বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহু দূর................ কথাটার যে বাস্তব ভিত্তি আছে তার প্রমাণ পেলাম ১৯৯৯ সালের প্রথম দিকে শীতের এক সকালে। ঝকঝকে নীলাকাশের নীচে স্কুলের মাঠের শেষ প্রান্তে দাড়িয়ে আছি আমরা ক’জন। সামনে দিগন্ত বিস্তৃত ফসলী মাঠ। রোদ্রের ওমে দেহ মন উষ্ণ হয়ে উঠছে, ক্লাশ শুরু হতে আরও কিছুক্ষণ বাকি। তাই শেষ আড্ডায় যে যার মত করে কথা বলে যাচ্ছে। আস্তে আস্তে সবাই ক্লাশ অভিমুখে চলে গেলেও আমি আর কৃষ্ণ তখনো ঠাঁয় দাড়িয়ে। কৃষ্ণ যেন কিছু একটা বলতে চাচ্ছে অনেকক্ষণ ধরে তারই প্রস্তুতি হিসেবে সে এলোমেলো কিছু কথা বলে যাচ্ছে।
আচ্ছা এই যে হিমেল বাতাস আসছে তা কোথা থেকে আসে ?
আমি বললাম-প্রকৃতি হতে। সে হাসলো। আবার বলল- কে দেয় বাতাস ?
আমিতো অবাক-মানে ? আবারও হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলল- না, না । কছিু না।
বেশিক্ষণ নীরব না থেকে বলল- মানুষের বিশ্বাসের শক্তিটা কিন্তু অনেক বড়। জানো?
হুম। তাতো হবেই। কেউ খুব বিশ্বাস করে কিছু চাইলে সেটা পায়। কথা বলে আমি অভিজ্ঞের মত মুচকি হাসলাম।
এবার সে আসল কথাটা বলল- আমার না খুব পেট ব্যাথা করছে।
কি করবে এখন ? বেশি করে পানি খাও চলে যাবে।
নারে কিছুতেই যাচ্ছে না।
-তাহলে বাড়ি চলে যাও।
না বাড়ি যাব না। আমার বিশ্বস তুমি তিনবার ফুঁ দিলে আমার পেট ব্যাথা ভাল হয়ে যাবে!
কথাটা শুনে আকাশ থেকে পড়লাম। মানে ?
-মানে কিছু না। এটা আমার বিশ্বাস।
আরে রসিকতা করনা। এটা কি করে হয়, আমি তিন বার ফুঁ দিলে পেট ব্যাথা ভাল হয়ে যাবে!
-আমি সত্যি বলছি, ফাজলামী না।
এটা বলার কারণ কি ?
-তুমি অনেক ভাল একজন মানুষ। তোমাকে কোনদিন গালি দিতেও দেখিনি, মিথ্যা বলতেও শুনিনি।
তাই বলে আমি ফুঁ দিলে তুমি ভাল হয়ে যাবে। হা.হা.হা....................।
শেষপর্যন্ত ফুঁ দিয়েছিলাম দোয়া পড়ে। কারণ কারো বিশ্বাস ভঙ্গ হোক সেটা চাইনি।
তারপর কি ঘটেছিল.....................
পরের ঘটানাটা সত্যিই নাটকীয় ছিল। টিফিন পিরডে লজ্জা চেপে তাকে জিজ্ঞেস করলাম তোমার ব্যাথা কি ভাল হয়েছে।
সে হেসে বলল- তুমি ফুঁ দেয়ার কিছুক্ষণ পরেই ভাল হয়ে গেছে। আমি ফুঁ না দিলেও কিছুক্ষণ পর এমনি তা ভাল হয়ে যেত। সে বলল- না আমি সেটা বিশ্বাস করেছি সেটা পেয়েছি।
আমি চরম অবাক হলাম আবার মনে এই প্রত্যয় হলো যে বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদুর.................।
ছবি- নিজের তোলা।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:২৫