somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোটা গিলে ফেলছে মেধাকে! কোটার নামে বাকশালী কায়দায় বৈষম্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী

২৬ শে জুলাই, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির আমূল সংস্কারের কথা দীর্ঘ দিন ধরে বলে আসছিল সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষা, পর্যালোচনা ও গবেষণা শেষে গত সপ্তাহে পিএসসি সরকারের যে নতুন কোটা পদ্ধতির সুপারিশ করেছে সেটাকে পিএসসি মেধাভিত্তিক কোটা পদ্ধতি বলে অভিহিত করলেও প্রকারান্তরে আগের তুলনায় মেধাবীদের সুযোগকে আরো সঙ্কুচিত করা হয়েছে। এতে বিদ্যমান কোটাব্যবস্থা পরিবর্তন করে মেধা কোটা ও প্রাধিকার কোটা পৃথক করা হয়েছে। জনপ্রশাসনে মেধাবী, চৌকস ও যোগ্য প্রার্থীদের আকৃষ্ট করতে এই সুপারিশ কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলে পিএসসি দাবি করলেও সুপারিশে সে রকম কিছু বলা হয়নি। দেশের সব সচেতন মানুষ, বিগত পিএসসি এমনকি বর্তমান পিএসসি’র চেয়ারম্যান ড. সা’দত হুসাইন, ড. আকবর আলি প্রমুখের মুখ থেকে মেধাবীদের জন্য ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ কোটা বরাদ্দের কথা বলা হলেও প্রস্তাবিত সুপারিশে আগের ৪৫ শতাংশ থেকে মাত্র ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করার কথা বলা হয়েছে। অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ প্রাধিকার কোটার জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধা, মহিলা বিভাগীয় বা আঞ্চলিক ও উপজাতীয় প্রার্থীরা মেধার ভিত্তিতে ৫০ শতাংশ পদ পাবে। ৫০ শতাংশ পদ প্রাধিকার কোটার জন্য শতকরা হিসাবে বিভাজন হবে। সে হিসেবে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কোটা ৪০ শতাংশ (মোট শূন্য পদের ২০ শতাংশ), বিভাগীয় বা আঞ্চলিক কোটা ৩০ শতাংশ (শূন্য পদের ১৫ শতাংশ) মহিলা কোটা ২০ শতাংশ (শূন্য পদের ১০ শতাংশ) এবং উপজাতীয় কোটা ১০ শতাংশ (শূন্য পদের ৫ শতাংশ) নির্ধারণের সুপারিশ করেছে পিএসসি। বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা, মহিলা, জেলা ও উপজাতীয় এ চার ক্যাটাগরির জন্য যথাক্রমে ৩০, ১০, ১০ ও ৫ শতাংশ করে কোটা কার্যকর আছে। সুপারিশে মেধাবী চাকরিপ্রার্থীদের জন্য শূন্য পদের অর্ধেক অর্থাৎ ৫০ শতাংশ নির্দিষ্ট ছাড়াও অন্যান্য কোটায় মেধাবীদের প্রাধান্য দেয়ার কথা বললেও এতে নতুন কিছু নেই। কারণ নির্দিষ্ট কোটার না হলে যত মেধাবীই হোক না কেন তাদের সুযোগ দেয়া যাবে না। বরং প্রস্তাবিত সুপারিশে বলা হয়েছে কোনো প্রাধিকার কোটায় উপযুক্ত প্রার্থী না পাওয়া গেলে সে পদগুলো পরবর্তী বিসিএস পরীক্ষার জন্য সংরক্ষিত থাকবে। অথচ বিগত বিসিএস পরীক্ষাগুলোয় দেখা গেছে সংশ্লিষ্ট কোটাগুলোর জন্য সংরক্ষিত আসনের তুলনায় প্রাধিকার প্রার্থীর সংখ্যা অনেক কম থাকায় সেগুলো মেধাবীদের মাঝে বণ্টিত হতো। কিন্তু বর্তমান সুপারিশে সে সুযোগটুকুও বন্ধ করার সুপারিশ করা হয়েছে। বর্তমান সুপারিশে জেলা কোটার পরিবর্তে বিভাগীয় কোটা চালুর কথা বলা হয়েছে। যা শুধু অযৌক্তিকই নয়, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কারণ জেলা কোটা প্রবর্তন করা হয়েছিল অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে থাকা অঞ্চলের কথা বিবেচনা করে। কিন্তু পিএসসি’র নতুন সুপারিশ কার্যকর হলে তাদের সে সুযোগটুকু চলে যাবে এগিয়ে থাকা জেলাগুলোর দখলে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় জেলা কোটার পরিবর্তে বিভাগীয় কোটা করার পেছনে বিশেষ কিছু জেলার উচ্চ পর্যায়ের রাঘব বোয়ালদের হস্তক্ষেপ কাজ করেছে।
মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের শ্রেষ্ঠ সন্তান। তারা বৈষম্য থেকে মুক্ত হয়ে স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার জন্য যুদ্ধ করেছে। আর মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে সত্য কথা হলো এ দেশে ৯৮ শতাংশ নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। সেখানে মাত্র ০.১২ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার সনদ পেয়েছে এবং অনেকের সনদ পাওয়া নিয়েও বিস্তর প্রশ্ন রয়েছে। আর মাত্র ০.১২ শতাংশ পরিবার থেকে ৩০ শতাংশ কোটার অর্ধেকও কখনো পূরণ হতো না। ফলে সেখানে অন্য মেধাবীদের সুযোগ দেয়া হতো কিন্তু পিএসসি’র বর্তমান সুপারিশে সে পথকে বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে।
সমাজের যেকোনো শ্রেণীর মানুষকে বিশেষ সুযোগ দেয়ার প্রয়োজনটা যেকোনো সমাজের জন্য অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু সেটা কখনো ৫০ শতাংশ বা ৫৫ শতাংশ হতে পারে না। আর প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে তো অবশ্যই নয়। কারণ গাড়ির চালকের আসনে কোনো হেলপারকে বসানোর পরিণতি কী হতে পারে তা আমাদের প্রশাসনের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। কোনো সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণীকে যেখানে সহযোগিতা করার অনেক উপায় রয়েছে সেখানে অসংখ্য মেধাবীকে বাদ রেখে কম মেধাবীদের সুযোগ ড্রাইভার রেখে হেলপারকে চালকের আসনে বসানোর নামান্তর মাত্র।
পিএসসি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর সরকারের কাছে কোটা পদ্ধতির ওপর এই তথাকথিত সুপারিশ করেছে। সংস্থাপন মন্ত্রণালয় এখন সুপারিশ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। গত মার্চে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান ও কাজী রকিব উদ্দিন আহমদের মাধ্যমে পিএসসি কোটা পদ্ধতির ওপর সুপারিশের কাজ শুরু করে। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাংলাদেশে সিভিল প্রশাসনে নিয়োগের জন্য কোটা পদ্ধতি শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় দেশব্যাপী একটি সমীক্ষা ও বহু সেমিনার করা হয়। কিন্তু পিএসসি’র প্রস্তাবিত সুপারিশ দেখে মনে হয় আগের বিরাজিত বৈষম্য আরো প্রকট করা হয়েছে। অথচ পিএসসি বলছে, এটা নাকি মেধাভিত্তিক সুপারিশ। তারা আসলে মদকে ওষুধ হিসেবে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিশেষ সুবিধা পাওয়ার আশায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করলেও কিছু স্বঘোষিত সুশীলরা সম্পূর্ণ আবেগ ও অযৌক্তিক কারণে মুক্তিযোদ্ধা কোটা না কমানোর দাবি করছেন। পাশাপাশি বর্তমানে আমাদের দেশের মেয়েরাও কোটা নয় বরং তাদের যোগ্যতার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে তারা ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে। কোনো কোটা ছাড়াই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী নারী। প্রায় ২৬.২ শতাংশ নারী তাদের যোগ্যতায় শিক্ষক হতে পেরেছেন। সেখানে ১০ শতাংশ কোটা রাখা তাদের জন্য অমর্যাদাকর ও অপ্রয়োজনীয়।
এর পরও কোনো বিশেষ শ্রেণীকে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেণীর চাকরির কিংবা আর্থিক সুবিধা দেয়া যেতে পারে। কিন্তু জাতির নীতিনির্ধারক ও দাতারা কোন যুক্তিতে দেশের সর্বোচ্চ প্রশাসনে ৫০ শতাংশ কোটার সুপারিশ করেন তা মোটেই বোধগম্য নয়। এর অর্থ কি তারা আমাদের সিভিল সার্ভিসকে উন্নত দেশের তুলনায় অদক্ষ ও অযোগ্য রাখতে চায়? দেশের মেধাবীরা কোটার ব্যাপারে পিএসসি’র বর্তমান সুপারিশে রীতিমতো বিস্মিত হয়েছে। পরিশেষে বলতে চাই একবিংশ শতাব্দীর অগ্রসরমান বিশ্বে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হলে অযৌক্তিক আবেগ পরিহার করে বাস্তবমুখী হওয়া দরকার।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×