৩।
জাবেরের মুখে ঘটনা শুনে অবাক হলেন তুরস্কের রাষ্ট্রপ্রধান- কামাল খায়রুল্লাহ। তিনি যেন ভাবনার গভীরে হারিয়ে গেলেন যেখানে একের পর এক চিত্র ভেসে উঠছে অটোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে ইহুদি-খ্রিষ্টানদের ষড়যন্ত্র। হক ও বাতিলের যুদ্ধ। দেশ ও জাতীর অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধ। ধর্মকে টিকিয়ে রাখার যুদ্ধ।
হঠাৎ কারো কাশির শব্দে যেন চৈতন্য ফিরে পেলেন-কামাল খায়রুল্লাহ। তিনি দেখলেন সকলেই তার দিকে চেয়ে আছে যেন সমস্যার সমাধান একমাত্র তার নিকটই রয়েছে। তিনি আলাদিনের চেরাগ ঘসা দিবেন আর দৈত্য বের হয়ে সমাধানের পথ বাতলে দিবে।
-উপস্থিত সম্মানিত ভদ্র মহোদয়গণ। ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য যুগে যুগে গভীর থেকে গভীর তর ষড়যন্ত্র হয়েছে এবং হতে থাকবে। আমাদের পূর্বসূরীরা জান, মাল, বুকের তাজা খুন ঢেলে ঈমানী চেতনায় বলিয়ান হয়ে রুখে দিয়েছেন এসব অশুভ ষড়যন্ত্র। আমাদের তাই করতে হবে। সকল কিছুর মালিক আল্লাহ। আমরা আমাদের চেষ্টা করে যাব। ইনশাল্লাহ সফলতা ধরা দেবেই।
তার কথা শেষ হতেই কিছুটা যেন অন্ধকার কেটে গেল আসন্ন বিপদের। এবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী- হান্নান ইসমাঈল হাটে হাড়ি ভাংলেন। তিনি যা বললেন তার জন্য প্রস্তুত ছিলনা কেউ।
-এ বছরের মধ্যে তুরস্কের দিকে আঘাত হানবে ইসরাইল ও ইঙ্গ-মার্কিন হামলা। তার আগে জামাল যাফরীর ধোকাবাজিতে পড়ে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি তুরস্ক দু’টি ভাগে ভাগ হয়ে যাবে। সহী ইসলামী শরিয়া যার সংক্ষিপ্ত রূপ-এস আই এস এর একটি দেশীয় শাখার মাধ্যমে শুরু হবে ঈমান ধ্বংসের কার্যক্রম। রূপসী নারীর মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তাদের ফাঁসানো হবে রাষ্ট্রের তথ্য চলে যাবে ইসরাইলে। বিভিন্ন কোম্পানীতে চাকরি নিয়ে এসব গুপ্তচর নারী-পুরুষ প্রবেশ শুরু করেছে আমাদের দেশে।
আমি জানি কি পরিমান চিন্তিত আপনারা আমার কথা শুনে। আপনাদের কপালে ভাজের রেখাগুলো বলে দিচ্ছে কি ধরণের মহা বিপদ ঘনিয়ে আসছে তুরস্কের বুকে। বিপদ যত কঠিনই হোকনা কেন, আমাদের হতাশ হলে চলবেনা। আজকের এই সভায় এবং ভবনের আশে পাশে কোন নারী, অপরিচিত কোন ব্যক্তি, বিদেশী কোন নাগরিকের উপস্থিতি ও আনাগোনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
আপনাদেরাকে শুধু হতাশার কথা নয় কিছু আশার কথাও বলবো। আমাদের বিজ্ঞানীরা এমন এক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উদ্ভাবনের দ্বারপ্রান্তে যার মাধ্যমে আমরা শত্রুর মোকাবেলা ও উল্টো শত্রুকে ঘায়েল করতে পারবো। এই যুগান্তকারী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার গর্বিত অংশীদার আমরাই এবং বিশ্বে এ ধরণের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ফরমূলা আর কারো জানা নেই। অবশ্য এর কৃতিত্ব আমি দিতে চাই বাংলাদেশী তরুণ বিজ্ঞানী-মেহেদী হাসানকে। যিনি গত পাঁচ বছর ধরে আমাদের সাথে কাজ করছেন জাতীয় বিজ্ঞান গবেষণা বোর্ডের প্রধান বিজ্ঞানীর সহকারী হিসেবে।
হান্নান ইসমাঈল এর বক্তব্য শেষ হলে রাষ্টপ্রধান বলেন- পরবর্তী সভায় বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে নতুন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে। সকলকে জাতীয় স্বার্থে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে এবং ধন্যবাদ জানিয়ে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
৪।
জাবেরকে তুরস্কের গোয়েন্দা বিভাগে কাজ দেওয়া হয়েছে। সে এখন ব্যস্ত তার কাজ নিয়ে। জাবেরের বন্ধু জলিল আনসারী ছুটি নিয়ে সে যখন মিশরে যাচ্ছিল স্ত্রীর সাথে দেখা করার জন্য। তখনই তার পিছু নেয় মোসাদের দুজন সদস্য। বিমান বন্দরে পৌঁছার পরই সে বুঝতে পারে তার গাড়িকে ফলো করে আসছে একটি জীপ। তারপর বিমানে উঠার আগ পর্যন্ত সে দেখেছে ইহুদি গোয়েন্দা দু’জন সে কখন কি করছে তা খেয়াল রাখছে তাই বিমানে বসেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে কি করতে হবে তার। কারণ তার ইসরাইলে ফিরা আর সম্ভব নয়।
মিশরে পৌঁছে এক হোটেলের পাবলিক বাথরুমে গিয়ে ফোনে আফিয়াকে সব খুলে বলে এবং তার পরিকল্পনার কথাও জানান দেয়-জলিল আনসারী। দুদিন পর যখন মোসাদের দুই সদস্য দেখলো জলিল আনসারী তার বাসায় পৌঁছেনি তখন তারা বুঝতে উঠতে পারলো না কেন জলিল আনসারী বাসায় আসছে না। এর মধ্যে এই দুই ইসরাইলি সব তথ্য জোগাড় করে নিয়েছে জলিল আনসারীর বাসা, স্ত্রী, বাড়ির লোকসংখ্যা ও আরও প্রয়োনীয় তথ্যাদি।
যখন এক সপ্তাহ কেটে গেল। তখন তারা মোসাদের সদর দপ্তরে যোগাযোগ করে তার কর্তব্য স্থির। আফিয়াকে অপহরণ করা হবে।
তারা ধারে নিয়েছে জলিল আনসারী ফেরারী হেয়েছে। তাই আর বসে না থেকে আজই গভীর রাতে কাজটি শেষ করতে হবে।
ভাড়াটে তিন জন খুনীকে দায়িত্ব দেয়া হল রাস্তা ও গেট পাহাড়া দেওয়ার। কোন কিছু সন্দেহ মূলক হলেই যেন সংকেত দেয়।
রাত দুইটা বাজে। আফিয়ার ঘুম ভেঙ্গে গেল। মনে হচ্ছে বারান্দায় লাফিয়ে কেউ পড়ল। তার প্রতিটা ইন্দ্রীয় বিপদের ঘ্রাণ পেল। সে তৈরী যে কোন পরিস্তিতি মোকাবেলা করার। রুমের দরজা খুলে সামনের করিডোরে এসে দাড়ালো পরনে তখনো রাত পোশাক।
ডিমলাইটের আলোতে সে আড় চোখে দেখতে পেল একটি ছায়া খুব সন্তর্পনে তার দিকে বিড়াল পায়ে এগিয়ে আসছে। ছায়াটি বড় হতে না হতেই আরেকটি ছায়া প্রথম ছায়ার উপড় পড়ল। আফিয়া হাতের মোবাইলে হঠাৎ মেসেজ আসার টোন বেজে উঠল ও আলো জলে উঠল। তাই ছায়া দুটি হঠাৎ থমকে দাড়াল। আফিয়া মেসেজ পড়ছে। পিছন থেকে তাকে জাপটে ধরার আগেই সে করিডোরের রেলিং এর সাথে বাধা মোটা রশি ধরে নীচে ঝুলে পড়ল ।
এক জন সাধারণ গৃহবধুর কাছ থেকে এধরনের চমক মোসাদ সদস্যরা আশা করিনি। অবশ্য তাদের জানার কথা নয় আফিয়া ব্ল্যাক বেল্ট পাওয়া কারাতে মাস্টার। ঘটনার আকস্কিকতায় তাদের একজন আফিয়াকে ধারার জন্য আরেকটি রশিতে ঝুলে পড়ল আর অন্যজন হন্তদন্ত হয়ে সিড়ি দিয়ে নিজের দিকে নামল।
আফিয়া এমন জাদু দেখাল যে মোসাদের সেই সদস্য গলায় ফাঁস নিয়ে রশিতেই ঝুলে রইল। আর নীচে নামা সেই সদস্য সিড়ির নীচে লুকিয়ে থাকা জলিল আনসারীর ছুরির আঘাতে ধরাম করে মেঝেতে পড়ে গেল। আর রাস্তার ভাড়াটে খুনীগুলোকে জলিল আনসারীর বন্ধুরা তিন দিক থেকে এসে পাকড়াও করে চোখ মুখ বেঁধে গাড়িতে করে নিয়ে উধাও হয়ে গেল আর সাথে নিয়ে গেল মৃত দুই ইসরাইলীকে।
আফিয়া স্বামীকে জড়িয়ে ধরে বলল- বাহ খুব সিনেমাটিক হলতো ব্যাপারটা।
জীবনে এখন এমন সিনেমার অনেক শুটিং করতে হবে আমাদের প্রতিউত্তরে বলল-জলিল আনসারী।
বাহিরে তখন অন্ধকার ফিকে হতে শুরু করেছে। মোয়াজ্জিনের সুললিত কন্ঠে আযানের সুমধুর সুর ভেসে আসবে এখনই।
ষড়যন্ত্রের আগুন-১
ছবি-নিজের তোলা।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০১৯ সকাল ১১:৪৮