালদের খাবার খেয়েছি বলে, কান ছিড়ে দিসিলো। এরপর অনেকদিন সুনিলের সাথে মেশা হয়নি।যদিও কলেজ লাইফে আমরা চরম বন্ধু ছিলাম।
বি:দ্: লেখাটি কিছু রিয়েল কিছু কল্পনা ।রিয়েলটাই বেশি। লেখাটি বন্ধু হারু/রুশাদকে উৎসর্গ করলাম। ঈদ তো এক সাথে কাটানো হচ্ছে না আপাদত এই অনুভুতির লেখাটিই নাও।